বিসিএস নন–ক্যাডার থেকে নিয়োগ হচ্ছে না ১৫৬ প্রকৌশলীর
৪০তম বিসিএসের নন–ক্যাডার থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রথম শ্রেণির (গ্রেড-৯) সহকারী প্রকৌশলীর শূন্য পদে ১৫৬ জনের নিয়োগ হচ্ছে না। এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে এ নিয়োগ না দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি লেখার পর এ নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি না দিলেও মৌখিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এ বিষয়গুলো প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
এদিকে এই নিয়োগ না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পেছাচ্ছে ৪০তম বিসিএসের নন–ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম।
৬ জুলাই ‘নন-ক্যাডার থেকে ১৫৬ সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগে অনিশ্চয়তা’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ১৫৬ জনের রিকুইজিশন বাতিল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তিনি চিঠিতে বলেন, ৪০তম বিসিএস থেকে এই ১৫৬ জন প্রকৌশলী নিয়োগ দিলে ‘ইতিপূর্বে সরাসরি নিয়োগকৃত ২৬৭ জন প্রকৌশলী, যাঁদের চাকরিকাল ইতিমধ্যে দুই বছরের বেশি অতিবাহিত হয়েছে, তাঁরা জুনিয়র হিসেবে বিবেচিত হবেন (নন-ক্যাডার পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা-২০১১-এর-৪(১) (ক) মোতাবেক)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৪০তম বিসিএস থেকে পদ বাছাই করার তারিখ ৫ জুলাই শেষ হয়। এখনের অনেকে সহকারী প্রকৌশলীর ১৫৬টি শূন্য পদে আবেদন করেছিলেন। এখন যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়োগ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে, তাই পিএসসিকে নতুন করে পদ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। আর সেটি সময়সাপেক্ষ। এ কারণে ৪০তম বিসিএস থেকে নন–ক্যাডার নিয়োগে সময় লাগবে। এতে ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল দিতেও দেরি হবে বলে জানা গেছে।
কিছুদিন আগে থেকেই ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রথম শ্রেণির (গ্রেড-৯) সহকারী প্রকৌশলীর শূন্য পদে ১৫৬ জনের নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পিএসসি ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে এসব পদও নির্বাচন করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এই ১৫৬ জনকে পিএসসি থেকে নিয়োগ না দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এতে এসব পদে নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
নন-ক্যাডারের চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, ৪০তম বিসিএসে পদ নির্বাচনের সুযোগ ছিল। সেখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলীর শূন্য পদে ১৫৬ জনের শূন্য তালিকাও ছিল। এতে অনেকে আবেদনও করেছেন। আবেদনের সময় আজ বুধবার শেষ হয়ে গেছে। এ সময় এসে এসব পদ বাতিলের আবেদন প্রহসন। তাঁরা এটি বন্ধের দাবি জানান।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ১৫৬ জনের রিকুইজিশন বাতিল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তিনি চিঠিতে বলেন, ৪০তম বিসিএস থেকে এই ১৫৬ জন প্রকৌশলী নিয়োগ দিলে ‘ইতিপূর্বে সরাসরি নিয়োগকৃত ২৬৭ জন প্রকৌশলী, যাঁদের চাকরিকাল ইতিমধ্যে দুই বছরের বেশি অতিবাহিত হয়েছে, তাঁরা জুনিয়র হিসেবে বিবেচিত হবেন (নন-ক্যাডার পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা-২০১১-এর-৪(১) (ক) মোতাবেক)। এতে প্রশাসনিকসহ জ্যেষ্ঠতার তালিকা নিয়ে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।’ অর্থাৎ ২৬৭ জন প্রকৌশলী, যাঁরা এর আগে পিএসসির সার্কুলারের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের সার্কুলারের তারিখ ৪০তম বিসিএস সার্কুলারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখের পর হওয়ায় বিধিমালা অনুযায়ী আগে যাঁদের সার্কুলার, তাঁরা জ্যেষ্ঠতা পাবেন। অর্থাৎ এই নিয়োগ হলে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ পেতে যাওয়া ১৫৬ জন এর আগে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া ২৬৭ জনের ওপর জ্যেষ্ঠতা পাবেন, যদিও ২৬৭ জনের চাকরিকাল প্রায় ২ বছর।
নন-ক্যাডার প্রার্থীরা বলছেন, এখানে এই যুক্তিতে রিকুইজিশন বাতিল করা কতটা অমানবিক ও অযৌক্তিক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমত, বিধিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা যাঁদের পাওয়ার কথা , তাঁরাই পাবেন। যদি পরে যোগদান করা ব্যাচ পায়, তবে সেটা তাঁদেরই প্রাপ্য হবে। বিধিমালায় তো তা-ই বলা আছে, এখানে কেন আগের গ্রুপকে সুবিধা দিতে হবে? প্রার্থীরা বলছেন, এটি কোন বাধ্যতায় করা হচ্ছে? এখানে প্রশাসনিক জটিলতার কী আছে? নিয়ম যেভাবে আছে, সেভাবেই জ্যেষ্ঠতা হবে, তা-ই নয় কি? নিয়মে সমস্যা থাকলে বিধিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন, তা না করে নিরাপরাধদের কেন বলি দিচ্ছেন!
প্রার্থীরা বলছেন, সবচেয়ে বড় বিষয় ৪০তম বিসিএস অনেক প্রকৌশলীর শেষ পরীক্ষা ছিল। তাঁদের বয়স শেষ। তাঁরা আর সরকারি চাকরিই পাবেন না, তাঁরা জ্যেষ্ঠতার বিষয়টা জানেনই না, চিন্তাই করছেন না, চাকরি পাওয়াই তাঁদের কাছে এখন মুখ্য। শুধু আগের গ্রুপকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ১৫৬ জন ছেলেমেয়ের চাকরিটাই বাতিল করে দেবেন? এটা অমানবিক।
তা ছাড়া ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিলে খুব দ্রুত অধিদপ্তর এই প্রকৌশলীদের সেবা পাবেন। নতুন সার্কুলার দিয়ে জনবল নিয়োগ দিতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যাবে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আউটসোর্সিং পদে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত নিয়োগ দিয়ে লোকবলসংকট নিরসন না করে সংকট বজায় রেখে আউটসোর্সিং পদে অস্থায়ী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়ার এই নোংরা কৌশল বন্ধ করতে হবে। আউটসোর্সিং নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী, টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের টেকনিক্যাল পদে বা বিদ্যমান মূল রাজস্ব পদের প্যারালাল পদে নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই, শুধু অগুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু এখানে নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথভাবে সার্কুলার প্রকাশ না করে, যথাযথ পরীক্ষা না নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে অস্থায়ী পদ সৃষ্টি করে বিএসসি প্রকৌশলীদের বিশেষ সেবা-১ ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিশেষ সেবা-২ নামে আউটসোর্সিং পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁদের আউটসোর্সিং সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী পরিচয়ে অধিদপ্তরের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিচিত করানো হচ্ছে।