প্রতিবন্ধী চাকরি মেলায় চাকরি পেলেন ৩৫ প্রার্থী
তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ, বিশেষভাবে সক্ষম বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আয়োজিত চাকরি মেলায় নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন ৩৫ চাকরিপ্রার্থী। মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক চাকরিপ্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে বিশেষভাবে সক্ষম বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি মেলার উদ্বোধনী করেন প্রতিমন্ত্রী। দিনব্যাপী এ মেলায় ৪৮টি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে এবং ৪২০ জন প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থী এসেছেন।
চাকরি মেলার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ম্যানেজার (সিস্টেমস) মো. গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ যে প্রতিবন্ধীরা চাকরিপ্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে বাছাই করে ৩৫ জনকে আজ মেলা প্রাঙ্গণে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা ৩৭৪টি সিভি পেয়েছি। সেগুলো চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে তাঁরা চাকরি পাবেন। মেলায় এসে শুধু চাকরি নয়, কী কী দক্ষতা চাকরির জন্য লাগে, সে সম্পর্কে জানতে পারছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি হয় এ মেলার মাধ্যমে।’
মেলায় নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন মো. সানাউল হক। এসকেএম লেদার লিমিটেডে রিসিপশনে চাকরি পেয়েছেন তিনি। মো. সানাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকরির জন্য বরিশাল থেকে এসেছি। দুই সপ্তাহ আগে আবেদন করেছিলাম। আজ নিয়োগপত্র হাতে পেলাম। ভালো লাগছে, তবে বেতন অনেক কম। ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে, বেতন দেবে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। বেতন একটু বেশি হলে ভালো হতো।’
নিয়োগপত্র হাতে আরেক প্রার্থী মো. রাজিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্লেক্সাস ক্লাউডে কাস্টমার কেয়ারে চাকরি পেয়েছি। আমি প্রতিবন্ধিতা নিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করে এখন এমবিএ করছি। যেহেতু আমি বিবিএ পাস করেছি, তাই আরও ভালো চাকরি আশা করেছিলাম।’
চাকরিপ্রার্থীদের পদচারণে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক চাকরিপ্রার্থী মেলায় এসেছেন। রাঙামাটি থেকে আসা বাক্প্রতিবন্ধী অয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘মেলায় এসে চাকরির জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠানে সিভি দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, পরবর্তীকালে ভাইভার জন্য ডাকা হবে। আশা করছি, ডাক পাব।’
মেলায় যেসব প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে
মেলায় যেসব প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সদস্যভুক্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
শনিবার সকালে মেলার উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান এবং সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম এবং বিসিসির প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে বলা হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনা মূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করে বিসিসি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জন্য চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ২০১৫ সাল থেকে চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চাকরি মেলার মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন আইসিটিতে দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কম্পিউটারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ চাকরিপ্রত্যাশীরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন।