বাংলাদেশ ব্যাংক
সহকারী পরিচালক পদে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ২ মে শুরু হবে। হাতে সময় খুবই কম। এই সময়টা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে ধরা দেবে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। মৌখিক পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (মেধাক্রম সপ্তম) পদে নিয়োগ পাওয়া মো. নিয়ামত আলী খান।
ব্যাংকিং খাতে আকর্ষণীয় চাকরিগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদ। সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে লিখিত পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের এবার বসতে হবে মৌখিক পরীক্ষায়।
প্রথমেই অভিনন্দন জানাই সেই ৬৮০ জনকে, যাঁরা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। আপনাদের সামনে রয়েছে মাত্র একটি ধাপ, যেটি সফলভাবে অতিক্রম করতে পারলেই পেতে পারেন আপনার পরম কাঙ্ক্ষিত চাকরি। সম্ভাবনার বিচারে এবার প্রতি ৩ জনে ১ জন চাকরি পাবেন।
এবার লিখিত পরীক্ষায় গণিতে বরাদ্দকৃত নম্বর তুলনামূলক কম ছিল। বেশির ভাগ অংশজুড়েই বর্ণনামূলক প্রশ্ন ছিল, যাতে স্বল্প সময়ে লিখে নম্বর তোলা তুলনামূলক কষ্টসাধ্য। তাই ধারণা করা যায়, সবার নম্বরের ব্যবধান খুব বেশি হবে না। ফলে ২৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা কারও কারও জন্য গেম চেঞ্জার হতে পারে। মৌখিক পরীক্ষার আগের সময়টা কাজে লাগাতে পারলে ভাইভা ভালো হতে পারে। তবে সময় নষ্ট করলে দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারে।
ভাইভা বোর্ডের প্রস্তুতি শুরু হয় আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সনদ সংগ্রহের মাধ্যমে, কী কী কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে তা ইতিমধ্যে আপনাদের জেনে যাওয়ার কথা। সেগুলোর একটা লিস্ট আজই তৈরি করে ফেলুন, যদি সবগুলো ডকুমেন্ট আপনার কাছে না থাকে দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করুন।
কিছু কাগজ জোগাড় করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রায় প্রতিটি মৌখিক পরীক্ষাতেই কেউ না কেউ আসে যাঁর কাছে সব ডকুমেন্ট থাকে না। যদি একান্তই কোনো কাগজ আনতে না পারেন, তাহলে পরবর্তী কয়েক কর্মদিবসের মধ্যে আপনাকে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে মৌখিক পরীক্ষার আগে ঝামেলা এড়াতে চাইলে সব কাগজপত্র দ্রুত সংগ্রহ করুন।
নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ুন। প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত নিয়ে খুঁটিনাটি, ব্যাংকিং নিয়ে আলোচিত আইন ও পূর্বের আইনের সঙ্গে পার্থক্য; অর্থনীতি, ব্যাংকব্যবস্থা, বাণিজ্যসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রেসক্রিপশন এবং বাংলাদেশ সে অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে; আগামীতে আমাদের চ্যালেঞ্জ; সরকারের মেগা প্রজেক্ট; আমাদের অর্থনীতির আকার ও কাঠামো ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে।
নতুন অথ৴বছরের বাজেট নিয়ে পড়ােশানা করুন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিষয়, যেমন গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন ও তাতে সিদ্ধান্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকের পতন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও রেমিট্যান্স, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাংলাদেশে প্রভাব, আমদানি-রপ্তানি ঘাটতি, বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থা ও ডলার ক্রাইসিস, বৈশ্বিক জ্বালানি ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ভালোভাবে জানতে হবে।
এসব বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে, শুধু মুখস্থ করলে হবে না। ভাইভা বোর্ডে জিজ্ঞেস করলে যেন আপনি এমনভাবে উত্তর দিতে পারেন, যাতে মনে হয় আপনি এসব বিষয়ে গতানুগতিক ধারার বাইরে নিজের মতো করে একটি যৌক্তিক উত্তর দিয়েছেন। এতে বোর্ড মেম্বারদের সামনে আপনার চিন্তাভাবনার দক্ষতা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
ভাইভা বোর্ডে প্রায়ই জানতে চাওয়া হয়, কেন বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে চান? অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কী কাজ করে? এ বিষয়ে আপনার নিজের মতো করে সাজিয়ে সুন্দর একটি উত্তর দেবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে ভিশন, ফাংশন, গভর্নরদের তালিকা, বোর্ড অব ডিরেক্টরস, মনিটারি পলিসি, সিআরআর, এসএলআর, কলমানি রেট ইত্যাদি ভালোভাবে দেখে যাবেন।
এর বাইরেও ব্যাংকসংক্রান্ত যেমন লিকুইডিটি ক্রাইসিস, খেলাপি ঋণ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, বিভিন্ন ইনক্লুসিভ পদক্ষেপ (এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং), গ্রিন ব্যাংকিং, অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং পদক্ষেপ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি বর্তমানে চাকরিরত থাকলে কী করছেন, সেখানে আপনার মূল কাজ, সেখান থেকে কেন বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে চান—এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারে।
এসব বিষয়ের বাইরেও অন্যান্য মৌখিক পরীক্ষার মতো আপনার পড়াশোনা করা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়), সেগুলোর ইতিহাস, বর্তমান প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও অনুষদ নিয়েও প্রশ্ন করতে পারে। এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠিত বিষয়ের মৌলিক জিনিসগুলো সম্পর্কে প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়। নিজ নিজ জেলা, জেলার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়েও প্রশ্ন হয়ে থাকে।