করোনা-পরবর্তী চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকার ৭ উপায়
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে আগামীর চাকরির বাজারের অনেক চিত্র। বাংলাদেশের চাকরির বাজারের চলমান পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু করোনা–পরবর্তী চাকরির বাজার যে আরও কঠিন হবে, তা বুঝতে কারোরই বাকি থাকার কথা নয়।
এমনিতেই আমাদের দেশে ভালো চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার থেকে কম কিছু নয়। তার ওপর দেশের বেশির ভাগ বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র পরিসরের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা করোনার আঘাতে যেভাবে সংকুচিত হয়েছে, তা কবে নাগাদ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে, তা কে জানে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, পুরো বিশ্বই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন আজ।
যাঁরা পড়াশোনা শেষ করে নতুন চাকরির বাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন কিংবা যাঁরা চাকরি পরিবর্তনের কথা ভাবছেন তাঁরা নিচের ৭টি বিষয় মাথায় রাখলে ও চর্চা করলে চাকরির প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।
১. অনলাইন কোর্স করা
বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেকেই বাসায় অবস্থান করছেন। যায় ফলে হাতে পাওয়া গেছে বাড়তি অনেকটা সময়। এই বাড়তি সময়টাকে নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়াতে কাজে লাগাতে পারেন। করে নিতে পারেন বিভিন্ন অনলাইন কোর্স। ইউডেমি, কোর্সেরাসহ অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রি অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্স অফার করে। তা ছাড়াও বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু পেইড অনলাইন কোর্সও ফ্রিতে করার সুযোগ মিলছে। আর যারা ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করতে চান তাঁরা ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট ও গুগলের বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স করে নিতে পারেন। এই সার্টিফিকেটগুলো প্রমাণ করবে আপনি বিষয়গুলো জানেন।
২. ইংরেজি ভাষার চর্চা
চাকরির ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে উন্নতির অনেকটা নির্ভর করে ভালো ইংরেজি জানা ও তার সঠিক ব্যবহারের ওপর। বিশেষ করে যাঁরা বড় প্রতিষ্ঠানে বা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তাঁদের তো ভালো ইংরেজি জানার কোনো বিকল্প নেই। ইংরেজি বলতে পারা, লিখতে পারা, পড়তে পারা ও বুঝতে পারা সব দিকেই জোর দিতে হবে। তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে আপনি যতই ইংরেজি শিক্ষার সার্টিফিকেট অর্জন করেন না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি তা আপনার ব্যবহারিক কাজে প্রয়োগ করতে পারবেন। ইংরেজি শিখতে বইয়ের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যম যেমন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইউটিউবের সাহায্যও নিতে পারেন। তাই ভুলভ্রান্তি হলেও চর্চা শুরু করুন এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ান।
৩. আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র সিভি তৈরি
একটি সিভি একজন চাকরিপ্রত্যাশীর প্রথম পরিচয়। যেখানে একটি পদের জন্য শত শত সিভি জমা পড়ে, সেখানে আপনার সিভিটি আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র না হলে তা শর্টলিস্টেড হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। আর সিভি শর্টলিস্টেড না হলে ইন্টারভিউয়ের ডাকও পাওয়া যাবে না। অনেকেই যেই ভুলটি করেন যে কারও কাছ থেকে একটি সিভির ফরমেট জোগাড় করে তাতে কোনোরকম পরিবর্তন না করে শুধু নিজের তথ্য দিয়ে আবেদন করেন। কিন্তু একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তা প্রতিদিন শত শত সিভি দেখেন। তার কাছে একটি কপি করা সিভি গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। তাই নিজের আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র সিভি তৈরি করে চাকরির জন্য আবেদন করুন।
৪. চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি
এখনই চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখতে পারেন। চাকরির ইন্টারভিউতে সাধারণত দুই ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সাধারণ প্রশ্ন (যেমন নিজের সম্পর্কে বলা, নিজের শখ, নিজের ৫টি গুণ ও দোষ বলা, অবসরে করা কাজ ইত্যাদি) ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন। ইন্টারনেটে চাকরির ইন্টারভিউয়ের বিভিন্ন প্রশ্ন ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার কীভাবে উত্তর দেবেন সে সম্পর্কে অনেক লেখা পাওয়া যায়। সেগুলো চর্চা করতে পারেন। আর আপনার যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউয়ের ডাক আসবে তখন সম্ভব হলে ওই প্রতিষ্ঠানে আগে ইন্টারভিউ দিয়েছেন এমন কারও কাছ থেকে তার অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন। আবেদন করার সময় চাকরির সার্কুলারটি সংরক্ষণ করুন। ওখানে যে কাজের বর্ণনা দেওয়া থাকে, তা ভালোভাবে পড়ে প্রস্তুতি নিন। আর ইন্টারভিউয়ের পোশাকের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকুন।
৫. চমৎকার প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারা
ভালো প্রতিষ্ঠানের ভালো পদে চাকরি পেতে হলে আপনাকে একাধিক ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। এমনকি দিতে হতে পারে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও। তা ছাড়া যেকোনো পেশার যেকোনো চাকরির বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে চোখধাঁধানো প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে শিখুন।
৬. লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধু একটি বিষয়ে ভালো প্রস্তুতির বদলে পরীক্ষায় আসা সব বিষয়ের প্রস্তুতি নিন। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচিত হতে হলে প্রতিটি বিষয়ে সর্বনিম্ন পাস নম্বর পাওয়া লাগে। লিখিত পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিন। কম সময়ে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন, তা আগে সমাধান করুন।
৭. চাকরির সাধারণ স্কিলগুলো তৈরি করা
করোনা–পরবর্তী সময়ে চাকরি পাওয়ার লড়াই যেমন কঠিন হবে, চাকরিতে টিকে থাকার লড়াইও কঠিন হবে। তাই চাকরির সাধারণ স্কিলগুলো তৈরি করুন। এগুলোর মধ্যে আছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের কাজ ভালো জানা, ভালো রিপোর্ট তৈরি করতে পারা, সঠিকভাবে ই–মেইল করতে পারা ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন সফট স্কিলের চর্চা করুন।