চা উৎপাদনে রেকর্ডের হাতছানি
বাংলাদেশ চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পথে রয়েছে। ইতিমধ্যে যে পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়েছে, তাতে নতুন রেকর্ডের ইঙ্গিত মিলছে। যেমন গত আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৫ কোটি ২৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৪ কোটি ২০ লাখ কেজির চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া দেশে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের বছর ২০১৬ সালের একই সময় পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ কেজি। ওই বছরে মোট চা উৎপাদিত হয় ৮ কোটি ৫৫ লাখ কেজি।
আবহাওয়া অনুকূলে এবং উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বর মাসে মৌসুম শেষে চা উৎপাদনের পরিমাণ ৯ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক কে এম রফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এখন আবহাওয়া চা উৎপাদনের অনুকূলে রয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। এর ফলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চা-পাতা সংগ্রহ করা যাবে। তখন উৎপাদন ৯ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন চা-বাগানের মালিক-ব্যবস্থাপক, ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, মৌসুমের শুরু থেকে চা-চাষের উপযোগী বৃষ্টিপাত হওয়াসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নেওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার দেশে চা উৎপাদন বাড়ছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, শুধু উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, এ বছর চায়ের গুণগত মানও ভালো হচ্ছে।
কে এম রফিকুল হক জানান, চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে এগিয়ে। গত জুলাইয়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে চা উৎপাদন বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই হার প্রতিবেশী ভারতে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং আরেক বড় চা উৎপাদনকারী দেশ শ্রীলঙ্কায় মাত্র দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ ছাড়া কেনিয়ার মতো চা উৎপাদনকারী দেশে তো ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমেছে। এতে বাংলাদেশের সামনে আশার সঞ্চার হয়েছে। তিনি বলেন, উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এ বছর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ চা রপ্তানি করা যাবে।
কে এম রফিকুল হক আরও বলেন, এবার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিটি বাগানের পরিত্যক্ত জমিকে চা-চাষের আওতায় আনা হয়েছে, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে ক্ষুদ্রায়তনে চা-চাষ বেড়েছে, চা গবেষণা কেন্দ্র চায়ের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে সঠিক পরামর্শ দিয়েছে। এতে চা উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সিলেটের চা ব্যবসায়ী এম আর খান এবং কেরামত নগর ও নন্দ রানী চা-বাগানের মালিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একই সুরে বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে চায়ের উপযোগী বৃষ্টিপাত হয়েছে, সূর্যের আলোও পড়েছে প্রয়োজনীয় মাত্রায়। সব মিলিয়ে আবহাওয়া ছিল বেশ অনুকূলে। এর ওপর বাংলাদেশ চা বোর্ডের বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে।
বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চল শাখার চেয়ারম্যান জি এম শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূল না থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে আগের দুই বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, বরং উৎপাদন কমেছিল। ওই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা-বোর্ডের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে চলতি বছরে উৎপাদন বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার প্রথম আলোকে জানান, এখন শ্রীমঙ্গলেই সরাসরি নিলাম হওয়ায় চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে না। আর গুণগত মান ঠিক রেখে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি চায়ের স্বর্ণযুগ আসবে।
এদিকে উৎপাদন ভালো হওয়ায় চা-শ্রমিকেরা ভীষণ খুশি। এতে অতিরিক্ত আয় হচ্ছে বলে তাঁরা জানান।