১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন: প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। সকালে স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা এবং বিকেলে কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে আপনিও পেতে পারেন শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ। প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা টি আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. সান্ত আলী।
প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির পরামর্শ
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রথম একটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে, এই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী সংখ্যা অনেক। যেমন এবার ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রায় ১৯ লাখ (১৮ লাখ ৬৫ হাজার) প্রার্থী প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করবেন। সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় বসবে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পরীক্ষার্থী। প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভয় ও দুশ্চিন্তা করার কিছুই নেই। অন্য সব চাকরি পরীক্ষা বিশেষ করে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ও বিভিন্ন দপ্তরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার মতোই নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রার্থীদের সবচেয়ে স্বস্তির খবর হচ্ছে, এ পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে প্রতিযোগিতা করতে হয় না; শুধু পাস নম্বর ৪০ পেতে হয়। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে জেনে, বুঝে সহজ ও সঠিক উত্তর করা অত্যন্ত জরুরি। যারা পাস করবেন তাঁরাই পরবর্তী ধাপে বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন। তবে, ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটার বিধান থাকায় একটু সতর্ক থাকতে হবে। উত্তর করার ক্ষেত্রে উত্তরটি শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে উত্তর করা উচিত হবে না। সবচেয়ে সহজ কৌশল হচ্ছে, শতভাগ নিশ্চিত জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে করা। তাহলে অন্তত অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা সর্বোচ্চ পরিমাণে কমানো সম্ভব। প্রিলিতে শতভাগ পাস নিশ্চিত করতে শুধু পাস নম্বরের কথা মাথায় না রেখে সর্বোচ্চ ভালো করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। বিগত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় শতভাগ প্রশ্নই সিলেবাসের মধ্যেই থাকে। সে ক্ষেত্রে সিলেবাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, নিবন্ধন প্রিলিতে সর্বোচ্চ কতটা প্রশ্নের উত্তর করেছেন, সেটার চেয়ে সর্বোচ্চ কতটা সঠিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, সেটা সবচেয়ে জরুরি। এ বিষয়টি অবশ্যই সর্বোচ্চ খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি
প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বাংলা অংশে ২৫ নম্বরের মতো বরাদ্দ থাকে। বেশির ভাগ প্রশ্ন ব্যাকরণ থেকে হয়। তবে সাহিত্য থেকেও কিছু প্রশ্ন হতে পারে। ব্যাকরণ অংশের সমাস, ভাষা ও ভাষারীতি, বাগধারা, বাক্য, সমার্থক শব্দ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, সন্ধি, কারক, বিপরীত শব্দ, বিরাম ও যতিচিহ্ন থেকে বেশির ভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সিলেবাসের বাকি বিষয়বস্তু থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাংলা অংশের প্রস্ততির জন্য নিজের তৈরিকৃত হ্যান্ডনোট বা সাজেশন করা যেতে পারে। নবম ও দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই, বিগত সালের প্রায় ১০ বছরের বিসিএস, নিবন্ধন ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে হবে।
ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি
ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীদের প্রথম কাজ হচ্ছে বিগত সালের প্রায় ১০ বছরের বিসিএস, নিবন্ধন ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সম্পর্কে ধারণা নেওয়া। তারপর যতদূর মৌলিক জ্ঞান আছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ বিষয়বস্তু সমাধান করা এবং বেশি বেশি চর্চা করা। বাক্য সম্পূর্ণ করা, বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ, পার্টস অব স্পিচ, রাইট ফর্ম অব ভার্ব, উপযুক্ত শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ, প্রতিশব্দ ও বিপরীত শব্দ, ভার্ব ও আর্টিকেলের ব্যবহার এবং কম্পোজিশন পড়তে হবে। সহায়ক বই হিসেবে ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি গ্রামার বোর্ড বই এবং যেকোনো লেখকের গ্রামার বই অনুশীলন করা যেতে পারে।
গণিত বিষয়ের প্রস্তুতি
গণিতের ক্ষেত্রেও বিগত বিসিএস, নিবন্ধন পরীক্ষা, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে ধারণা নিয়ে বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া ভালো প্রস্তুতির জন্য গণিতের বীজগণিত অংশ থেকে উৎপাদক, বর্গ ও ঘন–সংবলিত সূত্র প্রয়োগসংক্রান্ত অঙ্কসমূহ, গসাগু, লসাগু, লগারিদম ও সূচকসংক্রান্ত অঙ্কসমূহের সমাধান আলাদাভাবে চর্চা করা যেতে পারে। পাটিগণিত অংশে গড়, লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, সুদকষা, শতকরা, লাভক্ষতি ও অনুপাত সমানুপাত থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। জ্যামিতি অংশের কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, রেখা, বৃত্ত ও ক্ষেত্রফল থেকে সচরাচর প্রশ্ন হয়। এ ছাড়া সিলেবাসে উল্লেখিত বিষয়বস্তু থেকেও প্রশ্ন হয়।
সাধারণ জ্ঞান অংশের প্রস্তুতি
সাধারণ জ্ঞান অংশের মধ্যে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, সংবিধান ও প্রশাসনিক কাঠামো, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্জন ও জাতীয় প্রত্যাশা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হয়। বাংলাদেশের সমসাময়িক ঘটনাবলি থেকে প্রশ্ন হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, জনসংখ্যা ও বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন, চুক্তি, সম্মেলন, ভৌগোলিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক চলমান যুদ্ধ, সংকট ও আলোচিত ঘটনা ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, আইসিটি, পরিবেশ ও রোগব্যাধি ইত্যাদি থেকেও প্রশ্ন হয়।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সিলেবাস যতদূর সম্ভব শেষ করা ও বিগত সালের প্রায় ১০ বছরের বিসিএস, নিবন্ধন ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সমাধান করতে পারলে প্রিলিতে প্রায় শতভাগ কৃতকার্য হওয়া সম্ভব। মনে রাখা জরুরি, নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রিলি পাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রশ্নের উত্তর করার চেয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সঠিক উত্তর করার গুরত্ব সবচেয়ে বেশি।