অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন, ৪৩তম বিসিএসে পররাষ্ট্রে প্রথম আবীর
৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যখন প্রকাশিত হয়, তখন স্নাতক শেষ হয়নি আবীর হোসেনের। তাই অ্যাপিয়ার্ড (অবতীর্ণ) দিয়েই আবেদন করেন। দুটির বেশি বিসিএস না দেওয়ার পণ করে প্রথম বিসিএসেই পেয়েছেন পছন্দের ক্যাডার। ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন আবীর হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে সিজিপিএ ৩.৬৫ পেয়ে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আবীর হোসেন। তিনি বলেন, ৪৩তম বিসিএসে আবেদনের সময় স্নাতক শেষ না হওয়ায় অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন করেছিলেন, ইন্টার্নশিপ বাকি ছিল।
আগের বছরের প্রশ্ন সমাধানসহ মডেল টেস্ট দিতাম। যেহেতু বিসিএসের জন্য নতুন করে অল্প কিছু বিষয় পড়তে হয়েছে, তাই আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে প্রিলিমিনারি পাস করতে পারব।
নটর ডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পেয়ে এইচএসসি এবং বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন আবীর হোসেন। স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষার পর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন।
আবীর হোসেন বলেন, ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য ১০ মাস সময় পেয়েছি। প্রিলির প্রস্তুতির জন্য এটা অনেক যথেষ্ট সময়। আমার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা ছিল। গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, মানসিক দক্ষতা বিষয়ে আগে থেকেই পড়াশোনা ছিল। তাই নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয়নি। বাংলা ও সাধারণ জ্ঞানের জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিয়েছি, এ দুটি বিষয় বারবার পড়তাম।
বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য আগের বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতেন। আবীর হোসেন বলেন, আগের বছরের প্রশ্ন সমাধানসহ মডেল টেস্ট দিতাম। এভাবে একটা অনুশীলনের মধ্যে থাকতাম। যেহেতু বিসিএসের জন্য নতুন করে অল্প কিছু বিষয় পড়তে হয়েছে, তাই পরীক্ষার আগে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে প্রিলিমিনারি পাস করতে পারব।
লিখিত পরীক্ষায় ৬ দিনে প্রায় ২১ ঘণ্টা লিখতে হয়। অনেক দিন লেখার অভ্যাস না থাকলে ২১ ঘণ্টা লেখা অনেক কঠিন। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার্থীরা প্রায় একই দেবে, তাই এখানে অন্যদের চেয়ে নিজের লেখা একটু আলাদাভাবে উপস্থাপন করা কঠিন কাজ মনে হয় আমার কাছে।
বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত পত্রিকাও পড়তেন আবীর হোসেন। তিনি বলেন, নিয়মিত পত্রিকা পড়া কাজে দিয়েছে। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আগে ছিল না। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এ অভ্যাসটা করতে হয়েছে।
প্রিলিমিনারি পাস করতে খুব বেশি একটা কষ্ট করতে হয়নি আবীরকে। তবে প্রিলিমিনারির পর লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি খুব ভালোভাবে নিতে পারেননি। প্রিলিমিনারির ভালো প্রস্তুতি থাকার কারণে লিখিত পরীক্ষা ভালো হয়েছিল তাঁর। আবীর হোসেন বলেন, লিখিত পরীক্ষার পর একটি চাকরিতে যোগ দিই। এ জন্য মৌখিক পরীক্ষার জন্যও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ প্রকাশের পর এক মাসের মতো প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে প্রিলিমিনারির জন্য ভালো প্রস্তুতি থাকায় মৌখিক পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।
বিসিএস একটি দীর্ঘ যাত্রা। এ সময়টা ধৈর্য ধরে রাখা জরুরি জানিয়ে আবীর হোসেন বলেন, বিসিএসের সিলেবাস বিশাল, অনেক কিছু শিখতে হয়, জানতে হয়। নতুন যাঁরা বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের পড়ার আগ্রহ থাকতে হবে এবং নতুন কিছু জানতে হবে। কোনো বিষয় মুখস্থ না করে কনটেক্সট বুঝতে হবে, কোনো কিছু কেন হয়েছে, সেই ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে হবে। প্রিলির কথা যদি বলি, নেগেটিভ মার্কিং অনেক প্রার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, নেগেটিভ নম্বরের বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে নেগেটিভ মার্কিং কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা—এ তিনটি ধাপের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন মনে হয় আবীরের কাছে। আবীর হোসেন বলেন, লিখিত পরীক্ষায় ছয় দিন ধরে প্রায় ২১ ঘণ্টা লিখতে হয়। অনেক দিন লেখার অভ্যাস না থাকলে ২১ ঘণ্টা লেখা অনেক কঠিন। এ ছাড়া যাঁরা লিখিত পরীক্ষা দিতে আসেন, তাঁদের সবার প্রস্তুতি প্রায় কাছাকাছি থাকে। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর সব পরীক্ষার্থী প্রায় একই দেবে, তাই এখানে অন্যদের চেয়ে নিজের লেখা একটু আলাদাভাবে উপস্থাপন করা কঠিন কাজ মনে হয় আমার কাছে। সব মিলিয়ে লিখিত পরীক্ষা চ্যালেঞ্জিং।
মৌখিক পরীক্ষার বিষয়ে আবীর হোসেন বলেন, বিসিএস ভাইভা নিয়ে আমি একটু নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে ঢোকার পর নার্ভাসনেস পুরোপুরি কেটে যায়। আমার জীবনের সেরা কনভারসেশন ইন্টারভিউ বোর্ডে হয়েছিল। যাঁরা সাক্ষাৎকার বোর্ডে ছিলেন, তাঁরা অনেক সহযোগিতামূলক ছিলেন।