পিএসসির প্রথম বিশেষ সভা কাল, আলোচনায় যে যে ইস্যু

নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর পুনর্গঠন হয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরই মধ্যে ৯ জন সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন। এবার কোরাম পূর্ণ হওয়ার পর আগামীকাল মঙ্গলবার প্রথম সভা করতে যাচ্ছে পিএসসি। এখানে আটকে থাকা বিসিএস ও আসন্ন ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা হয়েছে। পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশেষ সভার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ওই সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, কোরাম হতে বা পিএসসির সভা করতে ৬ জন সদস্য দরকার হয়। এটি না থাকায় সভা করা যাচ্ছিল না। কিন্তু এখন তা হওয়ায় সভা ডাকা হয়েছে।

পিএসসি সূত্র জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পর ৮ জুলাই থেকে অচল হয়ে পড়ে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ ছাড়া সরকার বদলের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় চার মাসে কোনো বিসিএসের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি বা ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় চার মাস হতে চলল, পিএসসির গতি নেই।

পিএসসি সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিতসহ গত ১২ বছরে গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্ন কয়েকটি চক্র ফাঁস করেছে বলে সংবাদ প্রচার করে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। একই সময়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবিও তোলেন অনেকে। প্রচারিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ কমিশন পায়নি। অভিযোগ ওঠা ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে কোনো বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ বা পরীক্ষা হয়নি। পরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।

সরকারের পতনের পর গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা পদত্যাগ করেন আবার কাউকে সরিয়েও দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ৮ অক্টোবর পিএসসির ওই সময়ের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন পদত্যাগ করেন। তিনি পিএসসির সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পিএসসি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি কমিশনের ১২ জন সদস্যও ওই দিন সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এর পরদিন পিএসসির চেয়ারম্যান ও সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে নিয়োগ দেয় সরকার। একই সঙ্গে পিএসসির চার সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন নূরুল কাদির, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. সুজায়েত উল্যা ও মো. নাজমুল আমীন মজুমদার।

তিনটি বিসিএস কার্যত আটকে আছে। নিয়োগপ্রক্রিয়াতেও কোনো গতি নেই। এতে চাকরিপ্রার্থীরা অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন। প্রার্থীদের দাবি, দ্রুত এই অবস্থার অবসান হোক। আর পিএসসি বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পর সরকারের পটপরিবর্তন—সব মিলিয়ে পিএসসিকে নতুন করে গতিশীল করতে কিছুটা সময় লাগবে। তাঁরাও এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া স্থগিত থাকা বিসিএস পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে পিএসসি। এ জন্য নতুন করে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়নি।

পিএসসি সূত্র জানায়, এখন ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা স্থগিত আছে, ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার কার্যক্রম আটকে আছে। এ ছাড়া ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত আছে।

আরও পড়ুন

পিএসসি দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বিসিএসের পরীক্ষা স্থগিত করে। এই দুই বিসিএস হচ্ছে ৪৪তম ও ৪৬তম বিসিএস। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে আর ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। কবে শুরু হবে, সে তথ্য জানানো হয়নি।

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থী। এসব প্রার্থীই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এ বিসিএসে ৩ হাজার ১৪০টি পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। সহকারী সার্জন ১ হাজার ৬৮২ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। এরপর সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। বিভিন্ন বিষয়ে এ ক্যাডার থেকে বিসিএস শিক্ষায় ৫২০ জন নেওয়া হবে।

৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। গত বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। লিখিত পরীক্ষা চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন। ৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি ৪৩৭ জন শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪ ও প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন