গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শুরু। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন

গাণিতিক যুক্তিতে বেশি নম্বর তুলতে চাইলে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় গাণিতিক যুক্তিতে ৫০ নম্বর এবং সময় ২ ঘণ্টা। মানসিক দক্ষতায় ৫০ নম্বর এবং সময় থাকে এক ঘণ্টা। গণিতে ১২টি প্রশ্ন থাকে। যেকোনো ১০টির উত্তর দিতে হয়। মানসিক দক্ষতার পরীক্ষা প্রিলিমিনারির মতোই হয়ে থাকে। ৫০টি এমসিকিউ থাকে।

গণিতের প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

গণিতের সিলেবাসের পরিধি বড়। বেশ কিছু প্রশ্ন উচ্চতর গণিত ও জ্যামিতি–সংশ্লিষ্ট হওয়ায় মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণত গণিতভীতি কাজ করে। তবে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাছাই করে নিয়মিত অনুশীলন করলে সেই ভীতি অনেকটা কেটে যায়। গাণিতিক যুক্তির কিছু অধ্যায় থেকে প্রতি বিসিএসেই প্রশ্ন আসে। শুরুতেই এসব অধ্যায় ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। এই অধ্যায়গুলো থেকেই ৩০-৩৫ নম্বর সহজেই উত্তর করা যায়। সেগুলো হচ্ছে—বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও গুণোত্তর ধারা, বিন্যাস ও সমাবেশ, সেট ও ভেনচিত্র, সরল ও যৌগিক মুনাফা, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, ঐকিক নিয়ম এবং দূরত্ব ও উচ্চতা। এ ছাড়া কিছুটা কঠিন হলেও আরও কিছু অধ্যায় চর্চা করলে বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকবে। সেগুলো হচ্ছে ত্রিকোণমিতি, স্থানাঙ্ক, জ্যামিতি, সম্ভাব্যতা, অসমতা ও পরিমিতি।

জ্যামিতি

বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই সাধারণত জ্যামিতি অংশ বাদ দিয়ে গণিতের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, যা ঠিক নয় । এ অংশ বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জ্যামিতিতে আগের প্রশ্ন থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। আগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো অনুশীলন করলে জ্যামিতি কমন আসতে পারে। উপপাদ্য না–বুঝে মুখস্থ করা যাবে না। জ্যামিতি অংশের জন্য নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। বাছাই করে অন্তত ২০টি উপপাদ্য আয়ত্ত করার চেষ্টা করবেন।

সূত্র পড়া

বীজগণিত, পাটিগণিত, উচ্চতর গণিত ও জ্যামিতির সব সূত্র নোট করতে হবে এবং বারবার রিভিশন দিতে হবে। আপনি যদি বেলুনের আয়তনের সূত্র কিংবা ঘনকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের সূত্র না জানেন, তাহলে এ–সংক্রান্ত অঙ্ক সমাধান করতে পারবেন না। তাই সব সূত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আয়ত্ত করা উচিত।

নিয়মিত অনুশীলন করা

গণিত অনুশীলনের বিষয়। যত অনুশীলন করবেন, পরীক্ষায় তত ভালো করবেন। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা অনুশীলন করা উচিত। পরীক্ষায় যেহেতু আপনাকে হাতে-কলমে গণিত করতে হবে, তাই হাতে-কলমে গণিত অনুশীলন করার অভ্যাস করুন। চোখ দিয়ে দেখে অনুশীলন করলে পরীক্ষায় গণিত করতে গিয়ে মাঝপথে আটকে যাবেন।

বোর্ড বইভিত্তিক প্রস্তুতি

লিখিত গণিতের প্রশ্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত থেকে আসে। তাই সিলেবাসের সংশ্লিষ্ট টপিকগুলো এ দুটি বই থেকে ভালোমতো অনুশীলন করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতি বই থেকে বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা, সেট, ভেনচিত্র ও ত্রিকোণমিতির অঙ্কগুলো চর্চা করতে পারেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক জ্যামিতি ও ক্যালকুলাস বই থেকে স্থানাঙ্ক জ্যামিতি ও সরলরেখার সমীকরণ অধ্যায় করতে পারেন।

মানসিক দক্ষতার প্রস্তুতি

মানসিক দক্ষতায় ভালো করার জন্য আগের সালের প্রশ্ন সমাধান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় আসা আগের বিসিএসের মানসিক দক্ষতার সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ সমাধান করতে হবে। ভালো করার জন্য প্রতিদিন অনুশীলন করুন। যেকোনো ভালো মানের সহায়ক বই থেকে অনুশীলন করতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেও মানসিক দক্ষতার অনুশীলন করা যায়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

লিখিত মানসিক দক্ষতায় মোট ছয়টি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, ভাবমূলক যুক্তিবিন্যাস, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক, সংখ্যাগত ক্ষমতা, বানান ও ভাষা এবং যান্ত্রিক দক্ষতা। এ বিষয়ের আগের সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভিন্ন শব্দ শনাক্তকরণ, সদৃশ-বিসদৃশ, প্যাটার্ন শনাক্তকরণ, ভিন্ন চিত্র খুঁজে বের করা, ঘড়ি, দিন ও পঞ্জিকা, ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজ গণনা, কোডিং-ডিকোডিং, সিরিজ, সংখ্যাবিষয়ক সমস্যা, পানিতে ও আয়নায় প্রতিবিম্ব, জটিল যন্ত্রের পরিচালনা, সম্পর্ক নির্ণয়, দিক নির্ণয়, স্থানাঙ্ক উপলব্ধি ও সমাধান, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ ও বানান শুদ্ধকরণ থেকে প্রায় প্রতি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। ভালো করার জন্য যেকোনো মানসিক দক্ষতার বই থেকে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।

মানসিক দক্ষতার উত্তর করার সময় যেগুলো আপনি নিশ্চিত জানেন, আগে সেগুলোর বৃত্ত ভরাট করতে হবে। যেগুলো নিয়ে সংশয় আছে, সেগুলো কিছুটা সময় নিয়ে পরবর্তীকালে উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। নিয়মিত অনুশীলন করে ভালো প্রস্তুতি নিলে ৫০ নম্বরের মধ্যে ৪৬-৪৭ নম্বর পাওয়া সম্ভব। যাঁরা গণিতে দুর্বল, তাঁরা মানসিক দক্ষতায় বেশি নম্বর ওঠানোর চেষ্টা করবেন। সবার জন্য শুভকামনা।