ঈদের ছুটিতে যেভাবে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন
চাকরিপ্রার্থীদের বেশির ভাগ শহরের মেসে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে চাকরির প্রস্তুতি নেন। এবার ঈদে বেশ লম্বা ছুটি। তাই অনেকে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। ঈদের ছুটিতে বা অন্য কোনো ছুটিতে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই ব্যাগ ভরে বই নিয়ে বাড়িতে যান। কিন্তু বই পড়া তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত ব্যাগ খোলাই হয় না। তাঁদের মধ্যে যাঁরা গুরুত্ব দিয়ে ছুটির দিনগুলো নষ্ট না করে পরিকল্পনামাফিক বই পড়েন, তাঁরাই সফল হন। বিশেষ করে যাঁরা বেসরকারি চাকরি বা অন্য চাকরির পাশাপাশি বিসিএস বা ভালো কোনো চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ঈদের ছুটি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হতে পারে। কারণ, তাঁদের জন্য টানা ছুটি পাওয়া কঠিন।
ঈদের পরপরই রয়েছে বড় দুটি চাকরির পরীক্ষা। একটি বিসিএস ও অপরটি ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষা। ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে আবেদন করেছেন তিন লাখের বেশি প্রার্থী। লক্ষাধিক প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শেষ মুহূর্তে প্রতিটি সময় কাজে লাগাতে হবে। ঈদের ছুটিতে অপ্রয়োজনীয় আড্ডায় সময় নষ্ট না করে ঘরে বসে অনলাইনে দিতে পারেন বিসিএস মডেল টেস্ট। এতে নিজের প্রস্তুতি আরও জোরালো হবে।
ক্যারিয়ার-বিষয়ক পরামর্শক ও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে চাকরিপ্রার্থীদের পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। একবার স্টাডিগ্যাপ হলে পড়ায় আবার ফিরে আসা অনেক কষ্টকর। তাই ঈদের ছুটিতে নিজের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক বই না থাকলেও ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রার্থীরা অনলাইন সোর্সগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চাকরির প্রস্তুতি-সংক্রান্ত ফেসবুক পেজ, গ্রুপ থেকে স্টাডি করা যেতে পারে বা এক্সাম অ্যাপস থেকে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে পারেন।’
রবিউল আলম লুইপা আরও বলেন, ‘যাঁরা ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা দেবেন, তাঁরা সংবাদপত্রে প্রকাশিত বা অন্য কোনো সোর্স থেকে বিগত ভাইভা অভিজ্ঞতাগুলো দেখে প্রস্তুতির নিতে পারেন। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেলে প্রার্থীর পছন্দের চাকরিতে যোগদান করেছেন এ রকম সিনিয়রদের সঙ্গে দেখা করা, প্রস্তুতির পরামর্শ নেওয়া বা তাঁর অভিজ্ঞতার গল্পগুলো সামনাসামনি শোনা প্রস্তুতিতে দারুণ টনিক হিসেবে কাজ করতে পারে।’
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৭৭৫টি সাধারণ অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষা আগামী ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ২০০ নম্বরের উত্তর দিতে হবে। এ পরীক্ষার জন্য হাতে সময় নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ব্যাসদেব দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু ২০০ নম্বরের প্রতিযোগিতামূলক এই লিখিত পরীক্ষার নম্বর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে রাখে, তাই ঈদের ছুটিটা ভালোভাবে কাজে লাগানো উচিত। ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার বর্তমান সময়ের ট্রাম কার্ড হলো ফোকাস রাইটিং অ্যান্ড ট্রান্সলেশন। ট্রান্সলেশনে ভালো করতে অনুশীলনের বিকল্প নেই এবং ফোকাস রাইটিংয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সমসাময়িক অর্থনৈতিক, জলবায়ু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু বা সংকট সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ, ডেটা, চার্ট, টেবিল ইত্যাদির মাধ্যমে গুছিয়ে লেখার কোনো বিকল্প নেই। ঈদের ছুটির দিনগুলো সিনেমা দেখে বা ফেসবুকে নষ্ট না করে আগের পড়াগুলো রিভিশন দিয়ে নিতে পারেন।’
৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ঈদের ছুটির সময়ে পড়াশোনা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা অনুচিত। বিশেষ করে ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে যাঁরা অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা এই সময়ে এক বা দুদিন ঈদ উদ্যাপন করে প্রতিদিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিভিশন দিতে পারেন। প্রিলিমিনারির পড়াশোনায় বেশি বিরতি দিলে আগের পড়া টপিকগুলো ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যাঁরা ৪৪তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদের এখন বিরতি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা এখন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয়, নিজ জেলা ও ক্যাডার চয়েস লিস্টের প্রথম তিনটি চয়েস সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে রাখতে পারেন। একটা বিসিএসের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। তাই প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। সে জন্য অবসর সময়কেও ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।’
বিসিএস ও ব্যাংক বাদে আরও যেসব চাকরির পরীক্ষা আছে এপ্রিল মাসে সেগুলো হলো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরীক্ষা, রাজউকের পরীক্ষা, ঢাকা ওয়াসার পরীক্ষা, রেলওয়ের বিভিন্ন পদের মৌখিক পরীক্ষা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চাকরির পরীক্ষা। তাই ঈদের ছুটির সময়টুকু কাজে লাগান এসব চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে।