বিমা ছাড়া যেতে পারবে না বিদেশগামী কর্মীরা
প্রবাসী কর্মী বিমা চালু করতে জীবন বীমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করল ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এর মধ্য দিয়ে বিদেশগামীদের জন্য বাধ্যতামূলক বিমা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বিমার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। জানুয়ারি থেকে বিমা ছাড়া বিদেশে যেতে পারবে না কর্মীরা।
আজ বুধবার বিকেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই সংস্থার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিমার মাধ্যমে প্রবাসীদের কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারাটাই স্বস্তির। তাঁর আশা, খুব শিগগিরই বিমাসুবিধা দুই লাখ থেকে আরও বাড়ানোর দাবি তুলবেন প্রবাসীরা। সে ক্ষেত্রে প্রবাসীরাই নিজ থেকেই বাড়তি প্রিমিয়াম দেবেন।
আর্থিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, বিমা চালু হওয়ায় এখন থেকে গর্ব করে বলা যাবে, অন্তত অরক্ষিত অবস্থায় দেশের কর্মীদের বিদেশে ঠেলে দেওয়া হয়নি। আর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, বছরে গড়ে সাত লাখ কর্মী বিদেশে যান। তাদের বিমা সুবিধার জন্য সরকারকে ৩৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিমা দাবি পূরণে কোনো ধরনের জটিলতা থাকবে না বলে জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, অনলাইন প্রক্রিয়ায় বিমা দাবি ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে।এটি নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার কিছু নেই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জীবন বিমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান শেলীনা আফরোজা, বেসরকারি খাতের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। দুই সংস্থার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস ও জীবন বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
জানা গেছে, দুই বছরের জন্য মাত্র ৪৯০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে দুই লাখ টাকার বিমা পলিসি করার সুবিধা পাবেন বিদেশগামী কর্মীরা। আর এক হাজার ৯৭৫ টাকার প্রিমিয়াম দিয়ে পাবেন পাঁচ লাখ টাকার বীমা সুবিধা। যদিও দুটির প্রকৃত বীমা প্রিমিয়াম হলো ৯৯০ ও দুই হাজার ৪৭৫ টাকা। দুই ক্ষেত্রেই কর্মীর পক্ষ হয়ে বাড়তি ৫০০ টাকা প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
গত ৫ ডিসেম্বর জরুরি বোর্ড সভা ডেকে এ অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। গত ২৫ নভেম্বর প্রবাসী বিমা নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে প্রবাসী মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সব বিদেশগামী কর্মীর জন্য বিমা বাধ্যতামূলক। কর্মীরা দুটি বিমা পরিকল্পের যে কোনো একটি বেছে নিতে পারবে।
প্রবাসী মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী এক বছরের জন্য এ বীমা বাস্তবায়নের কাজটি করবে জীবন বীমা করপোরেশন। পরে অন্য বীমা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হতে পারে। এমনকি যেসব প্রবাসী বর্তমানে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন, তাদেরও ধীরে ধীরে বীমা সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র বলছে, বিদেশগামী কর্মীকে ছাড়পত্রের জন্য প্রদেয় অন্যান্য ফির সঙ্গে প্রযোজ্য বীমা প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে।
গত ১৪ অক্টোবর ‘প্রবাসী কর্মী বিমা নীতিমালা’ নামে একটি নীতিমালা জারি করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নীতিমালাটি করা হয়েছে ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সীদের জন্য। বিভিন্ন কোম্পানির বিমায় বয়সভেদে প্রিমিয়ামের হার কমবেশি হয়ে থাকলেও প্রবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে একই প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে। দুটি বীমা পরিকল্পের মেয়াদ একই, এটি দুই বছরের জন্য। তবে বিদেশে অবস্থানকালে নিজ অর্থায়নে আরও দুই বছরের জন্য পলিসি নবায়ন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।