বড় সংস্কারের পথে পিএসসি, বিসিএসে যেসব পরিবর্তন এল, আসছে যেসব
বড় ধরনের সংস্কারের মুখে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় সাড়ে চার মাস অনেকটা স্থবির থাকার পরে এ পর্যন্ত জট লেগে থাকা বিসিএসগুলোর বিষয়ে বড় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ ছাড়া আরও কিছু সংস্কারের পথে আছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এবং কমিশনের সদস্যরা সকাল-সন্ধ্যা অবিরাম কাজ করছি। ভালো কিছুর জন্য আমরা সবাই মিলে কাজ করছি।’
৪৪তম বিসিএস ভাইভা নতুন করে শুরু হচ্ছে, তারিখ প্রকাশ
৪৪তম বিসিএসে আগের মৌখিক পরীক্ষা বাদ দিয়ে নতুন করে এই ভাইভা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার সরকারি কর্ম কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। ভাইভা শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর থেকে। ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষা-২০২১–এর লিখিত পরীক্ষায় সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে শুধু কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের পদগুলোর মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে। www.bpsc.gov.bd তে সূচি মিলবে।
৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৯৩০ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এরপর গত ২৫ আগস্ট এই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে ৮ অক্টোবর তৎকালীন কমিশন পদত্যাগ করে। আগের কমিশনের নেওয়া ৪৪তম বিসিএসের ৩ হাজার ৯৩০ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এখন এই বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থী অর্থাৎ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নতুন কমিশন।
৪৪তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।
৪৫তম বিসিএসে সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষক পাবে
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষককে দেবে পিএসসি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি জানায়, ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলমান এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে নতুন কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
পিএসসি সূত্র জানায়, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তা প্রথম পরীক্ষকদের দেখার জন্য দেওয়া হয়। এরপর প্রথম পরীক্ষকেরা সেই খাতা জমা দিলে দ্বিতীয় পরীক্ষক খাতা দেখেন। এই দুই খাতার মধ্যে ২০ শতাংশ বা এর অধিক নম্বরের পার্থক্য থাকলে তা নিয়ম অনুসারে তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে দেখিয়ে চূড়ান্ত করা হয়।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। গত বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। লিখিত পরীক্ষা এ বছরের ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আবেদনকারী ৩ লাখ ৪৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন। পরীক্ষা দেননি ৭৮ হাজার ৮০৩ জন। উপস্থিতির হার ৭৭ দশমিক ২৪।
৪৫তম বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন। ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়, সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জন। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪ এবং প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
৪৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ পেলেন ১০৭৫৯ প্রার্থী
৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফল আবার নতুন করে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ২১ হাজার ৩৯৭ জন। আগের ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীর সঙ্গে নতুন করে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ পেলেন ১০ হাজার ৭৫৯ জন প্রার্থী। এ–সংক্রান্ত পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা এবং ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ২১ হাজার ৩৯৭ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য সাময়িকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
সাময়িকভাবে যোগ্য কোনো প্রার্থীর নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ডকুমেন্টস/সনদ/প্রত্যয়ন উপস্থাপন না করলে বা প্রতারণার আশ্রয় নিলে, কোনো ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে বা প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন করলে বা কোনো জাল সার্টিফিকেট উপস্থাপন করলে বা বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা–সংক্রান্ত সার্টিফিকেটের কোনো অংশ টেম্পারিং বা পরিবর্তন করলে এবং আবেদনপত্রে গুরুতর কোনো ত্রুটি বা ঘাটতি পাওয়া গেলে লিখিত পরীক্ষার পূর্বে বা পরে যেকোনো পর্যায়ে বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হবে।
৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট তারিখ ও সময়সূচি পরবর্তী সময়ে কমিশনের ওয়েবসাইটে ও প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ৯ মে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে ১০ হাজার ৬৩৮ প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে আরও ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফল ঘোষণা করা হলো। আগের ও বর্তমানের মিলে মোট ২১ হাজার ৩৯৭ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাক পেলেন।
ভাইভায় নম্বর কমছে
বিসিএসে প্রিলিমিনারির পরে লিখিত, এরপরে হয় মৌখিক পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হয়। পিএসসি চায় এ নম্বর ১০০ করতে। সে ক্ষেত্রে বিসিএসের মোট ১১০০ নম্বরের পরিবর্তে নম্বর হবে ১০০০। পিএসসির পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, এ প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে, ৪৪তম বিসিএস থেকেই এটি কার্যকর হবে।
আবেদন ফি কমানোর উদ্যোগ
৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি অর্ধেক করার পিএসসির প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় । গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হছে, আবেদন ফি ৭০০ টাকার অর্ধেক (৩৫০) করা যায়। এরপর গতকাল ধবার সচিব কমিটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি ২০০ টাকা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন শিগগিরই জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন, জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মানসুর হোসেন।
এ বিসিএসে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭, আর নন–ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। অনলাইনে আবেদন শুরু হবে ১০ ডিসেম্বরে, শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে।
চাকরির বয়স ৩২-এর মধ্যে যতবারই ইচ্ছা ততবার বিসিএস
একজন চাকরিপ্রার্থীর আবেদনের বয়স থাকা পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে পিএসসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব অনুমোদিত হলে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত যতবার সুযোগ থাকবে ততবার বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বয়স ৩২ পর্যন্ত একজন প্রার্থী চারবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে প্রার্থীদের চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুযোগ দিতে চায় পিএসসি। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ চারবার অংশ নিতে পারবেন। এর আগে ২৪ অক্টোবরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস দেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার হয়। এরপরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, একজন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ চারবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।