চাকরির ক্ষেত্রে পেশা নির্বাচন কীভাবে করবেন
করোনা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে চাকরির বাজারের অনেক চিত্র। দেশের চাকরির বাজারের পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। করোনা-পরবর্তী চাকরির বাজার যে কঠিন হবে, তা বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা নয়। করোনার মধ্যে নতুন স্বাভাবিক জীবন আমরা শুরু করে দিয়েছি। এরই মধ্যে চাকরির পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। দিন দিন চাকরির প্রতিযোগিতাও বেড়ে চলেছে। একটি পদের চাকরির জন্য হাজারো যোগ্য প্রার্থী থাকেন। প্রতিযোগিতাটাও কিন্তু হয় যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যেই। এমনিতেই দেশে ভালো চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার থেকে কম কিছু নয়; তার ওপর দেশের বেশির ভাগ বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র পরিসরের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা করোনার আঘাতে যেভাবে সংকুচিত হয়েছে, তা কবে নাগাদ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে, তা কে জানে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। যাঁরা পড়াশোনা শেষে নতুন চাকরির বাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন কিংবা যাঁরা চাকরি পরিবর্তনের কথা ভাবছেন, তাঁরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে ও চর্চা করলে পেশা নির্বাচনে নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারবেন।
পেশা নির্বাচনের আগে ভাবুন
অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা ভালো ফল করার পর মর্যাদাপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত হতে পারেন। আবার অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন। এর অন্যতম কারণ পেশা নির্বাচনে সঠিক পথে ছিলেন না তিনি। পেশা নির্বাচনের আগে অন্তত এখন থেকে আরও ১০-২০ বছর আগের ও পরের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করুন। নির্বাচন করার পর আর পরিবর্তন করা ঠিক নয়। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেশার গুরুত্ব হারায়। তাই ভেবেচিন্তেই এগোনো উচিত।
শুরুটা হোক মাধ্যমিক থেকেই
প্রাইমারির পড়াশোনা শুরুর দিকেই ক্যারিয়ারের চিন্তাটা থাকা ভালো। কিন্তু তখন আপনার নিজের পরিপক্বতা না থাকায় এই বিষয়টি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে নেওয়া যেতে পারে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় পেশা নির্বাচন করে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। এখান থেকেই শুরু হয় বিভাগ নির্বাচন—বিজ্ঞান, ব্যবসা, মানবিক। আপনি যে পেশায় যেতে চাইছেন, সে অনুযায়ী নির্বাচন করুন। কারণ, চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এখন থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভালো করে পড়া শুরু করা উচিত। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইলে সেভাবে শুরু করে দেওয়াই ভালো।
পছন্দের পেশাজীবীদের থেকে জানুন
যে পেশায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন বা মনস্থির করে ফেলেছেন, সেই পেশার দায়িত্ব কেমন, তার ধারণা নিয়ে নিতে পারেন। সম্ভব হলে পেশা নির্বাচনের পর ওই পেশার কারও সঙ্গে কয়েক দিন কাজ করে দেখা যেতে পারে। এতে আপনি ওই পেশা সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবেন। তখন পড়াশোনা করে নিজেকে ওই পেশার জন্য সাজিয়ে নেওয়া যায়।
যদি আপনার পছন্দের পেশা হয় প্রকৌশলী হওয়া, তবে আপনি চাইলে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। অন্তত এক দিন একজন বা কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে সময় দিয়ে বুঝে দেখে নিন কীভাবে তাঁরা কাজ করেন। এতে আপনার পেশা নির্বাচনের সব ব্যাপারে একটা ধারণা তো পাবেন; পাশাপাশি আপনার সঙ্গে এ পেশা মানানসই কি না, তাও জানতে পারবেন।
দক্ষতা বাড়ানো
করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই বাসায় অবস্থান করেছেন। বাড়তি অনেকটা সময় পেয়েছেন। এই বাড়তি সময়টাকে নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়াতে কাজে লাগিয়েছেন অনেকেই। বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের অফার ছিল ইউডেমি, কোর্সেরাসহ অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা ফ্রি অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্স করিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু পেইড অনলাইন কোর্সও ফ্রিতে করার সুযোগ মিলছে।
চাকরির ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে উন্নতির অনেকটা নির্ভর করে ভালো ইংরেজি জানা ও তার সঠিক ব্যবহারের ওপর। বিশেষ করে যাঁরা বড় প্রতিষ্ঠানে বা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁদের তো ভালো ইংরেজি জানার কোনো বিকল্প নেই। ইংরেজি বলতে পারা, লিখতে পারা, পড়তে পারা ও বুঝতে পারা—সবদিকেই জোর দিতে হবে। তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, আপনি যতই ইংরেজি শিক্ষার সার্টিফিকেট অর্জন করেন না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি তা আপনার ব্যবহারিক কাজে প্রয়োগ করতে পারবেন। ইংরেজি শিখতে বইয়ের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যম, যেমন: বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইউটিউবের সাহায্যও নিতে পারেন। তাই ভুলভ্রান্তি হলেও চর্চা শুরু করুন এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ান।
পেশার উপযোগী করে গড়ুন নিজেকে
আমাদের দেশে পড়াশোনা করি মূলত চাকরি করার আশায়। কেউ মানতে চান আর না চান, এটা অনেকাংশেই সত্য। আর এর যথার্থ প্রমাণ মেলে দুবছর আগে ৪১তম বিসিএসে আবেদনের সংখ্যার দিকে তাকালে (৪ লাখ ৭৫ হাজার)। এর আগে ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন।
পড়াশোনা শোনা শেষ করে আমাদের চাকরি পড়া শুরু করতে হয়। নিজের নির্বাচন করা পেশায় জায়গা পেতে কঠোর অধ্যবসায় লাগে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো পেশাই সফল হয় না যদি ভালো চর্চা না থাকে। পড়াশোনা, সঙ্গে দরকার অভিজ্ঞতা।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধু একটি বিষয়ে ভালো প্রস্তুতির বদলে পরীক্ষায় আসা সব বিষয়ের প্রস্তুতি নিন। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচিত হতে হলে প্রতিটি বিষয়ে সর্বনিম্ন পাস নম্বর পাওয়া লাগে। লিখিত পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিন। কম সময়ে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন, তা আগে সমাধান করুন।
ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি
আগে থেকেই চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারেন। চাকরির ইন্টারভিউতে মোটামুটি সাধারণ প্রশ্ন (যেমন নিজের সম্পর্কে বলা, নিজের শখ, নিজের ৫টি গুণ ও দোষ বলা, অবসরে করা কাজ ইত্যাদি) কিন্তু থাকে। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নও থাকে। ইন্টারনেটে চাকরির ইন্টারভিউয়ের বিভিন্ন প্রশ্ন ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার কীভাবে উত্তর দেবেন, সে সম্পর্কে অনেক লেখা পাওয়া যায়। সেগুলো চর্চা করতে পারেন। আর আপনার যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউয়ের ডাক আসবে তখন সম্ভব হলে ওই প্রতিষ্ঠানে আগে ইন্টারভিউ দিয়েছেন, এমন কারও কাছ থেকে তাঁর অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন। আবেদন করার সময় চাকরির সার্কুলারটি সংরক্ষণ করুন। ওখানে যে কাজের বর্ণনা দেওয়া থাকে, তা ভালোভাবে পড়ে প্রস্তুতি নিন। আর ইন্টারভিউয়ের পোশাকের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকুন।
সাধারণ স্কিলগুলো তৈরি করুন
করোনা-পরবর্তী সময়ে চাকরি পাওয়ার লড়াই কঠিনই হবে। চাকরিতে টিকে থাকার লড়াইও কঠিন হবে। তাই চাকরির সাধারণ স্কিলগুলো তৈরি করতে হবে নিজেদের। এগুলোর মধ্যে আছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্টের কাজ ভালো জানা, ভালো রিপোর্ট তৈরি করতে পারা, সঠিকভাবে ই-মেইল করতে পারা ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন সফট স্কিলের চর্চা করুন।