পরীক্ষকদের খাতা দেওয়া ও খাতা দেখার বিষয়ে কঠোর পিএসসি
পরীক্ষকদের বিসিএসের খাতা দেখতে দেওয়া ও দেখতে দেওয়ার পর তা যাচাই–বাছাই করার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। খাতা দেখতে যাতে পরীক্ষকেরা ভুল না করেন, সে জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ভুল করা পরীক্ষকদের বিষয়েও কঠোর হচ্ছে পিএসসি। পিএসসির একাধিক সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।
৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী মনমতো না হওয়ার কারণে পরীক্ষার ফল পুনর্মূল্যায়ন করার আবেদন জানিয়েছিলেন। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, খাতা মূল্যায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পিএসসি বেশ কয়েকটি ধাপে মূল্যায়ন করে থাকে। এ ধরনের মূল্যায়নের পর নম্বর নিয়ে কোনো সংশয় থাকতে পারে না। এ ছাড়া খাতা পুনর্মূল্যায়নের কোনো আইনও নেই। তাই খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনন্দ কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিএসের খাতা পুনর্মূল্যায়নের কোনো আইন এখনো হয়নি। আইনের বাইরে আমরা যেতে পারি না। তাই ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই।’
পিএসসি সূত্র জানায়, লিখিত পরীক্ষা খাতা প্রথমে প্রথম পরীক্ষক দেখেন। এরপর সেই খাতা পিএসসি কর্তৃপক্ষ এক দফা যাচাই–বাছাই করে নম্বর ঠিক আছে কি না। এই খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষককে দেওয়া হয়। এটি ঠিক আছে কি না, দেখার পর পিএসসি কর্তৃপক্ষ আবার তা যাচাই করে। এতে সবকিছু দেখে, তাতে যদি প্রথম পরীক্ষক ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের নম্বরে ২০ নম্বর বা তার বেশি নম্বরের পার্থক্য থাকে, তাহলে তা আইন অনুসারে তৃতীয় পরীক্ষক দেখেন। তিনি যাচাই করার পর আবার তা পিএসসি কর্তৃপক্ষ দেখে। এখানে দুইভাবে দেখা হয়, আসল খাতাটি দেখেন পিএসসির একজন কর্মকর্তা এবং ওই খাতার স্ক্যানকপি প্রিন্ট দেওয়া খাতাটি একজন সদস্য দেখেন। এভাবে যাচাই–বাছাই করার পর তার প্রাপ্ত নম্বর চূড়ান্ত করা হয়। আর এই সব ধরনের পর্যায়ে খাতা দেখার সময় পরীক্ষকেরা জানেন না আসলে খাতাটি কোন ব্যক্তির। কেননা খাতায় কারও নাম থাকে না। এভাবে দফায় দফায় খাতা দেখার পর নম্বর দেওয়া হয়।
পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘একই ভুল যাতে বারবার পরীক্ষক না করেন, সে জন্য আমরা বিসিএসের খাতা দেওয়ার আগে পরীক্ষকদের ধাপে ধাপে ডাকছি। তাঁদের ভুল হওয়া খাতা দেখাচ্ছি আর চাইছি একই ভুল যেন আর তাঁরা বারবার না করেন। এতে কাজ হয়েছে।’
গত ৪০তম বিসিএসের লিখিত খাতা দেখার সময় ৩১৮ জন পরীক্ষকের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে পিএসসি সেখান থেকে বেশ কিছু পরীক্ষককে সতর্ক করে। সতর্ক করার পর তাঁদের ৪১তম বিসিএসের খাতা দেওয়ার আগে পিএসসি পরীক্ষকদের সতর্ক হওয়ার জন্য একাধিক সেমিনারের আয়োজন করে। তাতে বিভিন্ন সময় পরীক্ষকেরা কী কী ভুল করেছেন, তা দেখানো হয়। এসব ভুল যাতে আর না হয়, সে জন্য পরীক্ষকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করে পিএসসি। যে পরীক্ষক সেমিনারে অংশ নেননি, তাঁদের কোনো খাতাও দেখতে দেয়নি পিএসসি।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনন্দ কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিএসের খাতা পুনর্মূল্যায়নের কোনো আইন এখনো হয়নি। আইনের বাইরে আমরা যেতে পারি না। তাই ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই।’
পিএসসি সূত্র জানায়, সতর্ক করার পরও কিছু পরীক্ষকের অবহেলা ধরা পড়ে পিএসসিতে। এসব পরীক্ষকের তালিকা করেছে পিএসসি। তাঁদের আর কখনো খাতা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। খাতা না পেয়ে সেই পরীক্ষকদের অনেকেই পিএসসিতে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু পিএসসি তাঁদের আর কোনো খাতা দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু পরীক্ষকের তালিকা তৈরি করেছি, যাঁরা একই ভুল বারবার করছেন। তাঁদের আর খাতা দেওয়া হবে না। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। যাঁরা ভুল করবেন, তাঁদেরই বাদ দেওয়া হবে। পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আমরা আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’
পরীক্ষকদের খাতা দেখার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানালেন পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই ভুল যাতে বারবার পরীক্ষক না করেন, সে জন্য আমরা বিসিএসের খাতা দেওয়ার আগে পরীক্ষকদের ধাপে ধাপে ডাকছি। তাঁদের ভুল হওয়া খাতা দেখাচ্ছি আর চাইছি একই ভুল যেন আর তাঁরা বারবার না করেন। এতে কাজ হয়েছে। ভুলের সংখ্যা কমে আসছে। আরও কমে আসবে। পরীক্ষকেরাও সতর্ক হচ্ছেন। যাঁরা বারবার ভুল করছেন, তাঁদের বিষয়েও আমাদের অবস্থান কঠোর।’