ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জোগানের উপায় কী?
>স্বপ্ন নিয়ের গত সংখ্যায় উদ্যোগ পাতায় আমরা ব্যবসার পুঁজি সংগ্রহের বেশ কিছু উপায়ের কথা বলেছিলাম। অনেকেই ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল’ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজ তাই এ সম্পর্কে আরও কিছু জেনে নেওয়া যাক।
আমাদের দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখনো ব্যবসায় ঋণের জন্য আমাদের মূল ভরসার জায়গা হলো ব্যাংক। কিন্তু মুশকিল হলো, ব্যাংক অনেক সময় নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে ঋণ দিতে রাজি হয় না। এ ক্ষেত্রে একটি বিকল্প হতে পারে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ একটি নতুন ব্যবসায়িক ভাবনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী থাকে। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সুবিধা সম্পর্কে জানা থাকলেও আমরা অনেকেই আবেদনের প্রক্রিয়া জানি না। তহবিল পেতে হলে আমাদের কী কী করণীয়? এ সম্পর্কে জানা থাকলে একজন উদ্যোক্তা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন। আজ বাংলাদেশের দুইটি ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট প্রতিষ্ঠানের আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলব।
বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড
এখানে পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হয় ‘বিনিয়োগ দল’–এর মাধ্যমে। দলটির তদারকির দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর। তা ছাড়া বিনিয়োগ কমিটি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা তহবিলের জন্য আবেদন করা প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করে অনুমোদন করেন।
এ ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটি এ রকম:
● উদ্যোক্তার সঙ্গে কোম্পানির যোগাযোগ হয় বিনিয়োগ দলের (ইনভেস্টমেন্ট টিম) মাধ্যমে।
● প্রস্তাবনা এবং অর্থনৈতিক নথি বিশ্লেষণ
● ব্যবসার জায়গা পরিদর্শন
● বাজারের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ
এই কাজগুলো করার পর যদি প্রতিষ্ঠান উদ্যোগটিকে অর্থায়নের যোগ্য মনে করে, তাহলে উদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
পরের ধাপগুলো হলো:
● আলাপ আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলে বিনিয়োগ দল প্রস্তাবনাটিকে বিনিয়োগ কমিটির কাছে পাঠায়।
● বিনিয়োগ কমিটি প্রস্তাবনাটিকে একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত অনুমোদন করতে পারে। এরপর প্রয়োজন মনে করলে কমিটি প্রস্তাবনাটি বোর্ড অব ডিরেক্টর বা পরিচালনা পরিষদের কাছে পাঠায়।
● অর্থায়নের ক্ষেত্রে এই পরিচালনা পরিষদ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সবদিক বিবেচনায় তারা চাইলে প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করতে পারে অথবা ফিরিয়েও দিতে পারে।
পরিচালনা পরিষদ থেকে প্রস্তাবনা গৃহীত হলে কিছু আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর চুক্তি সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড
দেশের উ দ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। এখান থেকে কোনো উদ্যোক্তা যদি ব্যবসার জন্য তহবিল সংগ্রহের আবেদন করতে চান, তাহলে প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘গেট ফান্ড’ অপশনে গেলেই প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন প্রয়োজনীয় তহবিলের পরিমাণ, ব্যবসার ধরন ইত্যাদি লিখে জমা দিতে পারবেন।
জানার বিষয় হলো, তহবিল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়।
● একটি একাগ্র ও অনুপ্রাণিত দল
● ভালো বিজনেস মডেল
● দ্রুত ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা
● চলমান কোনো সমস্যার একটি সৃজনশীল সমাধান, যার একটি সামাজিক প্রভাব থাকবে
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির শর্তসমূহ:
● পরিমাণ: ২৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি
● সময়: ৫ বছর
● ‘এক্সপেক্টেড ইন্টার্নাল রেট অব রিটার্ন’ ন্যূনতম ২৫%
● শেয়ার হোল্ডিং: সর্বনিম্ন ১০% থেকে সর্বোচ্চ ৪৯%
প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট কিছু খাতে তহবিল সরবরাহের জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী:
● আইটি ও আইটিইএস (ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবলড সার্ভিস)
● ফাইনটেক (ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি বা অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি), এএল ও মেশিন লার্নিং
● অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
● ব্লক চেইন, বিগ ডেটা ও ডেটা অ্যানালাইসিস
● কৃষিপ্রযুক্তি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ
● শিক্ষা ও স্বাস্থ্য