পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ বিজিএমইএর
করোনা প্রতিরোধে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তার আগে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিল সংগঠনটি।
শনিবার রাত পৌনে দশটার দিকে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক সাংবাদিকদের মাধ্যমে সদস্য কারখানা মালিকদের বলেন, ‘'সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে সব কারখানার মালিক ভাই ও বোনদের বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’ অবশ্য তার আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি বলেছিলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব কারখানায় রপ্তানি ক্রয়াদেশ আছে এবং যারা পিপিই বানাচ্ছে কেবলমাত্র সেসব কারখানা চালু রাখা যাবে। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রমিকের মার্চ মাসের মজুরি নিয়ে সমস্যা হবে না। কারখানায় কোনো শ্রমিক উপস্থিত না হলে চাকরি হারাবেন না। বিষয়গুলো মেনে চলতে সদস্য কারখানা মালিকদের অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সদস্য কারখানা মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, খুব জরুরি না হলে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের নিজ নিজ অবস্থানে থাকতে অনুরোধ করেছিলাম। তারা কেন বাড়ি চলে গিয়েছিল আমাদের বোধগম্য নয়।’
বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা রোববার (৫এপ্রিল) খোলার কথা ছিল। সে জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করা শ্রমিকেরা শনিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলে ফিরতে থাকেন। সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও শ্রমিকেরা পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাহেন্দ্রসহ ছোটখাটো গাড়িতে করে ফিরতে দেখা গেছে। মাওয়া ঘাটে দেখা গেছে যাত্রী বোঝাই ফেরি। ফলে কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি ভেস্তে যায়। সারা দিন বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় রাতে কারখানা বন্ধের অনুরোধ জানাতে বাধ্য হতো পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
পোশাক কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখার বিষয়ে শুরু থেকেই ধোঁয়াশা ছিল। পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা কারখানা বন্ধের বিষয়ে সরকারের ওপর মহলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তবে ২৫ মার্চ জাতীয় উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। ২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শুরু হয়। সেদিনই পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অবশ্য তার আগের দিনই নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে সদস্যদের অনুরোধ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংগঠন দুইটির অনুরোধে পর অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়। তবে কিছু কারখানা চালু ছিল। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পরে ২৭ মার্চ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে বলা হয়, জরুরি প্রয়োজনে শিল্পকারখানা চালু রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের জারি করা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা কঠোরভাবে পরিপালন করেই কারখানা চালাতে হবে শিল্প মালিকদের। এই বিজ্ঞপ্তির পর বিজিএমইএ নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ডিআইএফইর নির্দেশনা মানতে মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানায়।
গত ১ এপ্রিল দেশের বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পোশাক কারখানা চলতে বাধা নেই। তবে স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। সভায় ৫ এপ্রিল কারখানা খোলার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেদিনই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলে, যেসব কারখানায় ক্রয়াদেশ আছে এবং করোনা প্রতিরোধে জরুরি পণ্য-পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার, ওষুধ ইত্যাদি উৎপাদন কার্যক্রম চলছে সেসব কারখানার বন্ধের বিষয়ে সরকার নির্দেশনা দেয়নি। পরদিন ২ এপ্রিল বিকেএমইএ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ৪ এপ্রিলের পর সদস্য পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার বিধি-নিষেধ থাকবে না। তবে কারখানা খোলার বিষয়ে মালিকদের ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অবশ্য বিজিএমইএ নতুন করে কিছু বলেনি।
কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার বলেছে, বিশেষ অবস্থায় কারখানা খোলা রাখা এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ না নিয়ে সরকার এবং মালিকপক্ষ এক অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এটি কোনোভাবেই দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়।
অন্যদিকে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার শনিবার এক বিবৃতিতে পোশাক কারখানা খোলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পোশাক কারখানা এভাবে খুলে দেওয়ার ফলে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তার সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব শিল্পমালিক ও সরকারকে নিতে হবে।