৪৬তম বিসিএসে আবেদন করতে যে বার্তা দিল পিএসসি
৪৬তম বিসিএসের আবেদন শুরু হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, যথেষ্ট সময় নিয়ে এবং ঠান্ডা মাথায় এই আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এতে কোনো ভুল তথ্য থাকলে সেটির দায় পিএসসি নেবে না। মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাঁরা বিসিএসের আবেদন ফরম পূরণ করবেন, তাঁদের পরিণাম ভালো হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিসিএসের আবেদনে দুই ধরনের ব্যক্তি ভুল তথ্য দেন। একটি দল আছে, যারা ইচ্ছাকৃত মিথ্যা তথ্য দেয়, আরেকটি দল আছে অনিচ্ছাকৃত ভুল করে। দুই ধরনের প্রার্থীদের সতর্ক করে পিএসসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ভুল বা মিথ্যা তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। পিএসসি এর দায় নেবে না। কেউ ভুল তথ্য দিয়ে পরে সংশোধনের আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হবে না। এ জন্য শুরুতেই ধীরে, সময় নিয়ে, ঠান্ডা মাথায় প্রার্থীদের আবেদন পূরণ করতে হবে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে পরীক্ষার আগে–পরে বা চাকরিরত অবস্থায়ও আবেদন বা নিয়োগ বাতিল হবে। এটি পিএসসির আইনেও আছে। এই আইনের বিষয়ে সম্প্রতি পিএসসি পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন, পররাষ্ট্র, শিক্ষাসহ চারজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল। এটি একধরনের বার্তা। মিথ্যা বা ভুল তথ্যের প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা।
এদিকে ১০ ডিসেম্বর থেকে ৪৬তম বিসিএসের আবেদন শুরুর পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৪০০ আবেদন জমা পড়েছে। এই বিসিএসে যাতে আবেদনকারীরা নির্ভুলভাবে আবেদন করেন, সে জন্য প্রার্থীদের প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে পূরণের প্রতি জোর দিয়েছে পিএসসি। জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সঠিকভাবে আবেদন করা একধরনের যোগ্যতা। এতে যেমন ওই প্রার্থী নিশ্চিত থাকবেন, তেমনি পিএসসিকেও কোনো অকারণ বেগ পোহাতে হয় না। প্রার্থীদের সততার সঙ্গে সময় নিয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে বিসিএসের আবেদন ফরম পূরণের প্রতি জোর দেন চেয়ারম্যান।
৪৬তম বিসিএসের ৩ হাজার ১৪০ পদের আবেদন অনলাইনে করা যাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবেদন শেষে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মার্চে অনুষ্ঠিত হতে পারে। গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
আবেদনের জন্য প্রার্থীর বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। যাঁদের জন্মতারিখ ১৯৯৩ সালের ২ নভেম্বর এবং ২০০২ সালের ২ নভেম্বরের মধ্যে, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী ও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর।
আগ্রহী যোগ্য প্রার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রার্থীরা টেলিটকের ওয়েবসাইট বা পিএসসির ওয়েবসাইটের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম (বিপিএসসি ফরম-১) পূরণ এবং নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। ফি জমা দেওয়ার পর অ্যাপ্লিকেন্টস কপিতে কোনো ভুল তথ্য দেওয়া হলে সংশোধনের সুযোগ থাকবে না। কাজেই ফি জমাদানের আগে প্রিভিউ দেখে নিশ্চিত হয়ে ফি জমা দিতে হবে।
ওয়েবসাইটে গেলে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩-এর বিপিএসসি ফরম-১ বিজ্ঞপ্তি, আবেদনপত্র পূরণের বিস্তারিত নির্দেশনা এবং চাকরির অপশনের ভিত্তিতে প্রণীত Application Form for General Cadres, Technical/ Professional Cadres, General and Technical/ Professional Cadres (Both Cadre)-এর আবেদনপত্রের Format-এর বাটন পাওয়া যাবে। কাঙ্ক্ষিত ক্যাটাগরির আবেদনপত্রে ক্লিক করলে সংশ্লিষ্ট বিপিএসসি ফরম-১ দৃশ্যমান হবে।
৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২৩-এর বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে কোনো প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী ফি জমা দিয়ে চূড়ান্তভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আবেদনপত্র দাখিল করে প্রবেশপত্র গ্রহণ করার পর পুনরায় আবেদন করতে পারবেন না। প্রার্থী মিথ্যা, ভিন্ন বা ভুল তথ্য দিয়ে একাধিকবার ফরম পূরণ করে একাধিক প্রবেশপত্র গ্রহণ করলে প্রক্রিয়ার যেকোনো স্তরে এই রূপ জালিয়াতি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হবে। ভবিষ্যতে কমিশন কর্তৃক গৃহীত নিয়োগ পরীক্ষার সব পদে আবেদনের জন্য অযোগ্য ঘোষণাসহ ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
বিপিএসসি ফরম-১ যথাযথভাবে পূরণ করে নির্দেশ অনুযায়ী ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করে আবেদনপত্র সাবমিট সম্পন্ন হলে কম্পিউটারে ছবিসহ অ্যাপ্লিকেশন প্রিভিউ দেখা যাবে। নির্ভুলভাবে আবেদনপত্র সাবমিট হলে প্রার্থী একটি ইউজার আইডিসহ ছবি এবং স্বাক্ষরযুক্ত একটি অ্যাপ্লিকেন্টস কপি পাবেন। ওই অ্যাপ্লিকেন্টস কপি প্রার্থীকে প্রিন্ট অথবা ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে। অ্যাপ্লিকেন্টস কপিতে একটি ইউজার আইডি দেওয়া থাকবে। এটি ব্যবহার করে টেলিটক প্রিপেইড মুঠোফোন নম্বর থেকে খুদে বার্তার মাধ্যমে পরীক্ষার ফি বাবদ ৭০০ টাকা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য ১০০ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারবেন।
৩ হাজার ১৪০ পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এতে বিসিএস সহকারী সার্জন ১ হাজার ৬৮২ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। এর পরপরই সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। বিভিন্ন বিষয়ে এই ক্যাডার থেকে বিসিএস শিক্ষায় ৫২০ জন নেওয়া হবে।
বিসিএস প্রশাসনে ২৭৪, পররাষ্ট্রে ১০, পুলিশে ৮০, আনসারে ১৪, মৎস্যে ২৬ ও গণপূর্তে ৬৫ জন নেওয়া হবে। আবেদন শেষে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মার্চে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর বণ্টন
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ৩৫, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০, ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ১০, সাধারণ বিজ্ঞান ১৫, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ১৫, গাণিতিক যুক্তি ১৫, মানসিক দক্ষতা ১৫, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের ওপর ১০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস পিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। আগ্রহী প্রার্থীরা কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে তাঁদের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করতে পারবেন।
৪৬তম বিসিএসের অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ, ফি জমাদান এবং প্রবেশপত্র প্রাপ্তিসংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা এখানে দেখা যাবে।