২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দুদকের চাকরি ফিরে পেতে আবেদন সেই শরীফের

মো. শরীফ উদ্দিনছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিন চাকরি ফিরে পেতে দুদকের সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে দুদক কার্যালয়ে তিনি আবেদনপত্র জমা দেন।

মো. শরীফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আজ দুপুরে সচিব স্যারের কাছে চাকরি ফিরে পেতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, আমাকে চাকরি ফিরিয়ে দেবেন। আমি বৈষম্য ও অন্যায়ের শিকার, আমি আমার চাকরি ফেরত চাই।’

আবেদনপত্রে শরীফ লিখেছেন, দুদকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ বছর ৪ মাস নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কর্মকালে দেশের জন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক বিষয়, যেমন কক্সবাজার এল এ শাখার কোটি টাকার দুর্নীতিতে প্রায় ৬০০ পাতার ১৫৫ জনকে চার্জসিটভুক্ত করে আসামির সুপারিশ করেছিলাম। উক্ত তদন্তে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুম মোস্তফা, মহেশখালীর সাবেক এমপি আশেক উল্যাহ রফিকসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক ঊর্ধ্বতন নেতা–কর্মী এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আওয়ামী আস্থাভাজন ব্যক্তিদের জড়িত থাকার প্রমাণ প্রতিবেদনে তুলে এনেছি। ওই তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে ওই এলাকার সাবেক সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ কমিশনকে বাধ্য করেই আমাকে চাকরি থেকে অপসারিত করা হয়েছিল।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা এনআইডি ও পাসপোর্ট সিরিজের ২০টি মামলায় আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনায় তাঁদের সংঘবদ্ধ চক্রের নিকট হয়রানির শিকার হচ্ছি। আরও রয়েছে, কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর (শেখ রেহেনা ও নসরুল হামিদ বিপুর অর্থের জোগানদাতা) গংদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি, পদোন্নতি, গ্যাস–সংযোগ পুনঃসংযোগে বিভিন্ন মামলায় রিপোর্ট করায় নিজ বাসায় এসে হুমকির শিকার হয়ে জিডি করলেও তার কোনো প্রতিকার পাইনি। গ্যাস–সংযোগ দুর্নীতিতে সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদককে আইনের আওতায় আনায় তাঁর মালিকানাধীন মিডিয়া ও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। চট্টগ্রাম বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৮২ পাতার ৫টি মামলা রুজুর সুপারিশ করায় ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমার বিষয় বিবেচনায় না এনে দুদক বর্ণিত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কূটকৌশলের আশ্রয়ে কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকেই ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আমাকে অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।

আরও পড়ুন

শরীফ আরও লিখেছেন, চাকরি হারিয়ে ভাইয়ের কনফেকশনারি দোকানে জীবিকা নির্বাহ করলেও নিজের পকেটের টাকা খরচ করে রুজু করা বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কোর্টে সাক্ষ্য প্রদান করেছি। আমি একজন নবীন কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় ৫০–এর অধিক মামলা ও ২০টির অধিক সিএস দাখিল করেছি। কর্মকাল ও এরপরও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা শারীরিক আক্রমণের শিকার হলেও অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি। আমি আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আমলা ও নেতা–কর্মীদের রোষানল ও অন্যায়ের শিকার। দুদকে আমার বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতি, নারীঘটিত কেলেঙ্কারি কিংবা মাদকের বিন্দুমাত্র সমস্যা ছিল না। এমনকি আমার বিষয়টি দেশ–বিদেশের সব মিডিয়া ও গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় সে যাত্রায় গুমের শিকার থেকে বেঁচে যাই। সার্বিক বিবেচনায়, আমার কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় এনে দুদকে পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা প্রদানসহ পুনর্নিয়োগের জন্য অত্র আবেদন পেশ করা হলো। আমার বিষয়টি বিবেচনায় এনে আমাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার সুযোগ দানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদানের জন্য মহোদয়ের নিকট বিনীত প্রার্থনা করা হলো।

আরও পড়ুন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক ছিলেন শরীফ উদ্দিন। দীর্ঘ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন। ২০২২ সালের ১৬ জুন শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন তিনি। তবে তাঁর আবেদন কমিশনের কাছে বিবেচিত হয়নি। বর্তমানে একটি ওষুধ কোম্পানিতে হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং হিসেবে চাকরি করছেন তিনি।

আরও পড়ুন