বেতন-ভাতা দিতে ঋণের তহবিল চায় ডিসিসিআই
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) বৈদেশিক মুদ্রার মজুতকে কাজে লাগিয়ে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। যেখান থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারবে।
ডিসিসিআইয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, ওই তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার হবে ১ শতাংশ। এ তহবিলটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া তারা আরও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়। ডিসিসিআইয়ের প্রস্তাবগুলো হলো, ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাতকে আগামী ১ বছরের জন্য ঋণের সুদ মওকুফ করা, অন্যান্য সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতকেও রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) স্কিমের আওতায় আনা এবং ব্যাংকগুলোতে যাতে তারল্য সংকট দেখা না দেয় সে জন্য আগামী ১ বছরের জন্য ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআরের ন্যূনতম হার কিছুটা শিথিল করা।
ডিসিসিআই বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া ঋণ পরিশোধে শিথিলতা, ইডিএফ তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণের সময়সীমা ও ‘ব্যাক টু ব্যাক’ ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধের সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়।
ঢাকা চেম্বার অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘স্বল্পসুদের এম এসএমই অর্থায়ন সুবিধা’ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানায়। তা ছাড়া অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত রক্ষায় বাণিজ্যিক ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস ও পানির ব্যবহার এবং লাইসেন্স নবায়নের ওপর আগামী ১ বছর পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) প্রত্যাহার করার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিসিসিআই বলেছে, তারা মনে করে বেসরকারি খাতের আর্থিক ব্যয়ভার লাঘবে খাদ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত সামগ্রী, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের ওপর থেকে আগামী ১ বছরের জন্য অগ্রিম কর (এটি) এবং ভ্যাট মওকুফ করতে পারে। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যক্তিশ্রেণির কর আদায়ে ও করপোরেট কর হারে কিছুটা ছাড় দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে পারে।
ঢাকা চেম্বার বলেছে, করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব থেকে জনগণ ও অর্থনীতিকে মুক্ত করতে সরকারকে আন্তর্জাতিক বন্ধু রাষ্ট্র ও অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানায়। অর্থনৈতিক মন্দা যাতে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং বিশ্ব ব্যাংকের নিকট বিশেষ জরুরি অর্থায়ন সুবিধার জন্য আবেদন জানাতে পারে। পাশাপাশি সকল রাষ্ট্রীয় ঋণ পরিশোধের কিস্তি আগামী ১ বছরের জন্য স্থগিত করতে সরকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রস্তাব দিতে পারে।
ডিসিসিআই আরও বলেছে, আর্থসামাজিক ভারসাম্য রক্ষার্থে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি করে এর মধ্যে অসহায়, প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ, শ্রমজীবী, চাকরি হারানো মানুষ, অতি ক্ষুদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানায়। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থাপনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া ও জনসাধারণে কাছে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানানো হয় ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে। ডিসিসিআই মনে করে, সুপারিশগুলো বিবেচনা করা হলে সরকারি, বেসরকারি উভয় খাত ও অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি এই বৈশ্বিক ক্রান্তিকাল মোকাবিলা করা যাবে।