বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। সঠিক প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ব্যাসদেব দে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদ চাকরিপ্রার্থীদের কাছে পছন্দের অন্যতম কারণ দ্রুত নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়। এক বছরের মধ্যে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া পদোন্নতি, সামাজিক মর্যাদা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো আছেই।
সহকারী পরিচালক পদে প্রিলিমিনারিতে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর ও ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যায়। সাধারণত বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি ব্যাকরণ, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার, বিজ্ঞান ও সমসাময়িক বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়। সাধারণত গণিত থেকে ২০টি, বাংলা ও ইংরেজি থেকে ২৫টি করে, সাধারণ জ্ঞান থেকে ২০টি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) থেকে ১০টি করে প্রশ্ন আসে। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট বাঁধাধরা নিয়ম নেই।
বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি
আপনার যদি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ভালো দখল থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই ২৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে পারবেন। ব্যাকরণ অংশ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, বাক্য, লিঙ্গান্তর, সন্ধিবিচ্ছেদ, বচন, বানান ও বাক্য শুদ্ধকরণ, সমাস, কারক ও বিভক্তি, পদ, প্রকৃতি-প্রত্যয়, বাগ্ধারা, এককথায় প্রকাশ, উপসর্গ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান প্রভৃতি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। আর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ, বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী, তাঁদের কাজ, উক্তি, বিখ্যাত পত্রপত্রিকার সম্পাদক ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন এসে থাকে।
বিসিএস পরীক্ষার বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশটির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া থাকলে ব্যাংকের জন্য আলাদাভাবে এ বিষয়ে প্রস্ততি নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যাকরণের জন্য নবম–দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বোর্ড বই পড়তে হবে। বাংলা সাহিত্যের পরিধি অনেক বড়। এ ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ, বিভিন্ন যুগের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকদের সৃষ্টি, সমকালীন সাহিত্য, আঞ্চলিক সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করবেন।
বাজারে প্রচলিত বই থেকে বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ, বিখ্যাত সাহিত্যিকদের (ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মীর মশাররফ হোসেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল) সাহিত্যকর্ম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যকর্ম এবং সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যকর্মগুলো পড়লে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।
ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি
সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজিতে ভালো করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক লেভেলে ইংরেজির শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয় না। ফলে পরবর্তী একাডেমিক জীবনে এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় তাঁদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ইংরেজিতে ভালো করতে নিয়মিত অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই।
এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়ে বেশি জোর দিতে হবে, সেগুলো হলো ইংরেজি পদ ও পদ প্রকরণ, বাক্য, কাল, লিঙ্গ, অব্যয়, ভয়েস, কারেকশন, ইংরেজি বানান, সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, ইডিয়মস অ্যান্ড ফ্রেজ, গ্রুপ ভার্ব, সাবজেক্ট, ভার্ব, অ্যাগ্রিমেন্ট ও ন্যারেশন। ব্যাংকের চাকরি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে মূলত শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ অংশ থেকে। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকা থেকে অন্তত একটি সম্পাদকীয় অনুবাদ করবেন এবং প্রয়োজনীয় শব্দগুলো নোট করে রাখবেন।
গণিত বিষয়ের প্রস্তুতি
যেকোনো চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একমাত্র গণিত অংশে সহজেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। আমাদের অনেকের মধ্যেই গণিতভীতি কাজ করে, তবে কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকলে এবং কিছু কৌশল অবলম্বন করলে সহজেই এই ভীতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ পরীক্ষায় গণিতের প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় করা হয়, যার ফলে ভাষাগত দক্ষতা না থাকলে সমাধান জানা থাকলেও অনেক সময় সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বেশি করে অনুশীলন করতে পারেন। নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইটি অবশ্যই অনুশীলন করে নিতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান ও আইসিটির প্রস্তুতি
সাধারণ জ্ঞানের নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ যেকোনো ব্যাংকের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় সাম্প্রতিক অংশ থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। সে জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও খবর দেখার অভ্যাস থাকতে হবে। ব্যাংকিং সম্পর্কিত টার্ম ও অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে এই অংশে ভালো করা সম্ভব।
ব্যাংকে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) অংশটি একটু আলাদা। এখানে অনেক টেকনিক্যাল প্রশ্ন আসে। এ ক্ষেত্রে শর্টকাটে শুধু ব্যাংকের জন্য প্রস্তুতি না নিয়ে সার্বিকভাবে সব পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বইটি সবচেয়ে ভালো।
বইটির প্রোগ্রামিং অংশ বাদে অন্য সব অধ্যায় ভালোভাবে শেষ করলে যেকোনো পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অংশে ভালো করা সম্ভব। পরিকল্পিত ও গোছানো প্রস্তুতি আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম। সবার জন্য শুভকামনা।