৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে ১৩০ নম্বর পেতে যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন

৪৬তম বিসিএসে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা আর কিছুদিন পরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন। প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় পাস করতে হলে ভালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। প্রিলিমিনারিতে সফল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন

প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে প্রতিদিন মডেল টেস্ট দেওয়া জরুরিছবি: প্রথম আলো

বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিবছর ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ ক্যাডার পদের বিপরীতে আবেদন পড়ে তিন থেকে চার লাখ। এই বিপুলসংখ্যক প্রার্থী থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করতে সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করার জন্য আপনি যদি একটু কৌশলী হন, তাহলেই আপনার জন্য প্রিলি পাস করা সহজতর হবে। পরীক্ষার প্রশ্নভেদে কাটমার্কস ৯৮ থেকে ১২৬ পর্যন্ত হতে পারে। তাই আপনি ১৩০ টার্গেট করে নিজেকে প্রস্তুত করুন।

প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে প্রতিদিন অন্তত দুটি মডেল টেস্ট দেবেন। এ ক্ষেত্রে মডেল টেস্ট বই বা অনলাইন অ্যাপসের সহায়তা নিতে পারেন। মডেল টেস্টগুলোতে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। মডেল টেস্টে পাওয়া নম্বর বিশ্লেষণ করবেন। কোন বিষয়ে কত পেলেন, কতগুলো নেগেটিভ দাগালেন, আন্দাজে দাগালে কেমন ভুল যাচ্ছে, কোন বিষয়ে ভালো পারেন আর কোন বিষয় আপনার দুর্বলতা—এগুলো খুঁজে বের করুন।

প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট করে পত্রিকা পড়বেন। অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়ে যতটা বেশি সম্ভব পড়ার টেবিলে থাকুন। পড়ার টেবিলের সামনে একটি বিশ্ব ম্যাপ রাখুন। অবসর সময়ে চোখ বুলাবেন। সাত থেকে আট বছরের সব ব্যাংক, বিমা, গ্যাস কোম্পানি, সামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা, এনএসআই, দুদক, বিএসটিআই ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের চাকরি পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করবেন। এগুলো ভালোভাবে পড়লে প্রায় ৮০টি প্রশ্নের সমাধান করা যায়।

আরও পড়ুন

ভোকাবুলারি, বাংলা প্রতিশব্দ ও গণিত চর্চা ইত্যাদি বিষয় প্রতিদিনের রুটিনে রাখুন। আগের পরীক্ষায় আসা সংবিধানের ধারাগুলো সংক্ষেপে এবং গণিত ও বিজ্ঞানের সূত্রের মতো বিষয়গুলো কাগজে ছোট ছোট করে লিখে রাখুন, যাতে পরীক্ষার আগের রাতে অল্প সময়ে দেখে নেওয়া যায়। প্রশ্নের পাশেই গণিত ও মানসিক দক্ষতা অংশের খসড়া করার অভ্যাস করুন। অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং ২৫ শতাংশ হলেও বিসিএস পরীক্ষায় সেটা ৫০ শতাংশ। তাই নিশ্চিত না হয়ে উত্তর দেবেন না। একাধিক বই না পড়ে একটি বই বারবার পড়ুন।

৭০ নম্বরের মধ্যে ৪৪ পেতে চাইলে

এ ধাপে ৭০ নম্বরের বাংলা ও ইংরেজি অংশকে রেখেছি। বাংলার ব্যাকরণে সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, শব্দের প্রকারভেদ, সমাস, সন্ধি, প্রতিশব্দ, ইত্যাদি থেকে কমন পাবেন। এ অংশে ১৫ নম্বরের মধ্যে ৯ নম্বর পাওয়ার আশা রাখতে পারেন। ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বই এ ক্ষেত্রে অবশ্যপাঠ্য। আর সাহিত্য অংশে প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগের সাহিত্যের ৫ ও আধুনিক যুগের সাহিত্যের ১৫ মিলে মোট ২০ নম্বরের মধ্যে ১৩ নম্বর পাওয়ার আশা করতে পারবেন। সংবাদপত্র প্রকাশকাল, প্রকাশক, সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম, প্রাচীন ও মধ্যযুগের অংশ ভালোভাবে পড়ুন, যাতে কমন পাওয়ার হার বাড়ে। আর আধুনিক যুগের পিএসসি নির্ধারিত সাহিত্যিকদের পাশাপাশি যত বেশি সম্ভব লেখকের লেখা সম্পর্কে ধারণা নিন। সম্ভব হলে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতাগুলোতে একটু নজর বুলিয়ে নেবেন আধুনিক যুগের জন্য।

আরও পড়ুন

ইংরেজি ব্যাকরণ অংশে ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। বিসিএস পরীক্ষার আগের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে বারবার আসা প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা পাবেন। যেমন—ভোকাবুলারি থেকে ৩ মার্ক, ডিটারমাইনার, প্রিপজিশন, জেন্ডার, নম্বর, ভয়েজ, ন্যারেশন, নাউন, ফ্রেজ অ্যান্ড ইডিয়মস, কন্ডিশনাল সেন্টেন্স, ক্লজ ও ফ্রেজ—এগুলো থেকে প্রচুর প্রশ্ন আসে। এ অংশে ১৪ এবং সাহিত্যে ৮ মার্ক হতে পারে আপনার টার্গেট। সাহিত্যের বিগত প্রশ্নগুলো থেকেই আপনি ৭ থেকে ৮ মার্ক কমন পাবেন। আর শেক্‌সপিয়ার, এলিজাবেদান পিরিয়ড, রোমান্টিক যুগ, ভিক্টোরিয়া যুগ—এগুলোতে ভালো দক্ষতা আপনার লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ৩০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর পাওয়ার আশা করতে হবে। আগের বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়লে, সংবিধান, ভৌগোলিক বিষয়, কৃষি, বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সরকারব্যবস্থা, মুক্তিযুদ্ধ, ছয় দফা ও আগের ধাপ ইত্যাদি কিছু জনপ্রিয় বিষয় পড়লে কমন পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০ নম্বরের মধ্যে ১৩ নম্বর পাওয়ার আশা করতে পারেন। আগের বছরের প্রশ্নগুলোর পাশাপাশি রাজধানী, আইনসভা, গোয়েন্দা সংস্থা ও বর্তমান বিশ্ব ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনা করুন। ভূগোলে অল্প পরিশ্রমে ১০ নম্বরের মধ্যে ৭ নম্বর পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল বই থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

৬০ নম্বরের মধ্যে ৪২ পেতে চাইলে

এ ধাপের চারটি বিষয়ে মোট ৬০ নম্বরের মধ্যে আপনি একটু পরিশ্রম করলে ৪২ পেয়ে যাবেন। গণিতে বেশি বেশি অনুশীলনের বিকল্প নেই। বিসিএসে বরাবরই সংখ্যা, লসাগু, গসাগু, মুনাফা, সূচক ও লগ, ধারা, জ্যামিতিক কৌশল, বিন্যাস ও সমাবেশ—এই বিষয়গুলো থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। তাই একটু কৌশলী হোন। গণিতকে ভয় না পেয়ে ভালোবাসুন, দেখবেন কম পরিশ্রমে ১২ নম্বর পাবেন। মানসিক দক্ষতায় যত বেশি অনুশীলন করবেন, তত বেশি নম্বর পাবেন। এ অংশে ভালো করার জন্য নিজের কমন সেন্স ও পরীক্ষা হলে মাথা ঠান্ডা রাখুন। বাংলা সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, ইংরেজি ভোকাবুলারির অনেক প্রশ্ন এ অংশে কমন পাবেন। এ ছাড়া দিক নির্ণয়, আয়না, ঘড়ির কাঁটা, ক্লকওয়াইজ ও অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ মোশন, গিয়ার ও হুইল—এগুলো অনুশীলন করবেন। এ অংশের ভালো প্রস্তুতি একদম নিশ্চিতভাবে আপনাকে ১১ থেকে ১২ নম্বর উপহার দেবে।

এবার আসি বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে। ৪০তম বিসিএস থেকে ৪৫তম বিসিএস পর্যন্ত প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলো দেখলে বোঝা যায়, এই বিষয়গুলোতে বেশি কঠিন প্রশ্ন আসে। তাই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। আগের পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো রিপিট হতে পারে। নিজের ভালো লাগা অনুযায়ী বিষয়গুলোর অনুশীলন আপনাকে এগিয়ে রাখবে। বিজ্ঞানে শব্দ, আলো, শক্তি ও এর রূপান্তর, রোগ ও প্রতিকার, রক্ত, খাদ্য ও পুষ্টি, উদ্ভিদবিজ্ঞান ইত্যাদি এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নম্বর সিস্টেম, ইনপুট-আউটপুট, পেরিফেরালস, ভাইরাস, অপারেটিং সিস্টেম, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আরও পড়ুন

১০ নম্বরের মধ্যে ৪ পেতে চাইলে

এ অংশে আছে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন। ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এ অংশে আন্দাজে দাগাতে গেলেই ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। তাই আগের সব প্রশ্ন ভালোভাবে মুখস্থ করুন। ৩ থেকে ৪টা কমন পাবেন। আর সুশাসন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুশাসনের মূলনীতি ও স্তম্ভ, বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি—এগুলো চর্চা করলে এ অংশে ১০ নম্বরের মধ্যে ৪ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরও পড়ুন