চাকরি পরিবর্তনের আগে যে ৪টি বিষয় ভাবতে হবে
নতুন বছরে অনেকেই নতুন চাকরি খুঁজতে চান। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক কর্মী নতুন চাকরি খুঁজতে চান বলে প্রফেশনালদের জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক লিংকডইনের একটি জরিপে বলা হয়েছে। মানুষ মূলত বর্তমান বেতন থেকে উচ্চ বেতন ও ভালো অবস্থানের কর্মস্থলের দিকে ঝুঁকে থাকেন। এ থেকে উপকৃতও হন অনেকে। তবে এর জন্য নানা দিকও বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গার্টনার গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, কর্মীরা এখন শুধু বেতনের চেক চান না। তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ভাগাভাগির ও ব্যক্তিগত উন্নতির দিকও খোঁজেন। তাঁরা যেন পুরোপুরি নিজেকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অনন্য করে তুলতে পারেন, সেই দিকও বিবেচনা করেন। চাকরি পরিবর্তনের আগে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে হবে। নিজেকেই আবার সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর সন্তোষজনক হলে চাকরি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
বর্তমান কাজ কি আনন্দদায়ক?
চাকরি পরিবর্তনের আগে কেন চাকরি পরিবর্তন করতে চান, তা খুঁজে বের করুন। হতে পারে বসের কারণে অথবা কোম্পানির সংস্কৃতি আপনার আদর্শের সঙ্গে মানানসই নয়। যদি তা–ই হয়, তাহলে আপনি অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিকভাবে চাকরি খোঁজার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এরপর আপনার ম্যানেজার, টিম ও কোম্পানির সংস্কৃতিকে একপাশে রেখে ভাবতে হবে, বর্তমান কাজ কি আপনি এখনো উপভোগ করেন? যদি মনে করেন, কেবল চাকরি করার জন্যই চাকরিটা করছেন, তাহলে আপনি ভুল পথে আছেন। এমন হলে চাকরি পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারেন।
শুধু বেতনের কারণেই আছেন?
কর্মক্ষেত্রে মাস শেষে বেতন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যদি বেতনই চাকরিতে থাকার একমাত্র কারণ হয়, তাহলে একসময় মনে অসন্তোষ দেখা দেবে, নিজেকে অসহায় মনে হবে। এটি দেখার আরেকটি উপায় হলো কর্মঘণ্টার মজুরি গণনা করা। আপনার উচ্চ বেতন থাকতে পারে। কিন্তু কাজে এত বেশি সময় ব্যয় করছেন যে আপনি খুব কমই পরিবারকে সময় দিতে পারেন বা ছুটি কাটাতে পারেন। যদি এমন হয়, তাহলে উন্নত জীবনযাপনের জন্য চাকরি পরিবর্তন করতে পারেন।
আমি কি নিজে সঠিক?
যদিও কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করার অনেক সুবিধা আছে। তবে কর্মীরা প্রায়ই নিজেকে প্রমাণ করার ব্যাপারে কথা বলতে দ্বিধা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক ক্যারিয়ার গাইডেন্স সার্ভিস জবসেজের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন উত্তরদাতা স্বীকার করেছেন, তাঁরা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে নিজেদের সম্পর্কে অন্তত একটি বিষয় গোপন রেখেছেন। তবে ৬৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা নিজেদের সম্পর্কে কিছু প্রকাশ করার পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছেন। প্রায়ই তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় বা উপেক্ষা করা হয়। পেশাদারভাবে সফল হওয়ার জন্য আপনাকে প্রতিদিন ‘কৌশলী’ থাকতে হবে বলে মনে করা ক্লান্তিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে নিজের অনন্য ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগান।
নতুন চাকরির স্বপ্ন
আপনি কি দীর্ঘদিন ধরে নতুন ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কিছু করেননি? অথবা আপনি কি নিজের বস হতে চান কিন্তু কোথায় শুরু করবেন তা জানেন না? নিজের জীবনের পুরো গন্তব্য আসলে জানা যায় না। তাই এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়াটাও যথেষ্ট হতে পারে। ক্যারিয়ার পরিবর্তন করাটা আসলেই কঠিন ব্যাপার। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আশা না করে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করুন। যদি জানেন, আপনি কী করতে চান, তাহলে সেই ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করুন। একজন ক্যারিয়ার কোচ নিয়োগ করতে পারেন। সামনের দিকে ধীরে এগিয়ে চলুন। আত্মবিশ্বাস আনুন, তাহলেই আপনার স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন।
প্রতিটি মানুষের পেশাগত জীবনে জটিলতা আছে। এর মানে এই নয় যে আপনাকে চাকরি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যদি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এমন মনে করেন যে আপনার অনেক সম্ভাবনা আছে এবং অন্যান্য বিকল্প খোঁজার যোগ্য। তাহলে নতুন চাকরি খুঁজতে লেগে পড়তে পারেন। মনে রাখবেন, গড়ে একজন ব্যক্তি সারা জীবনে প্রায় ৯০ হাজার ঘণ্টা কাজে ব্যয় করতে পারেন। তাই অযথা সময় নষ্ট করার মানে নেই।