লাখ ডলারের চাকরি ছেড়ে কেন ৩০ হাজারে চাকরিতে গেলেন ভ্যালেরি ভ্যালকোর্ট

নিজের পছন্দের কাজে ভ্যালেরি ভ্যালকোর্টছবি: সংগৃহীত

বয়স ৩৪। আমেরিকায় কাজ করে বেতন পেতেন ছয় অঙ্কের (সিক্স ডিজিট)। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগপ্রতিষ্ঠানে কাজে পেতেন এ বেতন। কিন্তু সেই চাকরি ছেড়ে ফ্রান্সে গিয়ে ৩০ হাজারে চাকরি করছেন। তার নাম ভ্যালেরি ভ্যালকোর্ট। কর্মজীবনের শুরুর দিকে গুগল, অ্যামাজনসহ বিশ্বের বড় কয়েকটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে কাটিয়েছেন। কিন্তু বয়স ৩০ কোটায় যেতেই চাকরি ছেড়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণের পথে হেঁটেছেন। বেছে নিয়েছেন স্বপ্নের ক্যারিয়ার। ২০২২ সালের শেষের দিকে ভ্যালকোর্ট যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ফ্রান্সে।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসির ‘মানি সিরিজের’ অংশ হিসেবে ভ্যালেরি ভ্যালকোর্টকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। এই সিরিজে গণমাধ্যমটি দেখানোর চেষ্টা করে যে মানুষ কীভাবে চাকরি করে অর্থ আয় করে, সে অর্থ ব্যয় করে ও জমায়।

আরও পড়ুন

ভ্যালেরি ভ্যালকোর্ট পড়াশোনা শেষে অন্য অনেকের মতো কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে গুগল, অ্যামাজনসহ বিশ্বের বড় কয়েকটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে কাজ করেছেন। কিন্তু মন টেকেনি তাঁর ওসব কাজে। বেছে নিয়েছেন ছোটবেলার স্বপ্নের ক্যারিয়ারে। ২০২২ সালের শেষের দিকে ভ্যালকোর্ট যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ফ্রান্সে। সেখানে প্যাস্টি বানানোর কাজ করছেন তিনি। আর এ কাজেই নাকি তাঁর আনন্দ। এ আনন্দের পথে যেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

ভ্যালকোর্ট এখন ফ্রান্সের মাইসন চ্যাবার্ন নামের একটি রেস্তোরাঁয় প্যাস্ট্রি সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। রেস্তোরাঁটি ইস্টার্ন ফ্রান্সের টোর্নন-সার-রোনে গ্রামে। ফ্রান্সে প্যাস্ট্রি কর্মী হতে গিয়ে লাখো ডলারের মাইনে ছেড়ে এসেছেন তিনি। ভেলোকার্ট আমেরিকার সিয়াটলে ‘পে-চেক’ নামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অংশীদার ছিলেন। বছরে পেতেন ১ লাখের বেশি ডলার। তিনি বলেছেন ‘পে-চেক আমার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ছিল।’

আরও পড়ুন

ক্যারিয়ার বদলে চলে আসেন ফ্রান্সে। এই পরিবর্তন তাঁর জীবনকে আরও ভালো করেছে। ভ্যালকোর্ট প্রথম বছরে ইন্টার্ন হিসেবে প্রায় ২২ হাজার ডলার আয় করেন। তিনি এখন প্রতিবছর ৩০ হাজার আয় করেন ফুলটাইম কাজ করে। আর ফ্রান্সের গ্রামেই থাকেন তিনি। লাখো ডলার ছেড়ে এসে গ্রামে থেকে ৩৪ বছর বয়সী ভ্যালেরি ভ্যালকোর্ট বলছেন, ‘আমি এখন পেস্ট্রি শেফ। আমেরিকার চেয়ে এখানে (ফ্রান্সে) আমি অনেক সুখী।’

ভ্যালেরি ভ্যালকোর্ট কাজে মগ্ন
ছবি: সংগৃহীত

হাইস্কুলে হোম ইকোনমিকসের ক্লাসে রান্নার দক্ষতা পরীক্ষা হতো। তখন থেকেই ভ্যালকোর্ট প্যাস্ট্রি বানানোর কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন বুনে বড় হতে থাকা ভ্যালকোর্ট করপোরেট আর প্রযুক্তি খাতে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু মার্কিন মুলুকে মন বসছিল না। এরই মধ্য নিয়মিত অনলাইনে খুঁজতে থাকেন নিজের মনের মতো চাকরি। পেয়ে যান প্যারিসের প্যাস্ট্রি স্কুলের খোঁজ। করে ফেলেন আবেদন, তখনই সিদ্ধান্ত নেন লাখো ডলারের চাকরি ছেড়ে দেবেন। সে সময় নানা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। শেখার জন্য প্রশিক্ষণের ওই স্কুলে পে করতে হবে তাঁকে। আর প্রশিক্ষণের এ সময়ে চাকরি না থাকায় বেতন পাবেন না। চলার অর্থ পকেটে রাখতে হবে। এমন নানান ভাবনা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান তিনি। আবার ভাবতে থাকেন জীবন এত বড় পরিবর্তনের জন্য সেরা মানসিক অবস্থায় ছিলেন না তিনি। বলছেন, ‘আমার তাড়াহুড়ো করার শক্তি ছিল না। তাঁর তহবিলের সংকট ছিল। আমার কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।’ সিয়াটল ছেড়ে কানেকটিকাটে যান পরিবারের সঙ্গে। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী সহকারীর চাকরি নেন। সঞ্চয় শুরু করেন।

ভ্যালকোর্ট গ্যাস্ট্রোনোমিকন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পান। তাদের তিন মাসের কোর্সে আবাসন, ভাষার ক্লাস অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপরই এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মিশেলিন নামের একটি রেস্তোরাঁয় চার মাসের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সে চলে যান। প্যাস্ট্রি স্কুলে তিন মাসের খরচ ছিল ২৫ হাজার ডলার। তার কাছে ছিল ১০ হাজার ৭১৬ ডলার। এর সঙ্গে আরও ১ হাজার ৯২৯ ডলার প্রয়োজন আবাসনের জন্য। সেটিও সংগ্রহ করে ফেলেন।

ভ্যালকোর্ট তাঁর প্যাস্ট্রি ক্লাস পছন্দ করতেন, ‘এটি আমার কাছে সবচেয়ে মজার ছিল। আর দ্রুত বিশ্বজুড়ে বন্ধু তৈরি হচ্ছিল।’ তিনি মূলত সাত মাসের জন্য ফ্রান্সে থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ইন্টার্নশিপের সময় বাড়ানো হয়।

প্যাস্ট্রি সহকারী হিসেবে তাঁর দিন কাটছে ভালোই। এই জীবনে অনেক আনন্দিত তিনি। ভেলোকোর্ট প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০ ঘণ্টা কাজ করেন। প্রতিবছরে পাঁচ সপ্তাহের জন্য ছুটি পান। ছুটির সময়ে পান বেতনও। নিজের পছন্দমতো কাজ বেছে নিতে পারার চ্যালেঞ্জটা ভালোভাবেই উতরে গেছে এই ফরাসি তরুণী। আগের চেয়ে বেতন বা আয় কম হলেও তিনি এতেই খুশি।

আরও পড়ুন