দশ ব্যাংকের অফিসারের লিখিত পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য করণীয়

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালভিত্তিক ‘অফিসার (জেনারেল)’–এর ২ হাজার ৭৭৫টি শূন্য পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২৫ হাজার ৪৭৬ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। আগামী শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ২ ঘণ্টাব্যাপী লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। হাতে সময় নেই বললেই চলে। শেষ সময়ে কোন বিষয়গুলো পড়তে পারেন, সেগুলো এখানে আলোচনা করা হলো।

যেহেতু, ২০০ নম্বরের প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষার নম্বর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা নিশ্চয়তা প্রদান করে, তাই ঈদের ছুটি শেষের সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

আরগুমেন্ট রাইটিং

ব্যাংক লিখিত পরীক্ষায় বর্তমান প্রশ্ন প্যাটার্নে আরগুমেন্ট রাইটিং একটি ভালো নম্বর তোলার জায়গা। অনেকে সঠিক পরিকল্পনা ও কাঠামোর কারণে আরগুমেন্ট রাইটিংয়ে প্রায়ই খুব কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। একটু কৌশল অবলম্বন করে আপনি এ অংশে ভালো করতে পারবেন।

১. সঠিক স্ট্রাকচারের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা

আপনি চার থেকে পাঁচটি প্যারার মধ্যে লেখা শেষ করতে পারেন। প্রথম সূচনা অংশে আপনার পছন্দমতো একটি পক্ষ নিয়ে আপনার স্টেটমেন্ট ক্লিয়ার করতে পারেন। দ্বিতীয় অংশে দু–তিনটি প্যারার সাহায্যে আপনার দেওয়া মতামতের পক্ষে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরবেন। এ ক্ষেত্রে তথ্য–উপাত্ত ও ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরবেন। একইভাবে আপনার মতামতের লিমিটেশনস নিয়েও আলোকপাত করবেন এবং সেগুলোকে কেন আপনি উপেক্ষা করেছেন, সেটা ব্যাখ্যা করে আপনার অবস্থান ক্লিয়ার করবেন। শেষ অংশে আবার একটু উপসংহার টাইপের আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরভাবে সমাপ্ত করবেন।

আরও পড়ুন

২. ভাষাগত দক্ষতা, বাক্যের গঠন এবং ভোকাবুলারির ব্যবহার

যেকোনো রাইটিংয়ের জন্য ব্যাকরণগত শুদ্ধতা এবং বাক্যের মানসম্মত গঠন অনেকটা তাৎপর্য বহন করে। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। ভোকাবুলারির ব্যবহার ক্ষেত্রে অনেকটা সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, একটি রাইটিং একই শব্দ পুনরাবৃত্তি লেখার কোয়ালিটি কমিয়ে দেয়। তাই যে শব্দগুলো আমরা লেখায় বেশি ব্যবহার করি, সেসব শব্দের কিছু স্ট্যান্ডার্ড সমার্থক শব্দ এবং সচরাচর ব্যবহার করা শব্দের বিপরীতে কিছু অ্যাডভান্সড শব্দ নোট রাখতে পারেন। পরীক্ষার আগে এসব শব্দ অবশ্যই বারবার দেখে যাবেন।

ফোকাস রাইটিং

আমি মনে করি, ফোকাস রাইটিংয়ে ভালো নম্বর তুলতে লেখার শুরু ও শেষে মানসম্মত কোটেশন ব্যবহারের অভ্যাস আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। অন্যদিকে তথ্য ও  উপাত্ত আপনার লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। আপনি লাইন গ্রাফ, বার গ্রাফ, পাই চার্ট ও টেবিলের মাধ্যমে ডেটা তুলে ধরতে ও ব্যাখ্যা করতে পারেন।  

কী কী ফোকাস রাইটিং পড়বেন

নিচের টপিকগুলোর ওপর ফোকাস রাইটিং আয়ত্ত করে ফেলার কোনো বিকল্প নেই।
*ক্যাশলেস বাংলাদেশ, ডিজিটাল ব্যাংকিং, সর্বজনীন পেনশন, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এর প্রভাব, গ্রিন ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, এসডিজি গোল এবং অর্জন, মুদ্রানীতি, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনীতিতে দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ, এসএমই খাতের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ, নতুন সুদের হার নীতি, ডলার–সংকট, এলডিসি থেকে উত্তরণ ও চ্যালেঞ্জ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্মার্ট ব্যাংকিং, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন,  ভিশন ২০৪১, ক্রিপ্টোকারেন্সি, আইসিটি খাতে সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ, মোবাইল ব্যাংকিং, ব্লু ইকোনমি, মেগা প্রজেক্টসমূহ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও উত্তরণ।

ছবি: চাকরি-বাকরি

কোন কোন বিষয়ের ডেটা সংগ্রহ করবেন

গত পাঁচ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, এফডিআই, রেমিট্যান্স, দারিদ্র্যের হার, চরম দারিদ্র্যের হার, মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভ, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি।

এ ছাড়া নন–পারফরমিং লোন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাজেট ২০২৩-২৪, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, মেগা প্রজেক্ট, আরএমজি, আইসিটি, জলবায়ু পরিবর্তন ও সাম্প্রতিক ইস্যু–সংক্রান্ত ডেটা সংগ্রহ করবেন।

অনুবাদ

আমি বলব, ট্রান্সলেশন একটা আর্ট, যা এক দিনে আয়ত্ত করা যায় না। এটা সম্পূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনের বিষয়। এই স্বল্প সময়ে প্রতিদিন অন্তত দুটি করে ট্রান্সলেশন অনুশীলন করতে পারেন। এ অংশে ভালো করতে একটা ব্যাপার মাথায় রাখা জরুরি, সেটা হলো আক্ষরিক অনুবাদের পরিবর্তে ভাবানুবাদ করা।

##ফোকাস রাইটিং এবং অনুবাদের ক্ষেত্রে লেখায় Professional style আনতে Clause & Phrase, Participle, Gerund, Infinitive, Complex Sentence, Inversion, Causative verb, Group verb ইত্যাদির মারপ্যাঁচ থাকতে হবে। গতানুগতিক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে একটু অ্যাডভান্স শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন important ব্যবহার না করে Crucial ব্যবহার করা যেতে পারে।

সামারি রাইটিং

গুছানো প্রস্তুতি থাকলে খুব কম সময়ে ভালো নম্বর তোলার ক্ষেত্রে সামারির বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।

এ অংশে বেশ কিছু কৌশল খাটিয়ে আপনি নিজেকে অনেকটা এগিয়ে রাখতে পারবেন। প্যাসেজটি একবার পড়ে মূল মেসেজটি বের করে নিতে হবে। এরপর প্যাসেজ থেকে কোনো বাক্য হুবহু কপি না করে মূলভাবটি সংক্ষেপে  তুলে ধরলেই মোটামুটি ভালো মার্কস তুলতে পারবেন। আপনি চাইলে প্যাসেজ থেকে ৪–৫টি প্রশ্ন বের করে সেগুলোর উত্তর সাজিয়ে লেখার মাধ্যমেও এ অংশে ভালো করতে পারেন।

সাধারণ জ্ঞান

সাধারণ জ্ঞান ব্যাংক লিখিত পরীক্ষার জন্য যেমন কম সময়ে সবচেয়ে বেশি মার্কস তোলার সহায়ক, তেমনি আবার এর পরিধিও অনেক। ৩০ নম্বরের এ অংশই চাকরি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটু কৌশল খাটিয়ে পড়াশোনা করলে খুব সহজেই ২০ থেকে ২৫ নম্বর পাওয়া যায়।


সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য কী কী পড়বেন, কীভাবে পড়বেন

চাকরির জন্য পরীক্ষার আগে কেন্দ্রের বাইরে ফুটপাতে পরীক্ষার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, ঢাকা, ২২ অক্টোবর
ছবি: জাহিদুল করিম

বাংলাদেশ অংশ

যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন...
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ১৯৪৭-৭১, বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি, জাতির পিতার শাসন আমল, সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু,  বাংলাদেশের অর্থনীতি (বিস্তারিত), শিল্প ও বাণিজ্য, খেলাধুলা (ক্রিকেট ও ফুটবল) ইত্যাদি।  

আন্তর্জাতিক অংশ

বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থা, অর্থনৈতিক চুক্তি ও জোট, বিশ্ববাণিজ্য ও বাণিজ্যিক গোষ্ঠী,  গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা (সদর দপ্তর,সদস্য ও সম্মেলন), কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা,  বৈশ্বিক জলবায়ু, বৈশ্বিক সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিক্রমা ইত্যাদি।

গণিত

বিগত তিন থেকে চার বছরের ম্যাথ অনুশীলনের পাশাপাশি এ সময়ে নিচের চ্যাপ্টারগুলো দেখে যেতে পারেন। সেট, লাভ-ক্ষতি, যৌগিক মুনাফা, অনুপাত, ট্রেন ও নৌকা রিলেটেড সমস্যা, বিন্যাস ও সমাবেশ,  সম্ভাবনা, পার্টনারশিপ, পরিমিতি এবং  ঘন জ্যামিতি।


সর্বোপরি আমি বলব, আপনি কী পারেন না, আর কী পারেন, সেটা ভুলে গিয়ে এই কয় দিন লেগে থাকুন। নিজের পরিকল্পনা নিজেই করে ফেলুন। হতাশ না হয়ে আজ থেকেই আপনার প্রস্তুতি শুরু করে দিন। সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত অনুশীলন আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।

*লেখক: ব্যাসদেব দে,  সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক