৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন
বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। পাস করতে হলে প্রার্থীকে অন্তত ১০০ নম্বর পেতে হবে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ক্ষেত্রে ভাইভায় প্রাপ্ত নম্বর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভাইভায় বেশি নম্বর পেতে জোরালো প্রস্তুতি নিতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষার শুরুতেই প্রার্থীর নিজের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে। তাই নিজের পরিচয়, পরিবার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পছন্দ-অপছন্দ, সবলতা-দুর্বলতা এবং সিভিল সার্ভিসের প্রতি আগ্রহের কারণ বর্ণনা করে ইংরেজিতে অনধিক ২০০ শব্দে নোট করে গুছিয়ে রাখতে হবে। ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীর সুন্দর উপস্থাপনা ও মার্জিত প্রকাশভঙ্গি বেশি নম্বর পেতে সহায়ক হবে।
বিসিএস ভাইভায় কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে প্রতিনিয়তই প্রশ্ন করা হয়। প্রথমেই নিজের নামের অর্থ, নামের সঙ্গে মিল আছে এমন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি, নিজের জন্মদিনের ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা, বংশ পরিচয়, পরিবার, ব্যক্তিগত উপলব্ধি, ভাইভার দিনের কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা দিবস সম্পর্কে জানতে হবে। নিজের গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র ছিলাম। ভাইভা বোর্ডে আমাকে নওয়াব সলিমুল্লাহর জন্ম-মৃত্যু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
বিসিএসের ভাইভায় প্রার্থীর নিজ জেলা সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। নিজ জেলার প্রতিষ্ঠা, নামকরণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, প্রসিদ্ধ সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা, উপজেলা ও পৌরসভা, নদ-নদী, দর্শনীয় স্হান, বিখ্যাত পণ্য, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযুদ্ধের সময় সেক্টর নম্বর এবং সেক্টর কমান্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। বাংলা একাডেমি প্রতিটি জেলা সম্পর্কে বই প্রকাশ করেছে। নিজের জেলার তথ্যগুলো জানার জন্য এই বই বেশ সহায়ক হবে।
স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠিত বিষয় থেকে ভাইভায় জিজ্ঞাসা করা খুবই স্বাভাবিক। তাই পঠিত বিষয়ের মৌলিক ধারণা, লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসের অংশ, ফিল্ডওয়ার্ক, গবেষণাপত্র এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।
নিয়মিত একটি করে বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়তে হবে। তাহলে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্প্রতি আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা সহজ হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে ।
ভাইভা বোর্ড যে ভাষায় প্রশ্ন করবে, সে ভাষায় উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ভাইভায় বেশ কিছু প্রশ্ন ইংরেজিতে করা হয়, তাই আগে থেকেই ইংরেজি কথোপকথন ভালোভাবে চর্চা করতে হবে।
ক্যাডার চয়েস লিস্টের প্রথম তিনটি চয়েস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। প্রার্থীর একাডেমিক বিষয়ের সঙ্গে প্রথম পছন্দের ক্যাডার কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, সেটিও জানতে হবে। বিশ্ব ও বাংলাদেশের মানচিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখা উচিত। প্রিয় কবি, খেলা, বই, মানুষ ও গান সম্পর্কেও জেনে যাবেন। আগের ক্যাডারদের ভাইভা অভিজ্ঞতা পড়তে পারেন। কিংবা বিগত কয়েকটি বিসিএসে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন সংগ্রহ করেও পড়তে পারেন। এতে ভাইভায় জানতে চাওয়া প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। পিএসসির ভাইভায় যাওয়ার আগে কিছু মক ভাইভায় অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। এতে প্রার্থীর ভাইভা–ভীতি ও সংকোচ হ্রাস পাবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু–সম্পর্কিত সব তথ্য গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে। বর্তমানে যেকোনো চাকরির ভাইভায় এ–সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে জানতে হবে। সংবিধান, সরকার, রাষ্ট্র, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, জাতীয় চার নেতা এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত।
ভাইভা বোর্ডকে জয় করার জন্য বোর্ড সদস্যদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সে জন্য সব প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে করতে হবে। আপনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আত্মবিশ্বাসী চাহনি বোর্ড সদস্যদের সহজেই সন্ত্তষ্ট করবে। বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে যথাযথ আই কন্টাক্ট রাখাও খুব জরুরি। যিনি প্রশ্ন করবেন তাঁকে ফোকাস করে উত্তর করতে হবে।
ভাইভায় যেকোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য খুব কম সময় পাওয়া যাবে। তাই উত্তর দেওয়ার সময় অপ্রাসঙ্গিক তথ্য না দিয়ে কেবল মূল পয়েন্টটুকু বলার চেষ্টা করতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে বিনয়ের সঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করুন। কখনোই বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়ানো যাবে না। অসৌজন্যমূলক কিংবা বেয়াদবি প্রকাশ পায়, এমন কোনো আচরণ করা যাবে না। বর্তমানে বিসিএস ভাইভায় সাধারণত ফেল করানো হয় না। কেবল অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে কিংবা একদমই নার্ভাস হয়ে গেলে বোর্ড আপনাকে ফেল করাতে পারেন।
বিসিএস ভাইভায় একজন প্রার্থীর কেবল জ্ঞানের গভীরতাই যাচাই করা হয় না; বরং তাঁর যোগাযোগ দক্ষতা, মানসিক, পরিপক্বতা, ব্যক্তিত্ব, বিনয়, সৌজন্যতা, প্রকাশভঙ্গি, স্মার্টনেস, চাপ সহ্য করার ক্ষমতা এবং অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ ক্ষমতাও যাচাই করা হয়। ভাইভায় একজন প্রার্থীর প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে অর্জিত সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাই বিসিএস ভাইভায় ভালো করতে সব ধরনের প্রস্তুতিই গ্রহণ করতে হবে।