আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা
দণ্ডবিধি আইনের কৌশলী প্রস্তুতি
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ তৃতীয় পর্বে দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
দণ্ডবিধি ১৮৬০ আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয় থেকে দুটি প্রশ্ন আসে। দুটি প্রশ্ন থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। নম্বর থাকবে ১৫। আইনটি অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় অনেকেই ভয় পান, তবে কৌশলী প্রস্তুতি নিতে পারলে এ আইন থেকেও ভালো নম্বর তোলা সম্ভব।
প্রার্থীদের শুরুতে আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো পড়ে নিতে হবে। যেমন সংজ্ঞা, পরবর্তীকালে যৌথ দায়, সাধারণ ব্যতিক্রম। এরপর অপরাধ ও অপরাধের সাজাগুলো পড়তে হবে। তবে অপরাধ ও অপরাধের সাজার সব বিষয় পড়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ধারা রয়েছে, সেগুলো ভালো করে পড়লেই সাধারণত প্রশ্ন কমন পড়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ ধারার মধ্যে রয়েছে—শাস্তি, অপরাধের সহায়তা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, বেআইনি সমাবেশ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মানবদেহবিষয়ক অপরাধ (অপরাধমূলক নরহত্যা ও খুন), আঘাত–সম্পর্কিত অপরাধ, অবৈধ বাধা ও আটক, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, বলপূর্বক গ্রহণ, দস্যুতা, ডাকাতি, অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ ও তছরুপ করা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, ক্ষতিসাধন, মানহানি, জালিয়াতি ও ব্যভিচারসংক্রান্ত ধারা।
কীভাবে পড়বেন
দণ্ডবিধি আইনে ৫১১টি ধারা আছে। প্রতিটি ধারা মুখস্ত করা বেশ কঠিন। তাই আইনটিকে সহজে মনে রাখার জন্য অপরাধমূলক ধারাগুলো আলাদা করে মুখস্ত করে ফেলতে হবে। যেমন চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, সম্পত্তি আত্মসাৎ, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ কত ধারায় রয়েছে, সেগুলো নিজের মতো করে মনে রাখতে হবে। সঙ্গে প্রতিটি অপরাধের শাস্তি কত ধারায় রয়েছে, শাস্তির পরিমাণ কী, তা–ও পড়ে ফেলতে হবে।
পুরো দণ্ডবিধি আইনে ১০ জায়গায় মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা আছে। সেগুলো আলাদা করে পড়তে হবে। এ ছাড়া ছোট ছোট শাস্তির ধারাগুলো পড়তে হবে। যেমন অবৈধ সমাবেশ, মারামারি, অবৈধ বাধা, ভয় প্রদর্শন, আঘাতসহ বেশ কয়েকটি ধারা রয়েছে, যেগুলোর শাস্তি এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। অনেক সময় ছোট ছোট শাস্তির ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে।
এ ছাড়া আইনটি বড় হওয়ায় অনেক টপিকই রয়েছে, যা দেখতে একই রকম মনে হতে পারে। যেমন সাধারণ অভিপ্রায়, সাধারণ উদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, মোটিভ, অপরাধে সহায়তাকারী, দুষ্কর্মে সহায়তা বা প্ররোচিত করা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধের প্ররোচনা বিষয়গুলো পড়তে হবে। পরীক্ষার হলে অনেকেই এসব ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লিখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। তাই বারবার এগুলো অনুশীলন করতে হবে। যত বেশি উত্তর লেখার অনুশীলন করবেন, পরীক্ষার হলে তত বেশি ভালো লিখতে পারবেন।
যেভাবে লিখবেন
দণ্ডবিধি থেকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন আসতে পারে। গতানুগতিক প্রশ্নের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের টিকামূলক প্রশ্নও আসতে পারে। সঙ্গে সমস্যামূলক প্রশ্ন আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে দণ্ডবিধির রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় কিছু কেস রেফারেন্স দিতে পারলে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
২০০৮ সালের বার কাউন্সিল পরীক্ষায় এই প্রশ্ন আসে—কীভাবে সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্য একজন ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য দায়ী করা যায়। যদিও সেই ব্যক্তিটি সরাসরি অপরাধটি সংঘটন করে নাই। বিস্তারিত আলোচনা কর।
এই প্রশ্নের উত্তরে কেস রেফারেন্সসহ লিখতে পারেন এভাবে—১৮৬০ সালে দণ্ডবিধি আইনের ৩৪ ধারাতে সাধারণ অভিপ্রায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ৩৪ ধারায় উল্লিখিত বিধানটি হচ্ছে যে ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি দ্বারা সবার একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কোনো অপরাধমূলক কাজ সম্পাদিত হয়, সে ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই উক্ত কাজের জন্য এমনভাবে দায়ী হবেন, যেন উক্ত কাজ ওই ব্যক্তি দ্বারা একাকী সম্পাদিত হয়েছে।
৩৪ ধারা বিশ্লেষণ করলে আরও দেখা যায়, সাধারণ অভিপ্রায় যৌথ দায় নির্ধারণের জন্য আদালত বিবেচনা করেন। এটা কোনো অপরাধ নয় বরং এটা অপরাধীদের দায় নির্ধারণের একটি নীতি। মহীগবুল বনাম রাষ্ট্র, ২৮ ডিএলআর (ডব্লিউপি) ৪ মামলাতে দেখা যায়, ৩ জন ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্রসহ চুরি করতে আসেন ও অবস্থা দেখে বোঝা যায়, তাঁদের মাঝে এমন পরিকল্পনা ছিল যে বাধা এলে তাঁরা প্রতিরোধ করবেন। চুরি করার সময় একজন ধরা পড়ে যান, আর তিনি যখন চিৎকার করেন, তখন অন্যজন তাঁকে বাঁচানোর জন্য গুলি করলে একজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা ৩ জনই ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছেন। উক্ত মামলায় দেখা যাচ্ছে, বাকি দুজন গুলি করার সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকার পরও তাঁরাও সমান অপরাধে অপরাধী হবেন ৩৪ ধারার বিধান অনুসারে। কারণ, তাঁদের সবার মধ্যে কমন ইনটেনশন বা সাধারণ অভিপ্রায় ছিল।
সুতরাং পরীক্ষায় দণ্ডবিধি বিষয়ে ভালো নম্বর পেতে হলে কেস রেফারেন্স, উদাহরণ ও সঠিক ধারার ব্যবহার করতে হবে। তবেই খাতা মূল্যায়নকারী আপনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।