৪১তম বিসিএসে যে জালিয়াতি করে বাদ পড়লেন পররাষ্ট্র-প্রশাসনসহ ৪ প্রার্থী
৪১তম বিসিএসে নিয়োগে সুপারিশ পাওয়া পররাষ্ট্র-প্রশাসনসহ চার ক্যাডারের চার প্রার্থীর নিয়োগ বাতিলের কারণ জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে তাঁদের জালিয়াতির বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে পিএসসি। এই চারজনকে আগামী একটি বিসিএসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পিএসসির বক্তব্য হচ্ছে, যে চারজনকে ৪১তম বিসিএসে ক্যাডার পাওয়ার পরে তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, তাঁরা সবাই মেধাবী। তাঁরা প্রত্যেকে চাকরি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু লোভ করতে গিয়ে তাঁরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হলেন।
যেসব প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ৪১তম বিসিএসে সাময়িকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র ক্যাডারের আবদুল্লাহ আল আমিন সরকার (রেজিস্ট্রেশন নম্বর–১১১৭০১০৬), সাধারণ শিক্ষা (প্রভাষক, গণিত) পদে মিঠুন হাওলাদার (রেজিস্ট্রেশন–১১১০৮৭৪১), খাদ্য ক্যাডারে সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী বা সমমানের পদে প্রীতম কুমার মণ্ডল (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১১০৪৬৪৭১) ও প্রশাসন ক্যাডারের মো. আলী আকবার সোহেল (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১১০৭৭০২৩)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি সূত্র জানায়, দুজন চাকরিপ্রার্থী স্নাতকের মিথ্যা ফলাফল দিয়ে বিসিএসের আবেদন করেছিলেন। তাঁরা আবেদন করার সময় ফলাফলের ঘরে যে ফল উল্লেখ করেছেন, তা হার্ড কপিতে বর্ণিত ফলের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। তাই তাঁদের ফল বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের আবেদনপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাঁরা আনুমানিকভাবে ফলাফলের ঘর পূরণ করেছেন। পরে তাঁরা এই ফল সংশোধনের আবেদন করেন। সে সময় সন্দেহ হলে পিএসসি বুঝতে পারে তাঁরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। পিএসসি সূত্র জানায়, এমন নয় যে এই প্রার্থীরা যখন বিসিএসের ফরম পূরণ করেন, তখন পাস করেছেন ও ফল পেয়েছেন। চূড়ান্ত ফল ছাড়াও তাঁরা কিন্তু আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।
অপর দুই প্রার্থীর আবেদনপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাঁরা অ্যাপিয়ার্ড (পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থী) না হয়েও অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। আসলে কোনো বর্ষে তাঁদের এক বা একাধিক কোর্সে ফেল ছিল। নিয়ম অনুসারে তাঁরা অ্যাপিয়ার্ড উল্লেখ করে আবেদনের সুযোগ নিতে পারতেন না। কিন্তু তবুও বিসিএসে আবেদন করতেই অ্যাপিয়ার্ড না হয়েও অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এই দুই প্রার্থীর বিষয়ে পিএসসির বক্তব্য হচ্ছে, তাঁরা যে মেধাবী শিক্ষার্থী এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। চাইলেই অসৎ পন্থা এড়াতে পারতেন।
পিএসসি সূত্র আরও জানায়, যে চারজনকে ৪১তম বিসিএসে ক্যাডার পাওয়ার পরে তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, তাঁরা সবাই মেধাবী। তাঁরা প্রত্যেকে চাকরি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু লোভ করতে গিয়ে তাঁরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁদের জীবনে কলঙ্ক হয়ে থাকল এই পদক্ষেপ। তাঁদের স্বজন বা বন্ধুরাও জেনে যাবেন যে তাঁরা জালিয়াতি করেছেন। এটি অন্যায় সেটা তাঁদের বোঝা উচিত। যাঁদের সৎ থাকার মানসিকতা নেই, তাঁদের আসলে চাকরি করার যোগ্যতাই নেই। এই ব্যক্তিরা চাকরিজীবনে কতটা সৎ থাকতেন, সেটিও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪-এর ১৬ (১) অনুযায়ী মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় কমিশনের ২০২৩ সালের দ্বিতীয় সাধারণ সভা ও অষ্টম বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চার প্রার্থীর ৪১তম বিসিএসের সাময়িক সুপারিশ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ চার প্রার্থীকে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আনন্দ কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ৪১তম বিসিএসে এই চার প্রার্থী বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে পিএসসিকে বিভ্রান্ত করেছেন। কেউ অ্যাপিয়ার্ড না হয়েও অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, কারও সনদ ঠিক নেই। তাই তাঁদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে নিয়োগ বাতিল করা হয়।