বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের (বিজেএসসি) অধীন সহকারী জজ নিয়োগের ষোড়শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে চলবে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সময় একদম কম। তবে যাঁদের রোল পেছনে পড়েছে, তাঁরা একটু বেশি সময় পাবেন। শেষ সময়টুকু ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। মৌখিক পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ১৫শ বিজেএস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ পাওয়া মো. রায়হান।
সহকারী জজ নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষায় ১০০ নম্বর বরাদ্দ। গত ১৪শ বিজেএসের চূড়ান্ত ফলাফলে শেষ ৫ জনের মোট নম্বর একই ছিল এবং ১৫শ বিজেএসেও শেষ ৪ জনের মোট নম্বর একই ছিল। তাই সহজেই বোঝা যায়, এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।
প্রায় সবাইকে মৌখিক পরীক্ষায় কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয়। যেমন আপনার শখ কী? অবসরে কী করেন? আপনি কেন জজ হতে চান? আপনি সৎ কি না? আমরা কীভাবে বুঝব, আপনি সৎ? আপনার জীবন থেকে একটা কাহিনি বলেন, যা শুনে আমরা বুঝব, আপনি সৎ। একজন বিচারকের কী কী গুণ থাকা উচিত? আপনার কী কী গুণ আছে, কী কী গুণ নেই? আপনাকে দূরে নিয়োগ দিলে কী করবেন?
এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই নিজের মতো করে তৈরি করে রাখবেন। গান পারেন কি না? কবিতা পারেন কি না? বই পড়েন কি না? এসব প্রশ্নের ক্ষেত্রে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। মিথ্যা বলছেন বুঝলেই আপনার সততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবে।
মৌখিক পরীক্ষার আগে সব কাগজপত্রের মূল কপি ও সত্যায়িত ফটোকপি নিয়েছেন কি না, চেক করবেন, যেন কোনো সমস্যা থাকলে সমাধানের সময় হাতে থাকে। মূলকপি ও সত্যায়িত ফটোকপি দুটি আলাদা ফাইলে রাখবেন।
ভাইভা বোর্ডে আপনার মেজাজ পরীক্ষা করার জন্য অনেক কিছু বলতে পারে। যেমন আপনাকে দাঁড়িয়ে ভাইভা দিতে বলতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বিনয়ের সঙ্গে মেনে নিতে হবে।
সহকারী জজ নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড আন্তরিক। তাই ভাইভা বোর্ডে বিচলিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনি বিচলিত হলে বা নার্ভাস হলে বোর্ড আপনার আদালত পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে।
শেষ মুহূর্তে মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মূল আইনগুলো আরেকবার পড়বেন। আইনের যে ধারাগুলো প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য পড়েছেন, সেগুলোই আবার পড়বেন। সংবিধান সংশোধনী–সম্পর্কিত মামলাগুলো, গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ সম্পর্কে জেনে যাবেন। বিশেষ করে, মামলার ফ্যাক্ট, সিদ্ধান্ত ও বিচারপতির নাম। সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে কী আছে, এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। মূল আইনগুলোর বেসিক ধারাগুলো থেকে করা প্রশ্ন ভুল করা যাবে না।
পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে প্রায়ই ইনহেরিটেন্স–সম্পর্কিত সম্পত্তি বণ্টন করতে বলেন। তাই ইনহেরিটেন্সের ম্যাথগুলো দেখে নেবেন। এ ছাড়া মুসলিম আইনের বিবাহ, দেনমোহর, তালাক, গার্ডিয়ানশিপ ও কাস্টডি, অগ্রক্রয়, দান, উইল, ওয়াকফ–সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখে নেবেন।
সম্পত্তি আইন–সম্পর্কিত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারা (যা প্রিলি ও লিখিতের জন্য পড়েছেন) সেগুলো আবার দেখে নেবেন। বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে বিচারযোগ্য আদালতের নাম, আদালতের বিচারক, আপিল ও রিভিশনের ফোরাম, তামাদির মেয়াদ, গুরুত্বপূর্ণ শাস্তি, মিথ্যা মামলার শাস্তি সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, শিশু আইন, দুর্নীতি দমন–সম্পর্কিত আইনগুলো জোর দিয়ে পড়বেন।
সাধারণ বিষয়ে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার নিজ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহাসিক কোনো স্থান থাকলে সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত, জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল–কলেজ–মাদ্রাসা সম্পর্কে জানতে হবে অবশ্যই। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নিজ জেলা–সম্পর্কিত বইটি পড়তে পারেন অথবা নিজ জেলার ওয়েবসাইটেও জেলা পরিচিতি পাওয়া যায়। নিজের নামের অর্থ এবং নিজের নাম, বাবা-মায়ের নামে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি থাকলে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেবেন।
১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত ঘটনা সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ–সম্পর্কিত যেকোনো বই থেকে পড়ে নিতে হবে। বিশেষ করে, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অবশ্যই স্পষ্ট ও নির্ভুল ধারণা রাখতে হবে। পৃথিবীর বিখ্যাত প্রণালী ও জলাধারাগুলো কোথায় অবস্থিত, কেন তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক চুক্তি বা দলিল, যা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে হবে।