৪৬তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ও ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন। আজ ছাপা হলো তৃতীয় পর্ব।

মডেল: রূপা, শিশির ও নীলাছবি: খালেদ সরকার

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে সাধারণ ক্যাডারের জন্য ২০০ নম্বর এবং উভয় ক্যাডারের জন্য ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এ পরীক্ষায় যেমন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার পরিশ্রমও খুব বেশি করতে হয় না। মোটামুটি পরীক্ষা দিলেও আপনি ১০০-এর বেশি নম্বর পাবেন। আর বেশি পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিলে ১১৫ থেকে ১২৫ নম্বর পেতে পারেন। এমনকি ১৩০ নম্বরের বেশি পাওয়াও সম্ভব। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের তুলনায় প্রথম পত্রে তুলনামূলক বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব। প্রস্তুতির জন্য ৩৫তম বিসিএস থেকে এখন পর্যন্ত আসা সব প্রশ্নের সমাধান পড়তে হবে আগে।

বাংলা প্রথম পত্র

ব্যাকরণ অংশে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। এ অংশে সাধারণত ৬ নম্বর করে পাঁচটি প্রশ্ন আসে। ৩৫তম বিসিএস থেকে এখন পর্যন্ত আসা সব প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় প্রতি বিসিএসেই শব্দ গঠন, বাংলা বানান ও বানানের নিয়ম, শুদ্ধাশুদ্ধ/প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নির্ণয়, বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন এবং বাক্য গঠন—এসব বিষয় থেকেই প্রশ্ন আসে। বাংলা ভাষা শিক্ষা বই থেকে চর্চা করলে বাগধারা ভালো কমন পাবেন। আর শব্দ গঠন বা বাংলা বানানের নিয়ম প্রতিবছর ঘুরেফিরে কয়েকটা প্রশ্নই আসে। বাক্যের শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয়ের জন্য প্রিলিমিনারির পড়াগুলো আবার পড়তে হবে। বাক্য গঠনে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মনে রাখলেই হবে। এ অংশে কম পরিশ্রমে ২৬-এর বেশি নম্বর ওঠানো সম্ভব।

ভাব-সম্প্রসারণ ও সারাংশ/সারমর্ম অংশে ২০ নম্বর করে মোট ৪০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। ভাব-সম্প্রসারণে দুটি প্রশ্ন থাকে। যেকোনো একটির উত্তর দিতে হয়। প্রশ্নটি প্রথমে পড়ে বুঝে নেবেন, বাক্যটি দিয়ে কী ভাব বোঝায়। তারপর প্রথমে মূল ভাবটুকু ভূমিকারূপে এক প্যারায়, পরে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও দুই-তিনটি উদাহরণ অপর এক প্যারায় এবং সর্বশেষে মন্তব্যরূপে উপসংহার এক প্যারা-মোট তিন প্যারায় লেখার চেষ্টা করবেন। সারাংশ/সারমর্ম যত সংক্ষেপে মূলভাব প্রকাশ করতে পারা যায়, তত সংক্ষেপিত লিখতে হয়। তাই আপনি সারাংশ অথবা সারমর্ম যেটাই লিখুন, কমপক্ষে দুই-তিনবার পড়ে নিন। তারপর মনে মনে তা কয়েকটি ধাপে ভাগ করে প্রতি ধাপের জন্য একটি বাক্য লিখুন। ভাবের সম্প্রসারণ ও সারাংশ/সারমর্ম অংশে সাধারণত দুটি প্রশ্নের মধ্যে একটি কমন ও একটি আনকমন আসে। যদি প্রশ্ন ধরতে পারেন, তবে আনকমন মানে নতুন আসা প্রশ্নটি উত্তর করার চেষ্টা করতে পারেন। একটু ঝুঁকি থাকলেও ভালো নম্বর পাওয়ারও সুযোগ থাকে। আর এ অংশে মুখস্থ করা যাবে না কোনোভাবেই। প্রচুর রিডিং পড়ে পড়ে মূলভাব ধরার বা বোঝার চর্চা করতে হবে।

আরও পড়ুন

সাহিত্য অংশে ৩ নম্বর করে ১০টি অথবা ৫ নম্বর করে ৬টি মোট ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। চর্যাপদ এবং মধ্যযুগ থেকে ২-৩টি প্রশ্ন আসে। আর বেশির ভাগই আধুনিক যুগের লেখক বা তাঁদের সাহিত্যকর্ম থেকে প্রশ্ন থাকে। এ অংশের সিলেবাস বড় হলেও পূর্ণমান মাত্র ৩০ নম্বর। তাই এ অংশে বেশি সময় নষ্ট করা উচিত হবে না। আর সাহিত্য অংশের ১০টি প্রশ্নের মধ্যে আপনি ২-৩টি প্রশ্ন কমন পাবেন না ধরেই পরীক্ষার হলে যাবেন। তাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময়ে পড়া সাহিত্য অংশটুকুই গুরুত্বভেদে একটু বিস্তারিত পড়বেন। যেমন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প, নজরুলের প্রেম ও দ্রোহ, মেঘনাদবধ কাব্যের রস, বিষাদসিন্ধু উপন্যাসের নায়ক কে, বেগম রোকেয়ার লেখায় নারীবাদ ইত্যাদি কিছু বিষয়ে ভালো ধারণা নেবেন। বিখ্যাত ছোটগল্প ও উপন্যাসের সম্পূর্ণ নাম ও চরিত্রের নাম, বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রিকার নাম ও ছোট ভূমিকা ভালো করে মুখস্থ করবেন। প্রাচীন ও মধ্যযুগে বেশি সময় দেবেন না। এ অংশে নম্বর ওঠানো একটু কঠিন। পছন্দমতো যেকোনো বইয়ের সহায়তা নিতে পারেন।

বাংলা দ্বিতীয় পত্র

অনুবাদ (ইংরেজি থেকে বাংলা) প্রশ্নটি হয় ১৫ নম্বরের। ইংরেজি থেকে বাংলা বিধায় তুলনামূলক সহজ ও ছোট অনুবাদটি। ইংরেজি বিষয়ের দুটি অনুবাদের প্রস্তুতি নিলে আলাদাভাবে এ অংশের জন্য কোনো আলাদা প্রস্তুতিই লাগে না। অনুবাদচর্চা আপনার প্রতিদিনের রুটিনে থাকলে এবং সপ্তাহে দুই-তিন দিন ইংরেজি দৈনিক পড়লে এ অংশের উত্তর করা সহজ হয়ে যায়। শব্দচয়নে ও নান্দনিক বাক্য রচনায় দক্ষতা আপনার জন্য সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন

১৫ নম্বরের কাল্পনিক সংলাপ রচনা পুরোপুরিভাবে আপনার কল্পনাশক্তি ও বিষয়ের সঙ্গে সংযোগ করার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। যেমন ৪৩তম বিসিএসে সংলাপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক ও অর্থনীতিবিদের মধ্যকার সংলাপ রচনার কথা বলা হয়েছিল। আমি তখন পত্রিকায় রাশিয়া থেকে সার আমদানির জটিলতা পড়তাম। পরীক্ষার হলে তা কাজে লাগিয়ে রাশিয়া থেকে সার আমদানি কমে যাওয়া ও প্রকারান্তরে সার গুদামে বস্তা বহনকারী শ্রমিকের কাজ কমে যাওয়া রিলেট করে এবং অর্থনীতিবিদের শ্রমিককে গ্রামের সমবায় সমিতিতে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে সংলাপটি রচনা করেছিলাম। তাই পত্রিকা পড়ার অভ্যাসও সংলাপ রচনায় কাজে লাগতে পারে। এ অংশের জন্য আপনাকে কিছুই মুখস্থ করা লাগবে না। সংলাপে সময় ও স্থান লিখলে ভালো হয়। বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করতে পারেন সংলাপে।

পত্র লিখনে আসা প্রশ্নের নম্বর হলো ১৫। পত্র লিখনের জন্য ফরম্যাটগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করবেন। বাংলা ভাষা শিক্ষার মৌলিক বই থেকে বিভিন্ন ফরম্যাটের পত্র রিডিং পড়বেন। মুখস্থ করবেন না। পরীক্ষার খাতায় পত্র যেকোনো পাতার একদম ওপর থেকে শুরু করবেন। পত্রে নাম ব্যবহার না করাই ভালো। নামের বদলে ক, খ—এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

গ্রন্থ সমালোচনার জন্য আপনাকে মোটামুটি ভালো পরিশ্রম করতে হবে। প্রশ্নটির মানবণ্টন ১৫। বেছে বেছে ১০-১৫টি গ্রন্থের সমালোচনা ভালোভাবে পড়লে আপনি এ অংশে পার পেয়ে যাবেন আশা করা যায়। যেমন আবহমান বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত প্রথম অথবা সর্বশেষ পঠিত গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লিখিত গ্রন্থ, ভাষা আন্দোলন, দেশভাগ, গণ-অভ্যুত্থান, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস বা গীতাঞ্জলি, নজরুলের মৃত্যুক্ষুধা অথবা ‘বিদ্রোহী’, মেঘনাদবধ কাব্য, বিষাদসিন্ধু, হ‌ুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্লেষণ করে কয়েকটা গ্রন্থ নির্ধারণ করতে হবে। বইয়ের লেখকের পুরো নাম, প্রকাশ কাল, প্রকাশনী বা পৃষ্ঠাসংখ্যা, চরিত্র ইত্যাদি মুখস্থ করে ফেলতে হবে। বইয়ের ভালো দিক, ভালো লাগার চরিত্র, গল্পের প্লটের শক্তিশালী বা দুর্বল দিক, ভাষাশৈলী, সংলাপ, অন্য কাহিনির সঙ্গে মিলের পাশাপাশি মন্দ দিকও থাকতে পারে আপনার সমালোচনায়। পত্রিকাগুলোয় সাধারণত শুক্রবার সাহিত্য পাতা প্রকাশিত হয়। এসব পাতায় সাহিত্য সমালোচনা থাকে, যা পড়ে আপনি সমালোচনার আইডিয়া নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

রচনা লেখায় ৪০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। আগে একাধিক অপশন থাকলেও সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় একটা অপশনই ছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধ ও এর বিভিন্ন ধাপ, পরিবেশ ও প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, দেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, প্রিয় লেখক, খেলা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত, উদ্ধৃতি সংগ্রহ করে নোট করে রাখবেন। রচনার পয়েন্ট বিভিন্ন বই যেমন বাংলা রচনার বই, ইংরেজি রচনার বই, বাংলাদেশ বা আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বই ইত্যাদি থেকে পড়ে খাতায় লিখে রাখবেন। আর রচনার ভেতরের লেখা সহায়ক বই থেকে রিডিং পড়ে রাখবেন একাধিকবার। রচনায় ম্যাপ, চার্ট, ইনফোগ্রাফ, ডেটা টেবিল ইত্যাদির ব্যবহার আপনার নম্বর বাড়াতে সহায়তা করবে।