জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাডারদের পদোন্নতি নেই ১২ বছরেও
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগ দেওয়ার পর থেকে একই পদে আছেন। ১২ বছর হয়ে গেল কোনো পদোন্নতি পাননি তাঁরা। অথচ যাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তা নন, তাঁরা পদোন্নতি পেয়ে চলেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে পিএসসির মাধ্যমে ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
পদোন্নতিবঞ্চিত একজন ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ক্যাডার অধিদপ্তর হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে ক্যাডারভুক্তকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিসিএসে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের ফাঁকে ফাঁকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সহকারী প্রকৌশলী পদে অল্পসংখ্যক ক্যাডার ও অধিক সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়ায় ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ অধিদপ্তরে প্রকল্প থেকে আত্মীকৃত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের সংমিশ্রণে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পদোন্নতিবঞ্চিত আরেকজন ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, বিগত সরকারের আমলে কিছু প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রভাবে বেআইনিভাবে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের একাধিকবার ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি যোগ্যতাসম্পন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নন-ক্যাডারদের ক্যাডারভুক্তির পাঁচ মাসের মধ্যে তাঁদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এসব অবৈধ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। একই অনিয়ম দেখা যায় বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিগত সরকারের আমলে জারি করা ক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে অ্যাডহক, এনক্যাডার, নন–ক্যাডার ও প্রকল্পের কর্মকর্তাদের উচ্চতর পদে পদায়নের সব আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা ৩২ জন, ৫৮ জন নন-ক্যাডারসহ মোট ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্তির উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে। যেখানে ভূতাপেক্ষিক ক্যাডারভুক্তির কোনো নির্দেশনা ছিল না। নিয়োগবিধি সংশোধনে এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) গঠন ও ক্যাডার বিধিমালা, ১৯৮০’ সংশোধনপূর্বক সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদ ৫০টি থেকে ২৩৫টিতে বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনেও কোনো ভূতাপেক্ষিক কার্যকারিতা দেওয়া হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় উক্ত ৯০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুপারিশ করেনি। বরং বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার পর উক্ত ৯০ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। তা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০২২ সালে ৯০ কর্মকর্তাকে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে তাঁদের রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারভুক্ত করে।
ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেকে এই ৯০ কর্মকর্তা ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার হয়ে যান ২০২২ সালে এসে। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। যে সময় থেকে তাঁরা ক্যাডারভুক্ত, সে সময়ে ক্যাডারে পর্যাপ্ত পদই ছিল না। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিদ্যমান ক্যাডার কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ৯০ জনের মধ্যে অনেকে বিসিএস পরীক্ষাই দেননি। আবার কয়েকজন বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও পদস্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ বিসিএস ক্যাডারদের কয়েক মাস আগে অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার পদে যোগদান করে তাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সিনিয়র হয়ে যান। এ ছাড়া এই অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওই গেজেট প্রকাশের পর থেকে তাঁদের অধীন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জুনিয়র হয়ে যান।
ক্যাডার কর্মকর্তারা ২৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৯০ জনের এনক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল, এনক্যাডার কর্মকর্তাদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন সংশোধন ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানান। তাঁরা মনে করেন এ সমস্যার সমাধান করা না হলে, বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নতুন যোগদান করা ৩১ জন ও ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সুপারিশ করা ৫০ জন কর্মকর্তাও পরবর্তী সময় এ বৈষম্যের শিকার হবেন।
অধিদপ্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রজ্ঞাপনে ক্যাডারভুক্তির তারিখ নির্দিষ্টকরণ করার দাবি জানান। যাতে নিয়োগবিধি সংশোধন স্বচ্ছ হয় ও পরবর্তী সময় দুর্নীতির প্রভাবমুক্ত থাকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের এ ষড়যন্ত্রের পেছনে যেসব রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের হাত রয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি।