২০১৩ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় ভর্তি হন ফয়সাল আহমেদ। স্নাতক শেষ করতেই যায় প্রায় ছয় বছর। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেশন জটের কারণে স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের জুলাইয়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করতেই ফয়সালের সনদ অনুযায়ী বয়স হয় ২৭ বছর ৫ মাস। সরকারি চাকরির জন্য সময় পান মাত্র আড়াই বছর। আগে থেকে চাকরির জন্য কিছুটা প্রস্তুতি থাকায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি পান। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে এবার ১৭তম হয়েছেন ফয়সাল আহমেদ।
ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘সেশন জটের কারণে অনেক সময় চলে যায়। সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য কম সময় পাওয়ায় হতাশ হয়েছিলাম। স্নাতকোত্তরে পড়া অবস্থাতেই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অফিসার পদে দশম গ্রেডের চাকরিটা দ্রুত পেয়ে চাই। নবম গ্রেডের চাকরির স্বপ্ন ছিল। তাই ব্যাংকে চাকরি করার পাশাপাশি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি চালিয়ে যাই।’
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লোন শাখায় অফিসার পদে কর্মরত ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অফিস শেষ করতে রাত হয়ে যেত। শুক্র ও শনিবারও অফিস করা লাগত। অফিস শেষে বাসায় যেতে ৮টা বাজত। খুব ক্লান্ত লাগত। তাই ৮টায়ই ঘুমিয়ে পড়তাম। এরপর রাত ১২টার দিকে উঠে চাকরির পড়া শুরু করতাম। ভোর পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম। এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে এডি পদের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
২০২২ সালের এডি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন ফয়সাল আহমেদ।
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণ বের করার চেষ্টা করেন। ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘গণিত আমার সব সময় শক্তির জায়গা। সাধারণ জ্ঞানে দুর্বলতা থাকার কারণে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, যা পরীক্ষার সময় কাজে দিয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে প্রথম আলো পেপার কাটিং সংরক্ষণ করতাম নিয়মিত, যা ফোকাসে রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।’
ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান চাকরি এবং নবম গ্রেডের চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে পরিবার, পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখতে পারিনি। চাকরি করে সময় যেহেতু অনেক কম পেতাম, সাধারণ জ্ঞানের মতো যেসব বিষয় মনে রাখতে কষ্ট হতো সেগুলো ফোনে ছবি তুলে রাখতাম। সুযোগ পেলে চেষ্টা করতাম চোখ বোলাতে।’
ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু আমার পোস্টিং ছিল ঢাকায়। এমনও দিন গেছে, শুক্র ও শনিবার বেলা ৩টায় পরীক্ষা আছে; কিন্তু আমি ব্যাংকে কাজ করেছি দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। একবার দেরিতে অফিস থেকে বের হওয়ার কারণে পরীক্ষাও মিস করতে হয়েছে। চেষ্টা করে গেছি আমার চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে যেন ব্যাংকের কাজের ব্যাঘাত না ঘটে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে তিনটি ধাপে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। ধাপগুলো হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক। এই তিন ধাপের মধ্যে সব কটিই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এডি পদে দেশসেরা মেধাবীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে কে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় সময়টুকু কে কতটুকু কাজে লাগাতে পারেন। ওই দুই ঘণ্টায় মনোযোগ ধরে রেখে যে ভালো করবেন, তারই টেকার সম্ভাবনা থাকে।’
এডি পদে লিখিত পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘গণিত ও সাধারণ জ্ঞান ভালো হয়েছিল। কত নম্বর পাব, তা নিশ্চিত ছিলাম। এ জন্য ফলাফলের আগে মনে হতো চাকরি হলে মেরিট পজিশনে ৫০-এর মধ্যে থাকবে। শেষ পর্যন্ত মেধাক্রম এসেছে ১৭তম।’