লকডাউনে পারিবারিক বাজেট
করোনাভাইরাস আতঙ্ক এখন বিশ্বব্যাপী। লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে ভাইরাস সংক্রমিত মানুষের পরিমাণ এবং কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের প্রাণ। বিশ্বের প্রতিটি দেশই হিমশিম খাচ্ছে ভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনতে। যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভাইরাস আবিষ্কৃত হয়নি, সেহেতু সংক্রমণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখাই একমাত্র উপায়।
করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে খুব সহজেই সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে অন্য কারও শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসটির উপসর্গ সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ না পাওয়ার কারণে সংক্রমিত ব্যক্তি বুঝতে পারে না তার কি সংক্রমণ হয়েছে নাকি হয়নি। ফলে সে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করে এবং তার থেকে ভাইরাস বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয় এবং অন্যরা সংক্রমিত হয়। দ্রুত ভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ বৃদ্ধির এটা একটা অন্যতম কারণ।
যে কারণে বিশেষজ্ঞরা সবাইকে দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে অনুরোধ জানান। ফলে বিভিন্ন দেশ মানুষের নির্বিঘ্ন চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বহু দেশ আংশিক এবং অনেক দেশ পরিপূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারত, চীন কিংবা ইতালির মতো আমাদের দেশে এখনো সম্পূর্ণ লকডাউন করেনি। কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হয়তো পরিপূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্তে যেতেও পারে। সে জন্য আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা একান্ত কর্তব্য। পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই লেখা, যাতে সবাই তার পরিবারের বাজেট পরিকল্পনা ভালোভাবে করতে পারে। সঠিক পূর্বপ্রস্তুতি ও উপযুক্ত পরিকল্পনাই পারে লকডাউনে থাকা অবস্থায় পড়া অসুবিধা থেকে দূরে রাখতে।
লকডাউনে বাজেট প্ল্যান কীভাবে করবেন, তা দুটি ঘটনাবিন্যাসের মাধ্যমে বর্ণনা করা হলো।
ঘটনাবিন্যাস এক
যদি সময় পাওয়া যায়
সরকার যদি লকডাউনের আগে এক দিন বা দুই দিন সময় দিয়ে থাকে, তাহলে অনেক ভালো। এ অবস্থায় মানুষ কেনাকাটা, পরিকল্পনা ও সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময় পাবে। লকডাউনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত থাকা। ধরুন সরকার যদি তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দেয়, আপনি অন্তত চার সপ্তাহের জন্য বাজেট করে কেনাকাটা করবেন। বাজেট এমনভাবে হতে হবে, যেন আপনি ও আপনার পরিবার লকডাউনের সময় খাদ্যসংকটে না পড়েন। তাই বলে অতিরিক্ত কেনাকাটা করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, ওই মুহূর্তে সবাইকেই যাঁর যাঁর খাদ্য মজুতের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। আপনি ও অন্যরাও যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাজার করে নেন, তাহলে অনেকের জন্য খাদ্যসংকট দেখা দেবে। বাজেট এখানে এ জন্যই দরকার। বাসায় কী পরিমাণ খাদ্য বর্তমানে আছে, তা আগে হিসাব করে তারপর কী দরকার, তা–ই কেবল কিনতে হবে। খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়জনীয় ওষুধ, ফার্স্ট অ্যাইড সামগ্রী, মোবাইলে পর্যাপ্ত ক্রেডিট আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে।
সব কেনাকাটা হয়ে গেলে ঘটনাবিন্যাস দুই অনুযায়ী লকডাউন পিরিয়ড বাজেট করে নিতে হবে।
ঘটনাবিন্যাস দুই
যদি সময় পাওয়া না যায়
এমন হতে পারে, সরকার হঠাৎ লকডাউন করে দিয়েছে কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই। সে ক্ষেত্রে অনেকের পূর্বপ্রস্তুতি নাও থাকতে পারে। এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বটে, কিন্তু ঘাবড়ে না গিয়ে পরিকল্পনাটা একটু ভালোভাবে করে নিতে হবে। ঘটনাবিন্যাস এক–এ ছিল কী নেই, তার জন্য কেনাকাটা বা জোগাড় করা, এখানে হবে যা আছে, তা দিয়েই কীভাবে পুরো লকডাউন পিরিয়ড চালিয়ে নেওয়া যায়, তার বাজেট করা।
প্রথমেই হিসাব করতে হবে লকডাউন কত দিনের। আগের মতোই যদি তিন সপ্তাহ ঘোষণা দিয়ে থাকে, তাহলে হিসাব করতে হবে চার সপ্তাহ। কারণ, কোনো কারণে লকডাউনের সময় বাড়তেও পারে অথবা লকডাউন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নাও পাওয়া যেতে পারে। এরপর দেখতে হবে কী পরিমাণ খাদ্য বর্তমান আছে, সব এক জায়গায় করতে হবে। মোট কত বেলা হতে পারে লকডাউন সময়ে, তার হিসাব করে খাবারগুলোকে প্রতি বেলা অনুযায়ী বিন্যাস করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনাকে পুরো লকডাউনের সময়ব্যাপী খাবার রাখতে হবে এবং এটা আপনাকে করতে হবে খুব সতর্কতার সঙ্গে। যেমন পচনশীল খাদ্যগুলো আগে এবং অপচনশীল বা হিমায়িত খাদ্য পরে শেষ করতে হবে। তা না হলে পিরিয়ড শেষে খাদ্যসংকটে পড়তে হতে পারে।
প্রথম দিন বাজেট যেভাবে করবেন, সেভাবেই খাদ্যাভ্যাস করে নিতে হবে এবং তা করতে হবে কঠোরভাবে। বাজেট না করলে বা বাজেট অনুযায়ী না চললে দেখা যাবে যে আপনার অজান্তেই প্রথম দিকেই বেশি খাদ্য শেষ হয়ে গেছে, যা শেষের দিনগুলোয় ঘাটতি তৈরি করবে। মনে রাখতে হবে, লকডাউনে সবারই একই অবস্থা, কেউ হয়তো চাইলেও আপনাকে সাহায্যের জন্য আসতে পারবে না।
শেষ কথা হলো, সরকার যে অবস্থাতেই লকডাউন করুক না কেন, আমাদের এখনই পূর্বপ্রস্তুতি এবং মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে না হয়। বিশ্বব্যাপী যেহেতু করোনাভাইরাসের বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী সুতরাং আমাদের এ বিষয়কে গুরুত্বসহকারে না নেওয়ার কোনো অবকাশই নেই।
নিজে সাবধানে থাকুন, অন্যকে নিরাপদ রাখুন, দূরত্ব বজায় রেখে চলুন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নভাবে চলাচল করুন। সর্বাগ্রে সবার সুস্থতা কামনা করি।