নন-ক্যাডার নিয়ে যে অবস্থানে সরকার ও পিএসসি
সরকারের পক্ষ থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের সংশোধিত বিধি পাস না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়োগ দিতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন বিধি সংশোধন হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা চূড়ান্ত করা হলে পরবর্তী নন-ক্যাডার নিয়োগ দিতে পারবে পিএসসি। ওই বিধি পাস হওয়ার পরই পিএসসি দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪০তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ নন-ক্যাডারদের বিভিন্ন পদে সুপারিশের তালিকাও প্রকাশ করতে পারবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বিধি ২০১৪ সালে সংশোধন করা হয়েছে। বিধিতে বলা আছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২৮তম বিসিএস থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার বিধি সংশোধন করে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। এখন একইভাবে ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এটি করা হলে আবার বিধি সংশোধন করতে হবে। তাহলে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা যাবে।
নন-ক্যাডার নিয়োগে পিএসসির অবস্থান জানতে চাইলে একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি। সরকারি বিদ্যমান বিধি সংশোধন করে ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত ওয়েভার দিলেই আমরা ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের তালিকা প্রকাশ করতে পারব। তালিকা প্রস্তুত আছে। বিধি পাস হলেই তা প্রকাশ করা যাবে।’
প্রথম আলো থেকে ওই কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৮তম বিসিএসেও তো নন-ক্যাডার নিয়োগ আগের নিয়মেই হয়েছে, তাহলে তখনো তো বিধি মানা হয়নি, এখন বিধির কথা বলা হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেটা আগে ভুল হয়েছে, সেটা আমরা দিনের পর দিন অনুসরণ করতে পারি না। সঠিক নিয়মে পিএসসিকে চালাতেই বিধি অনুসারে নিয়োগ দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পিএসসি।’ তিনি আরও জানান, বিধি অনুসারে চলতেই এবার ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডারের পদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে পিএসসি।
এতে এবার ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের পাশাপাশি ১ হাজার ২২টি নন-ক্যাডারের পদের কথাও বলা হয়েছে। এখন থেকে বিজ্ঞপ্তিতে বিধি অনুসরণ করেই নিয়োগ দেবে পিএসসি। বিধির বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসলেই ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের তালিকাও দেওয়া হবে। সেই তালিকায় কত পদ, তা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ৩৮তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের যত পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল, তার তুলনায় ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার তালিকা কম হবে না।
পিএসসি সূত্র জানায়, গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হচ্ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হতো। সেখান থেকে পাঠানো পদের চাহিদা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো। নতুন আরেকটি বিসিএসের ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত শূন্য পদের চাহিদা এলে পিএসসি অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ করত।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।
৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ আগের নিয়মেই দেওয়ার দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা ছয় দফা দাবি নিয়ে পিএসসির নামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছিলেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান আগের নিয়মেই নন-ক্যাডার নিয়োগ হোক। না হলে তাঁরা অনেকেই চাকরি পাবেন না। চার বছরে বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস পাস করে চাকরি না পাওয়া অনেক কষ্টের বলেও জানান অনেক চাকরিপ্রার্থী।