এক ক্লিকেই মিলবে সব সরকারি চাকরির খবর, আবেদনও অনলাইনে
সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চাকরির জন্য চাকরিপ্রার্থীদের আর বিভিন্ন সংবাদপত্রের অপেক্ষায় থাকতে হবে না। একটি ওয়েবসাইটেই থাকবে সরকারি বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন। সেখানে প্রোফাইল তৈরি করে আবেদনও করা যাবে। এ ছাড়া আবেদনপত্রটি কোন পর্যায়ে আছে, তা–ও জানা যাবে। এমন নানা সুবিধা নিয়ে সরকার চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় চাকরি বাতায়ন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এনহেন্সিং ডিজিটাল গভর্মেন্ট এন্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রজেক্ট চাকরি বাতায়নের কাজ তদারক করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মের চাহিদার কথা বিবেচনা করে জাতীয় চাকরি বাতায়ন খোলার বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতা করছি। এখানে বিভিন্ন নিয়োগ থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট পরিচালনা পর্যন্ত সব কাজে সঠিক নিয়ম মানার প্রতি জোর দিচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে সবার জবাবদিহি আমাদের অন্যতম শর্ত। যে প্রতিষ্ঠান জাতীয় চাকরি বাতায়নের ওয়েবসাইট নির্মাণের কাজ পাবে, তার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এ প্রকল্পে সফল হলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এ ধরনের আরও উদোগ নিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।’
ন্যূনতম ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রটি কোন পর্যায়ে আছে, যেমন সেটি শর্ট লিস্ট হয়েছে কি না, বাতিল হয়েছে কি না বা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, এ ছাড়া পরীক্ষা কখন ও কোথায় হবে—সবকিছুর আপডেট জানা যাবে চাকরিপ্রার্থীর প্রোফাইল থেকেই
ইডিজিই প্রকল্পের টিম লিডার (কম্পোনেন্ট ২) মো. শামসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) যেসব নিয়োগ দেয়, তার বাইরেও নন–ক্যাডার, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শকসহ নানা ধরনের নিয়োগ হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর ১০তম থেকে ১৭তম গ্রেডের বিভিন্ন পদে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয়। এসব নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন সংবাদপত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সবার চোখে পড়েও না। তাই অনেকেই জানতে পারেন না কখন কোথায় কী নিয়োগ হচ্ছে। জাতীয় চাকরি বাতায়নে এ ধরনের সরকারি চাকরির বিজ্ঞাপন থাকবে। সেখানে চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন। প্রোফাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যুক্ত করতে হবে।
মো. শামসুর রহমান আরও বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল যুক্ত করা যাবে। প্রোফাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেরিফিকেশন হবে। কেউ চাইলেও ভুল তথ্য দিতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল এখনো ভেরিফিকেশনের আওতায় আসবে না। এটিতে সময় লাগবে। প্রোফাইলে চাকরিপ্রার্থী বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন।
ন্যূনতম ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রটি কোন পর্যায়ে আছে, যেমন সেটি শর্ট লিস্ট হয়েছে কি না, বাতিল হয়েছে কি না বা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, এ ছাড়া পরীক্ষা কখন ও কোথায় হবে—সবকিছুর আপডেট জানা যাবে চাকরিপ্রার্থীর প্রোফাইল থেকেই। এই প্রোফাইলেই আবেদন করার সুযোগ রাখা হবে আর এতে কমে যাবে প্রিন্ট করে ডাকযোগে আবেদন পাঠানোর ঝামেলা।
চাকরিপ্রার্থী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন জাতীয় চাকরি বাতায়ন যাতে নামমাত্র কোনো ওয়েবসাইট না হয়। এটি যেন বেকার ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কার্যকর একটি ওয়েবসাইট হয়।
মো.শামসুর রহমান বলেন, সরকারি মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর কিংবা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের চাকরির আবেদন করা যাবে এই ওয়েবসাইটে চাকরিপ্রার্থীর প্রোফাইল থেকে। বিভিন্ন চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো তথ্য চাইলে যোগ করা যাবে। চাইলে তথ্য বাদও দিতে পারবেন। এ ছাড়া অভিজ্ঞতা যুক্ত করা যাবে। এটি হবে চাকরিপ্রার্থীদের একটি ইউনিক প্রোফাইল। এটি একজন চাকরিপ্রার্থী একবারই খুলতে পারবেন। একজন একাধিক প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন না। তাই এক প্রার্থী কোনো চাকরিতে একাধিক আবেদনও করতে পারবেন না।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে যখন চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে, তখন চাইলে সেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে এ ওয়েবসাইটে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে দেখতে পারবে কতজন আবেদন করলেন। সেখান থেকে যোগ্য চাকরিপ্রার্থী বাছাই করা যাবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের ই–মেইল বা এসএমএস পাঠানো যাবে। এর মাধ্যমে ডাকযোগে বা অন্যভাবে প্রবেশপত্র বা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানোর ঝামেলা থাকবে না। সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন চাকরির ওয়েব পোর্টালের লিংকও দেওয়া থাকবে জাতীয় চাকরি বাতায়নে। যাতে চাকরিপ্রার্থীরা সব চাকরির খবর একটি ওয়েবসাইটেই পান।
জাতীয় চাকরি বাতায়ন তৈরির কাজ এখন কি অবস্থায় আছে, তা জানতে চাইলে মো.শামসুর রহমান বলেন, এই ওয়েবসাইট তৈরির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। এখন সেটি মূল্যায়নের কাজ চলছে। মূল্যায়ন কমিটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা শেষ করলে সেই প্রতিষ্ঠানকে একটি ডেমো ওয়েবসাইট তৈরি করতে বলা হবে। আস্তে আস্তে সেখানে বিভিন্ন ফিচার যুক্ত হবে। এরপর সেটি উদ্বোধন করা হবে।
চাকরিপ্রার্থী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন জাতীয় চাকরি বাতায়ন যাতে নামমাত্র কোনো ওয়েবসাইট না হয়। এটি যেন বেকার ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কার্যকর একটি ওয়েবসাইট হয়। এই ওয়েবসাইট নির্মাণ ও তত্ত্বাবধানের কাজ যেন যোগ্য প্রতিষ্ঠানই পায়, এই বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘জাতীয় চাকরি বাতায়ন চালু হবে এটা আমাদের মতো বেকারদের জন্য দারুণ এক খবর। দেশ ডিজিটাল হয়েছে, সব কিছুই ডিজিটাল হবে—এমনটাই আমাদের আশা। এখনো চাকরির আবেদন জমা দেওয়া, ফল প্রকাশ, যোগদান করার কাজগুলো এনালগ। এগুলো দ্রুতই ডিজিটাল করতে হবে। এ ছাড়া এখনো অনেক সরকারি ওয়েবসাইট প্রবেশ করতে সমস্যা হয়। জাতীয় চাকরি বাতায়ন যেন সে রকম না হয়। এটির দায়িত্ব যাতে এমন প্রতিষ্ঠান পায়, যারা এসব কাজে পারদর্শী ও দক্ষ।’
জাতীয় চাকরি বাতায়ন চালুর বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একবার বেসরকারি চাকরির মেলার মতোই সরকারি চাকরির মেলা করতে চেয়েছিলাম, সেটি অনেক দূর এগিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি।’ এখন জাতীয় চাকরি বাতায়ন তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে যে যাঁর পছন্দের চাকরির খোঁজ পাবেন ও আবেদন করতে পারবেন। সবকিছুই একটি ওয়েবসাইটে জানা যাবে। অনেকে অনেক সময় সব পত্রিকা রাখেন না। আবার চোখেও পড়ে না। তাতে চাকরির আবেদনের ইচ্ছা থাকলেও করতে পারেন না। এ জাতীয় চাকরি বাতায়ন হলে সেই সমস্যা দূর হবে। এটি দেশের জন্য খুবই একটি আশার খবর। তবে যে প্রতিষ্ঠানকে এ ওয়েবসাইট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হবে, তারা যেন এই কাজে পারদর্শী হয়, সময়ে সময়ে এই ওয়েবসাইটকে আপডেট রাখে, সেই বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। যোগ্য অপারেটর থাকলে সেবাও নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।