করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু থমকে গেলেও সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএসের নানা কার্যক্রমে গতি আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পিএসসির হাতে ৩৮ (নন-ক্যাডার নিয়োগ), ৪০, ৪১, ৪২তম বিসিএস। এসব বিসিএসের কোনটির অগ্রগতি কী? চাকরিপ্রার্থীদের এসব বিসিএসের খবর জানাতে প্রথম আলো পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক আয়োজন করেছে। আজ পড়ুন পঞ্চম ও শেষ পর্ব
করোনায় সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স হারাচ্ছেন অনেকেই। এ অবস্থায় ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদনের ক্ষেত্রে সরকার চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বিবেচনায় রাখতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪তম বিসিএসের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাডারের চাহিদা গ্রহণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। সব কটি একত্র করে সমপরিমাণ ক্যাডার নিয়োগ দিতে পিএসসিকে নির্দেশনা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন অনেকেই চাকরিতে আবেদনের বয়স হারাচ্ছেন। এটি বিবেচনা করে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন প্রকাশ হতে পারে। এই বিসিএসে বয়সেও শিথিলতা আনা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, যত দূর জেনেছি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪তম বিসিএসের বিষয়ে কাজ করছে। তাদের কাছে চাহিদা এলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব। তবে এই বিসিএসে যাতে আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বয়স বিবেচনা হয়, সে বিষয় বিবেচনা করা হতে পারে বলেও আভাস দেন তিনি।
এদিকে ৪৩তম বিসিএসের সময়সীমাও কয়েক দফা বাড়িয়েছে পিএসসি। এরই মধ্যে চার লাখের বেশি আবেদনও জমা পড়েছে।
করোনার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবি জানিয়ে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘চাকরি প্রত্যাশী যুব প্রজন্ম’-এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বয়স ৩২ করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তানভির হোসেন, মার্জিয়া মুন, মানিক রিপন ও ডালিয়া আক্তার। তাঁরা দাবি করেন, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা তাঁদের জীবন থেকে দুই বছর হারাতে বসেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭ থেকে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। করোনাকালে প্রায় দেড় লাখ পরীক্ষার্থী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা হারিয়েছেন। করোনার শুরুতে যাঁদের বয়স ২৮ ছিল, তাঁরা এখন ৩০-এর কাছাকাছি। তাঁরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারাতে চলেছেন শুধু বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে। যাঁরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চূড়ান্ত বর্ষে ছিলেন, তাঁরা শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। তাই সবকিছু বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সবার জন্য স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করতে হবে।
যত দূর জেনেছি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪তম বিসিএসের বিষয়ে কাজ করছে। তাদের কাছে চাহিদা এলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব
চাকরিপ্রত্যাশীরা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও বিসিএস স্বাস্থ্য ও জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রে ৩২ বছর, অন্যদিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা ৩২ বছর। ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষবার ২৭ থেকে করা হলো ৩০ বছর। তখন গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। এরপর ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের এ দুই–তিন বছর বাড়ার কারণে এ সময় তেমন চাকরি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হয়নি। ১৯৯১ থেকে ২০২১—এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়েনি এই ৩০ বছরেও। অবসরের বয়স যেহেতু দুই বছর বেড়েছে, সে ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স দুই বছর বাড়ালে সেটাও আর সাংঘর্ষিক হয় না।