চাকরির বাজারে স্বস্তি চান চাকরিপ্রার্থীরা
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরে চাকরির বাজারে স্বস্তি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। নতুন করে চাকরির বিজ্ঞপ্তি যেমন আসবে, তেমনি স্থগিত হওয়া চাকরির পরীক্ষাগুলো আবার শুরু হবে, এই প্রত্যাশা তাঁদের। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে যত শূন্য পদ আছে, সব দ্রুত পূরণ করার দাবি তাঁদের।
চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে গত এক মাসে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এই সময়ে নতুন চাকরির বিজ্ঞাপনও কম এসেছে। আবার যেগুলোর ফল এই সময়ের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোও হয়নি। সব মিলে চাকরির বাজারও অস্থির ছিল। চাকরিপ্রার্থীরাও দেশের এই অস্থিরতায় পড়াশোনায় মন বসাতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শফিক আহমেদ বলেন, ‘গত এক মাসে আমাদের অনেকগুলো পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। বিসিএসের ভাইভাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার লিখিত ও ভাইভা স্থগিত হয়েছে। সত্যি বলতে, আমাদের মন এতটাই অস্থির ছিল, চাকরির পড়াতেও মন বসাতে পারিনি।’ এখন আবার দেশের অবস্থা ভালো হবে এই প্রত্যাশা করে শফিক বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরে আবার নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসুক। স্থগিত পরীক্ষাগুলো শুরু হোক। তাহলে আমাদের মনে আশা সঞ্চার হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য ভালো কিছু করবে অন্তর্বর্তী সরকার।’
৪৪তম বিসিএসের ভাইভাপ্রার্থী একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। এখন বেশ কিছু চাকরির পরীক্ষার পাশাপাশি বিসিএসও দিচ্ছেন। গত মাসে তাঁর ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পিএসসি সেই পরীক্ষা পিছিয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা পিছিয়েছে, এটা আমাদের কারও জন্যই ভালো হয়নি। কেননা একটি পরীক্ষা পেছালে প্রস্তুতিতে নানা সমস্যা হয়। আবার চূড়ান্ত ফল প্রকাশেও দেরি হয়। তবে এখন যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তাই পিএসসির কাছে আবেদন, দ্রুত আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করুক। আমরা সবকিছু ভালো মতো চলুক, এমন প্রত্যাশাই করি।’
দেশের অস্থিরতায় চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার পরিবেশ ছিল না উল্লেখ করে চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল কোটার সংস্কার। সেটি হয়েছে তা–ও আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। গত এক মাস আমাদের চাকরির পড়াশোনা সেভাবে হয়নি। অস্থিরতায় পড়ালেখা করা যায় না। মনের অবস্থাও ভালো ছিল না। এখন আবার আমাদের পড়াশোনায় ফিরতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে আমাদের লাইব্রেরিগুলোয় পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি কর্তৃপক্ষের কাছে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে যত শূন্য পদ আছে সব দ্রুত পূরণ করে বেকারদের হার কমানো উচিত। এ জন্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর বলেন, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবি থেকেই বাংলাদেশে আজ এত বড় পরিবর্তন ঘটে গেল। শিক্ষার্থীরা মেধার মূল্যায়ন চান। কিন্তু একই সঙ্গে লক্ষণীয়, যেসব চাকরিতে কোটা নেই, সেখানেও কি যথাযথ মেধার মূল্যায়ন হয়? যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি সরকারের আমলেই একাডেমিক ফলাফলের চেয়ে দলীয় পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশে একটি নির্দলীয় সরকার আছে। চাকরির বাজারে তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি। একই সঙ্গে নিয়োগদাতাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ... সরকারি চাকরিতে দেশে এখন অসংখ্য শূন্য পদ রয়েছে।
এসব শূন্য পদ একসঙ্গে পূরণের চেষ্টা করলে প্রকৃত মেধাবীদের পাওয়া যাবে না। কারণ, প্রতিবছরই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে হাজার হাজার তরুণ চাকরির বাজারে আসছে। তাড়াহুড়া না করে ধাপে ধাপে তাঁদের মধ্য থেকে নিয়োগদান করে শূন্য পদ কমাতে হবে। তবে সবচেয়ে জরুরি, সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করা বা বিকল্প কাজের পথ দেখানো। আর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য আগ্রহী তরুণদের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া, যেখানে ঋণসহায়তার ব্যাপারটি গুরুত্ব পাবে।
স্থগিত হওয়া কিছু পরীক্ষা
পিএসসি ক্যাডার নন–ক্যাডার ও বিভাগীয় বিভিন্ন চলমান বিভিন্ন পরীক্ষা স্থগিত করেছিল। এ ছাড়া দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ১৬তম গ্রেডভুক্ত ‘ফর্ক লিফট অপারেটর (পুরুষ)’ ও ২০তম গ্রেডভুক্ত ‘পাচক (পুরুষ)’ পদে অনুষ্ঠেয় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ফর্ক লিফট অপারেটর (পুরুষ) ও পাচক (পুরুষ) পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১০ আগস্ট অনুষ্ঠেয় নিয়োগ পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।
জনতা ব্যাংক পিএলসির ২০২১ সাল-ভিত্তিক দশম গ্রেডের অফিসার (রুরাল ক্রেডিট/আরসি) পদের এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত জনতা ব্যাংক পিএলসির অফিসারের (রুরাল ক্রেডিট)/(আরসি) ৩৫১টি শূন্য পদের লিখিত পরীক্ষা ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছে।