৪ ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়ল ৮ টাকা
পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল ভারত। আর এ খবর বাংলাদেশে আসতেই পাইকারি বাজার অনেকটা বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ল। চার ঘণ্টায় দাম বাড়ল কেজিতে প্রায় ৮ টাকা।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার রপ্তানি নীতি সংশোধন করে পেঁয়াজকে রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরটি গতকাল বেলা তিনটার দিকে ভোমরা ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আসে। তখনই বাংলাদেশের পথে থাকা সব ট্রাক আটকে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগেনি।
যেমন, কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. ফয়েজ গতকাল দুপুরের পরও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৭২ টাকায়। সন্ধ্যায় তাঁর দোকানে দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়। ফয়েজ বলেন, দুপুরের পর তিনি যেসব পেঁয়াজ কিনেছেন, তার দাম কেজিপ্রতি ৭৫ টাকার বেশি পড়েছে।
এর আগে ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। এক দিন পর বাংলাদেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বাড়ে প্রায় ১৫ টাকা। এরপর আরও কয়েক দফা দাম বেড়ে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল।
বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার অনেকটা ভারতের দামের ওপর নির্ভরশীল। ভারতীয় পত্রিকা ইন্ডিয়া টুডে গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী দিল্লিতে ৭০-৮০ রুপি (৮৪ থেকে ৯৬ টাকা) কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের ধারণা, প্রতিবছর চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। বাকিটা আমদানি হয়। আমদানির প্রায় পুরোটার উৎস ভারত। অবশ্য এখন আমদানিকারকেরা মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, একই বছর আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন।
রাতের পাইকারি বাজার
কারওয়ান বাজারের সবজির আড়তের পাশেই পেঁয়াজের আড়ত। রাতে সেখানে গিয়ে দেখা গেল কয়েকজন বিক্রেতার জটলা। তাঁরা কোন কোন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনতে পারেননি, তা নিয়ে আলোচনা করছেন। তাঁদের একজন আবদুল মোমিন। জানতে চাইলে বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। যাঁদের কাছে আছে, তাঁরা বলছেন এখন দেওয়া যাবে না। অনেকে বেচাকেনা বাদ দিয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করছেন।
কারওয়ান বাজারে এই ব্যবসায়ীরা আমদানিকারক ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে আড়তে বসেই বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে কমপক্ষে পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারেন খুচরা ক্রেতারা। দামে কিছুটা কম পড়ে।
আবদুল মোমিনের দোকানের কিছু দূরে আবদুল মালেকের দোকান। সেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ। জানতে চাইলাম দর কত? আবদুল মালেক বলেন, বেচাকেনা বন্ধ। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য এলেন। আবদুল মালেক আর বিক্রি বন্ধ বললেন না, দাম চাইলেন কেজিপ্রতি ৮০ টাকা।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারেও একই পরিস্থিতি গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় শ্যামবাজারে একেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজের একেক দর চেয়েছেন। ফলে আসল দাম কত, সেটা বলা সম্ভব নয়। আজ সোমবার দাম বোঝা যাবে।
আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, বেচাকেনা কম হয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে আসা তাঁর একটি পেঁয়াজের চালান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বড় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি।
শ্যামবাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আমদানিকারক বলেন, ভারত থেকে তাঁর ৮৫ টন পেঁয়াজের একটি চালান বাংলাদেশে আসার পথে ছিল। হঠাৎ রপ্তানি বন্ধের কারণে সেটি আটকে যায়।
দুই বন্দরে বেচাকেনা হয়নি
পেঁয়াজ আমদানি বেশি হয় সাতক্ষীরার ভোমরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। দুই বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল সেখানে কেনাবেচা হয়নি।
ভোমরায় বেলা তিনটা পর্যন্ত ১১ ট্রাক (প্রতিটিতে ২০ টন) পেঁয়াজ আমদানি হয় জানিয়ে আমদানিকারক দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, বিকেল পাঁচটার পর সাধারণত পেঁয়াজ বেচাকেনা শুরু হয়। গতকাল বেচাকেনা হয়নি। সোনামসজিদের আমদানিকারক মেজবাহ উল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেননি।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে সংসারের ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবর শুনে সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়েছিলেন মো. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজারেই আমার অফিস। ভাবলাম, দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে। ১০ কেজি নিয়ে যাই। এসে দেখি দাম ইতিমধ্যেই বেড়ে গেছে।’
আরো পড়ুন: