ইউনিয়ন সমাজকর্মী: এক চাকরির পেছনে ৫ বছর গেল চাকরিপ্রত্যাশীদের
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার বছর পর লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় গত বছর। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। অধিদপ্তর সেপ্টেম্বরে ফল প্রকাশের কথা বলছে। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের অনেকের চাকরির বয়স শেষ। আবার অনেকের এটাই ছিল চাকরির শেষ ভাইভা। তাই আশায় আছেন, চূড়ান্ত ফলাফলে ভালো কিছু হবে। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পাঁচ মাসেও চূড়ান্ত ফল পাচ্ছেন না তাঁরা।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা এক প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন এই পদে আবেদন করি, তখন আমার বয়স ছিল ২৭ বছর। এখন আমার বয়স ৩২ বছর। এক চাকরির পেছনেই জীবনের পাঁচটা বছর চলে গেল, অথচ কোনো ফল এল না। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে!’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির সমাজকর্মীর (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদে শূন্য পদের সংখ্যা ৪৬৩। আবেদন করেছিলেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন। ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার তিন দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবে পরীক্ষার আগের দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার তা স্থগিত করা হয়। পরপর দুবার এ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ এনেছিলেন।
সে সময় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্যটি সম্পূর্ণ গুজব। পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বর পরীক্ষার দুই দিন আগে থেকেই বন্ধ ছিল।
আশা করছি, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।’সৈয়দ মো. নূরুল বাসির, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), সমাজসেবা অধিদপ্তর
ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা এক প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন এই পদে আবেদন করি, তখন আমার বয়স ছিল ২৭ বছর। এখন আমার বয়স ৩২ বছর। এক চাকরির পেছনেই জীবনের পাঁচটা বছর চলে গেল, অথচ কোনো ফল এল না। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে!’
বিজ্ঞপ্তির চার বছর পর অবশেষে গত বছরের ২১ অক্টোবর দেশের সব জেলায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪১ জন অংশগ্রহণ করেন। অনুপস্থিত ছিলেন ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬২৯ জন।
লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর। এতে উত্তীর্ণ হন ৫ হাজার ১৭৮ জন।
এরপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন ১৫০ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে আবেদনকারী প্রার্থীদের এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হতে পারে বলে সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে এ পদের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হতে পারে। ফল প্রকাশের পর দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রমও শুরু হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ মো. নূরুল বাসির প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। বুয়েটের কারিগরি সহায়তায় ফলাফল তৈরির মূল কাজ হয়ে গেছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।’