৪৬তম বিসিএস
প্রিলিমিনারিতে বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতিতে করণীয়
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন। আজ চতুর্থ পর্বে বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই পিএসসির সিলেবাস দেখে নিতে হবে। এরপর দশম থেকে ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারির আগের সব প্রশ্ন ভালোভাবে পড়তে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির সিলেবাস বেশ বড়। তাই সব বিষয়ে বিস্তারিত না পড়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো বেশি জোর দিয়ে পড়তে হবে। আগের বিসিএসগুলোতে যেসব বিষয়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে, সেগুলো এখানে আলোচনা করা হলো।
জাতীয় বিষয়াবলি
প্রাচীনকাল থেকে সমসাময়িক কালের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি থেকে প্রতি বিসিএসেই একাধিক প্রশ্ন আসে। বাঙালি জাতির উদ্ভব, প্রাচীন বাংলার জনপদ, বাংলায় বিভিন্ন শাসনামল, আগমনকারী পরিব্রাজক, উপমহাদেশে মুসলিম শাসন, বারো ভূঁইয়া, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ শাসন এবং বিভিন্ন বিদ্রোহ ও সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে জানতে হবে। ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে প্রতি বিসিএসেই পাঁচ বা ছয়টি প্রশ্ন আসে। ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ, বিভিন্ন সংগ্রাম পরিষদ, শহীদ মিনার এবং ভাষা আন্দোলনভিত্তিক সাহিত্য সম্পর্কে পড়তে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে যুক্তফ্রন্ট, ছয়দফা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭ মার্চের ভাষণ, অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল, বিভিন্ন বাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন, মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিচয়, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বাংলাদেশের অভ্যূদয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জনসংখ্যা
বাংলাদেশের জনসংখ্যা, জাতি, গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসংক্রান্ত দুই থেকে তিনটি প্রশ্ন প্রতিবার আসে। জনসংখ্যা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে সর্বশেষ জনশুমারি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যগুলো বিস্তারিত পড়তে হবে। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান, বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের জনসংখ্যাসম্পর্কিত তথ্য, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অঞ্চলভিত্তিক অবস্থান, উৎসব ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হবে।
সংবিধান
সংবিধান থেকে প্রতিটি বিসিএসে অন্তত তিন থেকে চারটি প্রশ্ন থাকে। সংবিধানের প্রস্তাবনা ও বৈশিষ্ট, সংবিধান রচনার ইতিহাস, বিভিন্ন তফসিল, সংশোধনী এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও পদ সম্পর্কে জানতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত ১ থেকে ৪৭ পর্যন্ত মনে রাখা অপরিহার্য। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভা, স্থানীয় শাসন, অ্যাটর্নি জেনারেল, সংসদ, স্পিকার, কোরাম, ন্যায়পাল, অর্থবিল, অধ্যাদেশ প্রণয়ন, সুপ্রিম কোর্ট, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, নির্বাচন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক, সরকারি কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠা, জরুরি অবস্থা, সংবিধান সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিসংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলো গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।
কৃষি ও অর্থনীতি
কৃষি ও অর্থনীতি থেকে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন থাকতে পারে। কৃষিপণ্য, কৃষিশুমারি, খাদ্যশস্য, অর্থকরী ফসল, কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, অঞ্চলভেদে ধানের চাষাবাদ এবং বনভূমি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। অর্থনীতির মধ্যে জিডিপি, জিএনপি, অর্থনীতির বিভিন্ন খাত, উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম, বাজেট, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ।
শিল্প-বাণিজ্য ও জাতীয় অর্জন
শিল্প উৎপাদন, পণ্য আমদানি ও রপ্তানি, পোশাকশিল্প, বৈদেশিক লেনদেন, ব্যাংক ও বিমা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ, বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন, সরকার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজ থেকেও কিছু প্রশ্ন আসতে পারে। ওপরের সবগুলো বিষয় মাধ্যমিক পর্যায়ের বোর্ড বই—বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পৌরনীতি ও নাগরিকতা এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা থেকে পড়া যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান
বিসিএস প্রিলিমিনারিতে মৌলিক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন বেশি থাকে। সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান থেকে খুব কম প্রশ্নই আসে। সাম্প্রতিকের জন্য বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয়গুলো পরীক্ষার কিছুদিন আগে পড়লেই হবে। বিভিন্ন পদক-পুরস্কার, রিপোর্ট ও সমীক্ষা, চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন, সবশেষ বাজেট ও জনশুমারি, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সরকারের মেগা প্রজেক্ট ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো পড়তে হবে।
সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হওয়ার অন্যতম কৌশল হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দেওয়া। অন্যথায় সাধারণ জ্ঞান কোনোদিনও পড়ে শেষ করা যাবে না। আগের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে। সংশয়পূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে পড়লে সহজেই মনে থাকবে। বেশি পড়ার চেয়ে পরিকল্পনা করে কম পড়া ভালো। কৌশল ও পরিকল্পনা যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার।