খাতা দেখতে গাফিলতি করা পরীক্ষকদের চিহ্নিত করে যে ব্যবস্থা নিল পিএসসি

বিসিএসের খাতা দেখতে নানা গাফিলতি করা, বেশি সময় নেওয়া, সময়মতো খাতা জমা দিতে চেয়েও না দেওয়া, নম্বরপত্রে গরমিল, দায়সারাভাবে খাতা দেখাসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এমন পরীক্ষকদের তালিকাও করেছে পিএসসি। এ তালিকা ধরে ধরে পরীক্ষক চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান।

পিএসসির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিগত কয়েকটি বিসিএসের খাতা দেখতে নানা গাফিলতি করা যেমন বেশি সময় নেওয়া, সময়মতো খাতা জমা দিতে চেয়েও না দেওয়া, নম্বরপত্রে গরমিল, দায়সারাভাবে খাতা দেখাসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে, এমন পরীক্ষকের তালিকা আমরা করেছি। তাতে যাঁরা বেশি অপরাধ করেছেন, তাঁদের আর খাতা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আর যাঁরা লঘু সমস্যা করেছেন, তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে। তবে তলিকায় ঠিক কতজন আছেন, তাঁদের কে কোন পর্যায়ের পরীক্ষক বা পরিচয় কী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়নি।

আরও পড়ুন

পিএসসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরীক্ষকেরা সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করা ঠিক হবে না। যাঁদের পরীক্ষক হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। তাঁরা খাতা পাচ্ছেন না আর আমরাও যোগাযোগ করছি না তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা যখন দেখছেন আমরা যোগাযোগ করছিও না আর তাঁরাও খাতা পাচ্ছে না, তখন তাঁরা কেউ সরাসরি, কেউ কারও মাধ্যমে জানতে পারছেন, তাঁদের বাদ দিয়েছে পিএসসি।’ পিএসসির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এমন নয় যে তালিকা একেবারেই চূড়ান্ত। এটি প্রতি বিসিএসেই করা হবে। নতুন নতুন পরীক্ষের নাম যুক্ত হবে। যাঁরা সমস্যা তৈরি করবেন, তাঁরাই বাদ পড়বেন।

পিএসসির একজন পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তা বলেন, ‘খাতা দেখতে বেশ ভালোই টাকা দেওয়া হয়। এটা যে কেবল টাকার বিষয়, তা তো নয়, পিএসসির একজন পরীক্ষক, বিষয়টি কিন্তু সম্মানেরও আর সেই সম্মান রক্ষার দায়িত্ব ওই পরীক্ষকের। কিন্তু তাঁরা সেটি না করে বিসিএসের খাতা দেখতে নানা গাফিলতি করা যেমন, বেশি সময় নেওয়া, সময়মতো খাতা জমা দিতে চেয়েও না দেওয়া, নম্বরপত্রে গরমিল, দায়সারাভাবে খাতা দেখাসহ নানা সমস্যা তৈরি করেছেন। এটি কাম্য নয়। তাঁদের খাতা দেওয়ার ওপরে আমাদের পরীক্ষার ফল প্রকাশ নির্ভর করে। ঠিক সময়ে ফল না দিলে পরীক্ষার রুটিনে গরমিল হয়। পরীক্ষার্থীরা হতাশ হন। বিসিএসের সময় বেশি লাগে। তাই আমরা তালিকা করতে বাধ্য হয়েছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া ছাড়া পথ খোলা ছিল না। যাঁরা ভালো করবেন, তাঁরা আরও খাতা পাবেন। এতে বাড়তি আয় আর সম্মান তো আছেই।’

আরও পড়ুন

পিএসসির এক সাবেক পরীক্ষক (ক্যাডার) বলেন, গত পাঁচটি বিসিএসের ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিসিএসে ফল প্রকাশের প্রধান বাধা হচ্ছে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা। গড়ে এক বছরের মতো সময় লেগে গেছে এই খাতা দেখতে। কেননা, এই খাতা দেখেন প্রধানত দুই পরীক্ষক। আবার তাঁদের নম্বরে ২০ শতাংশ বা এর বেশি পার্থক্য হলে সেসব খাতা চলে যায় তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে। তিনি সব দেখে নম্বর চূড়ান্ত করেন। সেখানেও অনেক সময়ের বিষয়। পরীক্ষকের খাতা জমা দেওয়ার বেঁধে দেওয়া সময়ও তাঁরা খাতা দেন না। দিচ্ছি, দেব করে দেন না। ফোন ধরেন না। খাতা না দেখেই বিদেশে চলে যান। ভুলেও যান খাতা দেখতে দেওয়ার কথা। দেখলেও দায়সারাভাবে খাতা দেখেন। সব মিলে এই লিখিত পরীক্ষার ফল দিতে অনেক সময় লাগে পিএসসির।

আরও পড়ুন

পিএসসির আর একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশ দেরি হওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পিএসসি। ফল দিতে দেরির কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি ৩১৮ পরীক্ষকের গাফিলতি বা দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। পরীক্ষকদের এমন অবহেলা কীভাবে কমানো যায়, সে জন্য তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের অংশ হিসেবে পিএসসি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। পিএসসির নানা উদ্যোগের কারণে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। ৪১তম বিসিএসে ১৫ হাজার, ৪৩তম বিসিএসে ১০ হাজার ও ৪৪তম বিসিএসে ৯ হাজারের কিছু বেশি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়। এতে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়ার হার কমেছে। তবে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা যাওয়াকে বিসিএসের ফল দেরির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব কারণ থেকেই খাতা দেখতে দেরির কারণগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেখানেই সিরিয়ালি উত্তর না লেখাকে খাতা দেখতে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন