আমরা একই কথা বলতে বলতে ক্লান্ত

হোসেন খালেদ
হোসেন খালেদ
>

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ বর্তমানে আনোয়ার গ্রুপের পাট, গাড়ি ও আবাসন ব্যবসা সামলান। পাশাপাশি তিনি দ্য সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক এবার এক বছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্য আগের চেয়ে কমিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দশমিক ২ এবং জুন পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। আগেরবারের লক্ষ্য ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ।

হোসেন খালেদ: জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশের মতো। ফলে লক্ষ্য যেটা ঠিক করা হয়েছে, সেটা আসল প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি।

প্রথম আলো: আমি মুদ্রানীতি নিয়ে আপনার একটা মূল্যায়ন জানতে চাচ্ছিলাম।

হোসেন খালেদ: বিগত অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের লক্ষ্যের সঙ্গে হয়তো মিল আছে। কিন্তু লক্ষ্য কমিয়ে ধরার ফলে বেসরকারি খাতের দিকে একটি নেতিবাচক বার্তা যাবে। সবাই মনে করবে, এ বছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিই কম হবে। সরকারি ঋণ অনেক বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা মনে করতে পারেন, অর্থনীতি কি তাহলে সরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়?

সামগ্রিকভাবে ব্যবসার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমরা একটি উচ্চ কর ‘রেজিমের’ দিকে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে পণ্য এনে ব্যবসা করেন, তাঁরা মোটেও ভালো নেই। রপ্তানি খাতে উৎসে কর ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। পোশাক খাতে ছিল শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। যেটা এ অর্থবছরে ১ শতাংশ হয়েছে। আমরা অভ্যন্তরীণ খাতনির্ভর ব্যবসায়ীরা কী দোষ করেছি যে আমাদের ক্ষেত্রে উৎসে কর ধরা হলো ৫ শতাংশ। এতে কেউ যদি মোট লাভ ১০ শতাংশ করেন, তার ওপর কর দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। নিট লাভের হিসাবে কর কিন্তু ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

প্রথম আলো: তাহলে কি আপনি মনে করছেন, সরকার রাজস্ব বেশি পাবে না আশঙ্কা করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করছে? গেল অর্থবছর কিন্তু সংশোধিত লক্ষ্যের তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। 

হোসেন খালেদ: আসলে ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগও তো নেই। অত টাকা নেই। ব্যাংকিং খাত বেসরকারি খাতে যে প্রয়োজনীয় ঋণ দেবে, সেটাও করতে পারছে না। বাংলাদেশে ব্যাংক ছাড়া কিন্তু ব্যবসায়ীদের আর তেমন কোনো উপায় নেই। আমরা অনেক দিন ধরে বন্ড বাজারকে
উন্নত ও কার্যকর করার কথা বলছি। শেয়ারবাজারের কথা যদি বলি, সেটার প্রতি তো আমাদের মনোভাব সৎবোনের মতো। 

প্রথম আলো: আপনি একদিকে ব্যবসায়ী, অন্যদিকে ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। কম সুদে ঋণ পাওয়ার প্রত্যাশা কি পূরণ হবে আগামী এক বছরে?

হোসেন খালেদ: যত দিন বন্ড বাজার শক্তিশালী না হবে, তত দিন প্রতিযোগিতা হবে না, ঋণের সুদ প্রত্যাশামতো কমবে না। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, যখন তারল্য কম থাকবে, তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উচ্চ লাভের খাতে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত, ক্রেডিট কার্ড, ব্যক্তি ঋণ ইত্যাদি খাতে তাদের লাভ বেশি হয়। করপোরেটকে ঋণ দিলে লাভ কম। ফলে করপোরেটকে ঋণ না দিয়ে অন্য খাতে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা আসতেই পারে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে সুদের হার অনেক বেশি। কেন আপনার টাকা আপনি ব্যাংকে রাখবেন? 

প্রথম আলো: আমি সে প্রসঙ্গে আসছিলাম। তারল্যসংকটের সমাধান কী? আপনাদের পরামর্শ কী?

হোসেন খালেদ: একই কথা বলতে বলতে আমরা এখন ক্লান্ত। বাস্তবায়ন তো হচ্ছে না। আসলে বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বোঝা দরকার, আলোচনা দরকার। আলোচনা হয় কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। আমার মনে হয়, একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা দরকার, যারা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়নে যাবে।

প্রথম আলো: আপনাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এখন কত শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারছেন?

হোসেন খালেদ: সাড়ে ১৩ শতাংশের মতো। এটা ৯ শতাংশে নেমেছিল।

গত বুধবার চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছিল নানা আলোচনা। শেয়ারবাজারে মুদ্রানীতির প্রভাব এবং সেটি ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার যৌক্তিকতা কতটুকু—এসব নিয়ে কথা বলেছেন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন