এটিইও নিয়োগ আটকা ৪ মামলায়

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ১৫৯ জন সহকারী উপজেলা/ থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গত ৩০ জুলাই হঠাৎ স্থগিত করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত হাওয়ার প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন আবেদনকারী প্রার্থীরা।

এটিইও পদে আবেদনের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে বিভ্রান্তিতে ছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিশেষ করে প্রাথমিকে যোগ দেওয়া নতুন শিক্ষক, অর্থাৎ যাঁদের চাকরির অভিজ্ঞতা দুই বছর হয়নি, তাঁরা আবেদন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা ছিল না বিজ্ঞপ্তিতে।

সে সময় পিএসসি থেকে বলা হয়েছিল, সরকারি বিধি অনুযায়ী, বিভাগীয় প্রার্থীদের চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ নিয়ম অনুযায়ী সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কমপক্ষে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

কিন্তু পিএসসির আবেদন পোর্টালে টেলিটকের সিস্টেমে যাঁদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দুই বছরের কম ছিল, তাঁরাও আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন এবং অনেকেই আবেদন করেছেন।

আরও পড়ুন

এরপর গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা (২০২৩) গেজেট আকারে প্রকাশ করে। নিয়োগ বিধিমালায় বলা হয়, এটিইও পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত এবং ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের জন্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বোঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থী প্রধান শিক্ষক হলে তাঁর কমপক্ষে তিন বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রার্থী সহকারী শিক্ষক হলে তাঁর কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এটিইও পদে সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে এই পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ আছে।

নতুন নিয়োগ বিধিমালা প্রকাশের পর দুই বছরের কম অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁরা এটিইও পদে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা আবেদন ফি ফেরতের দাবি জানান। কারণ, তাঁরা ফি দিয়ে আবেদন করেছেন এবং নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের আবেদন গৃহীত হবে না।

আরও পড়ুন

সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রবিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীতিমালা ঠিক না করেই এটিইও পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কারণে একটার পর একটা সমস্যা হচ্ছে। এত দিনে আমরা যাঁরা আবেদন করেছি, তাঁদের পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ আবেদনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কিছুই জানাতে পারেনি।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পিএসসির একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ‘আমাদের কাজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা নেওয়া ও প্রার্থী নির্বাচন করা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করতে বলায় আমরা স্থগিত করেছি। তারা যখন আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শুরু করতে বলবে, তখন আমরা শুরু করতে পারব। মামলা চলমান থাকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আটকে আছে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৫৯ জন এটিইও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় উচ্চ আদালত নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এ মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রমে গতি আসবে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসগুলোতে উচ্চমান সহকারী পদে কর্মকর্তারা এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থীর সুবিধা চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এ মামলায় হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। উচ্চমান সহকারীরা এটিইও পদে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের মতো বিভাগীয় প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ চেয়ে মামলা করেছেন। এ ছাড়া নতুন সহকারী শিক্ষকেরাও একটি মামলা করেছেন।

আরও পড়ুন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে পিএসসি আমাদের কাছে আইনগত মতামত চেয়েছে। আমরা আমাদের আইন শাখার সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু মামলা হয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পাশাপাশি আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিজস্ব আইনজীবী আছেন। আমরা ইতিমধ্যে মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর আমরা পিএসসিকে জানিয়ে দেব। এরপর পিএসসি নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।’