করোনা-পরবর্তী সময়ের জন্য তৈরি হওয়ার এখনই সময়
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর মে ২০২০ সংখ্যা জানাচ্ছে, করোনাভাইরাস–পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক পেশার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ নানা পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে না নিতে পারলে তরুণ পেশাজীবীসহ যাঁরা পেশাজীবনে মধ্যবর্তী সময়ে আছেন তাঁদের একধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। অনিশ্চয়তা আর ভবিষ্যতের কথা গুরুত্ব দিয়েই আগামী সময়ের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে, জলদি।
সামনে নিজেকে বহুমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে
যখন আমরা আসলেই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বা সময় নিয়ে কথা বলি, তখন ভাবতে হবে নানান মাত্রায়। আমরা সামনে যা করব, তা–ই যে সঠিক হবে, তা ভেবে নেওয়াটা ঠিক নয়। ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতা থাকবে। এ ক্ষেত্রে সামনের জন্য নিজেকে তৈরি করতে আমাদের সম্ভাব্য কয়েকটি ক্ষেত্র তৈরি করে রাখার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আপনি যদি মার্কেটিংয়ে কাজ করেন, তাহলে আপনি সেলস কি বা ব্র্যান্ডিং বিষয়ে নতুন কী সুযোগ আসবে সামনে, সেগুলো খোঁজ করা শুরু করুন। কিংবা অতীতের অভিজ্ঞতাকে আরেকটু ভেঙে ভেঙে যেসব ক্ষেত্রে সামনে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে, সে বিষয়গুলোকে একটু গুরুত্ব দিন। নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য নির্দিষ্ট কোন পেশায় আটকে না রেখে অনিশ্চয়তাকে বাস্তবতা ভেবে তৈরি হোন দ্রুত।
কী ধরে রাখবেন আর কী ছেড়ে দেবেন তা বুঝুন
পেশাগত জীবনে নানান সময়ে নানান কারণে পরিবর্তন আসতে পারে। করোনাপরবর্তী সময়ে যদি ক্যারিয়ারের সেই ধরনের পরিবর্তন আসে, এ ক্ষেত্রে কোন কাজটি করতে হবে কিংবা কোন কাজটি ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন, তা আগে থেকে অনুধাবন করা শিখতে হবে। প্রয়োজনে অনলাইন থেকে তথ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সামনে কী হচ্ছে, কী হবে, সে সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বর্তমানের চাকরি বা পেশা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। কী ধরে রাখবেন, কী ছেড়ে দেবেন, তা বুঝতে হবে। কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। হতাশার মধ্য দিয়ে ভুল কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। এমনকি ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং সেইভাবে নিজের পেশাগত জীবনকে রক্ষা করে চলতে হবে। সামান্য সময়ের জন্য হয়তোবা স্থবিরতা দেখা যেতে পারে। সেই সময়ে পরবর্তী সময়ের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। কোনোভাবেই নৈতিক ও মানসিক অবস্থানকে দুর্বল করা চলবে না।
সুযোগ আবিষ্কার ও তৈরি করতে হবে
যাঁরা পেশাজীবনে সফল, সেসব মানুষ সব সময় নিজেকে কোন কাজের জন্য উপযুক্ত এবং ভবিষ্যতে কোন কাজ করবেন, সে কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন কি না, সে বিষয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকেন। এবং সেইভাবে নিজের দক্ষতা ও পেশাদার সম্পর্ক তৈরি করেন। করোনাকালীন নিজেকে নতুন নতুন কাজে সংযুক্ত করার চেষ্টা করুন। অনলাইন নেটওয়ার্কিং সাইট লিংকডইনসহ অন্য পেশাজীবীদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজের দক্ষতাগুলো প্রকাশ করুন। আসছে সময়ের জন্য নতুন কিছু শিখতে পারেন এখনই। আপনি যে পেশায় আছেন সেই পেশারও কিছু টেকনিক্যাল দক্ষতা যদি আরও বাড়াতে পারেন, তাহলে আপনি হয়তোবা সামনে কিছুটা দ্রুত সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কোথায় সুযোগ আছে, তা জানার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি বা কৌশল শেখায় নিজেকে যুক্ত করুন। নতুন কোনো ব্যবসা বা পেশার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন। একটা বিষয় বলা যায়, যেকোনো আপৎকালীন পরিস্থিতির পরে নতুন নতুন কিছু কাজের সুযোগ তৈরি হয়। যাঁরা সুযোগগুলো আগেই গ্রহণ করতে পারেন, তাঁরাই আসলে পরবর্তী সময়ে পেশাজীবনে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারেন।
নিজের সুপ্ত সংযোগ ও সম্পর্কগুলোকে সক্রিয় করুন
আমরা সাধারণত পেশাজীবনে সেই সব সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিই, যা আমাদের খুব কাজে লাগে। অনেক সম্পর্কে দূরের কিছু সম্পর্ককে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিই না। যেহেতু এখন একটি পরিবর্তিত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা, এ সময়ে আপনার নেটওয়ার্কের যে সুপ্ত সংযোগগুলো আছে, যাঁদের সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ নেই বা ভিন্ন কোনো পেশার ব্যক্তি আছেন, তাঁদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কগুলো পুনরায় সক্রিয় করুন। ফোন করতে পারেন, ই–মেইলে যোগাযোগ স্থাপন করুন। আপনার বিপদের কথা, ঝুঁকির কথা তাঁদের সঙ্গে সুযোগ বুঝে জানানোর চেষ্টা করুন। নিজেকে যতটা সম্ভব উন্মুক্তভাবে সেই সব সংযোগ স্থাপন করে তাঁদের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক তৈরি করুন। সংযুক্তির মাধ্যমে আপনি অতীতের কোনো ক্লায়েন্ট বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের সংযোগ তৈরি করুন। সব সময় সংযোগ তৈরির মানসিকতা তৈরি করুন।
ভাবুন, বুঝুন তারপরে কাজে লেগে পড়ুন
যেকোনো সংকটকালীন পরিস্থিতির পরে নতুন সুযোগ নতুন উদ্যোগের সম্ভাবনা তৈরি করে। সংকটকালের মধ্যেই আসলে পেশাজীবীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। উদ্দেশ্যহীনতায় আমাদের যেমন হতাশা তৈরি না হয়, সেদিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। হতাশার কারণে আমরা যেন আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং পেশাদার নৈতিকতা সম্পর্কে দুর্বল হয়ে না পড়ি, তা খেয়াল করুন। চেষ্টা করতে হবে প্রতিটি মুহূর্তে নতুন সুযোগ আবিষ্কারের জন্য ব্যয় করা কিংবা বর্তমানকেই নতুন সুযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
লেখক: মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ