বাণিজ্যমেলায় একদিন
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জমে উঠেছে বাণিজ্যমেলা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মেলার গেটের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। সন্ধ্যার দিকেই মেলায় দর্শণার্থীদের ভিড় বাড়ে। টিকিট কাটার অপেক্ষায় থাকে অনেক মানুষ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মাঠের ইজারাদার মীর শহিদুল বলেন, গত বছর একদিনে সর্বোচ্চ এক লাখ ৭৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় ঢোকে। এবার সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে।
সন্ধ্যায় মেলায় ঢুকে পা ফেলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ল। মেলার কোথাও বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। দর্শনার্থীদের ঢলে আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর অঞ্চলের সব রাস্তায় তীব্র যানজট ছিল। অনেকে যানজট ঠেলে মেলার সামনে আসতে পারলেও পার্কিংয়ে গাড়ির জায়গা হয়নি।
পুরান ঢাকা থেকে শরীফুল ইসলাম তাঁর পরিবারসহ মোটরসাইকেলে করে মেলায় আসেন। তবে মোটরসাইকেল পার্কিং করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। তিনি বলেন, দয়াগঞ্জ থেকে কারওয়ানবাজারে আসতে ১৫ মিনিটের মতো লেগেছে। আর বাকি রাস্তাটুকু আসতে লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। যানজট ঠেলে এসেও মেলায় ঢুকতে পারছি না। কারণ গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়েই ফিরে যাচ্ছি।
মিরপুর থেকে আসা সুমন মিয়া বলেন, মেলার টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি বিকেল তিনটা থেকে। টিকিট পেতে প্রায় আধাঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। মেলায় ঢুকতে চারটা বেজে গেছে। মেলায় ঢুকে দেখি বেশির ভাগ এলাকা দর্শনার্থীতে ভরে গেছে। একজন আর একজনের সঙ্গে ঠেলাঠেলি ছাড়া মেলায় হাঁটা যাচ্ছে না।
কুষ্টিয়া হস্তশিল্প দোকানের ম্যানেজার মো. মনির হোসেনকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের এখানে বিক্রির পরিমাণ কেমন? উত্তরে জানালেন, আমাদের বিক্রির পরিমাণ ভালো। এখানে বিছানার চাদর, কুশন কভার, তোয়ালে, বালিশের কভার আছে।
দিল্লি দরবার দোকানের কর্মী উজ্জ্বল বলেন, তাঁদের দোকানের বিক্রি এখনও জমে উঠেনি।
চায়না স্টোরের পারভেজ বলেন, তাঁদের বিক্রির পরিমাণ ভাল। তাঁদের দোকানে খাবারদাবারের সামগ্রী রয়েছে।
ড্রেস লাইন বিডি দোকানে বিভিন্ন সালোয়ার-কামিজ রয়েছে। সেগুলো ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করা হয়। জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা কেন ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করছেন? তাঁরা বলেন, আমাদের মূল কারণ হচ্ছে প্রচার করা।
মেলায় আকর্ষণীয় হলো অ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার দোকান। সেখানে হরেক জিনিসপত্র যেমন: ওয়াডড্রপ, বুকশেলফ, ফুলদানি, টেবিল ইত্যাদি আছে। বিশেষ করে ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিকস, সিরামিক ও গৃহস্থালি পণ্যের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোয় বেচা কেনা হচ্ছে বেশি। অনেকেই আবার মেলায় আসছেন বিভিন্ন কোম্পানির নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে। কেউ আসছেন, বিশেষ মূল্য ছাড়ে কেনাকাটা করতে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি তৈরি পোশাক, ভোগ্যপণ্য, ফার্নিচার, শৌখিন পণ্যের প্রায় সব স্টল-প্যাভিলিয়নেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রিক পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে ওয়ালটন, মিনিস্টার-মাইওয়ান, যমুনা ইলেকট্রনিকস, শার্প, ইত্যাদি।
এবারই প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলার প্রবেশ টিকিট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন আয়োজকেরা। এ জন্য দর্শণার্থীদের প্রতিটি টিকিটের জন্য নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত ২ টাকা দিতে হবে। মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে মেলার প্রবেশ টিকিট কেনা যাবে।
এবারের বাণিজ্য মেলায় অলটাইমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্যাকেজ ‘অলটাইম জাম্বু’। সাত ধরনের আইটেম নিয়ে তৈরি এই প্যাকেজের মধ্যে থাকা পণ্যের আসল দাম ৭২০ টাকা। তবে মেলা থেকে কিনতে ক্রেতাদের খরচ হবে ৫০০ টাকা। এ বছর মেলায় ঘুরতে আসা দর্শণার্থীদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখছে কর্তৃপক্ষ।
(নাজিয়া হোসেন: প্রথম আলোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক)