‘রূপালী ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও আর কত দিন বেকার থাকব আমরা’
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সমন্বিত ৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (সাধারণ) পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংক একটি। অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রার্থীদের নিয়োগ দিলেও রূপালী ব্যাংকে যাঁরা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁরা গত ১১ মাসেও নিয়োগপত্র পাননি। এ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। সুপারিশপ্রাপ্ত একজন নিজের কথা জানিয়েছেন। তা হলো—
সুপারিশ পাওয়া আমাদের ৪৭০ প্রার্থীকে কবে নিয়োগ দেবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে বলছে না ব্যাংকটি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ার অজুহাতে ১১ মাস ধরে নিয়োগ দিচ্ছে না, যেখানে পুলিশ ভেরিফিকেশন দুই মাসে শেষ করা সম্ভব। এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অন্য ব্যাংকের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। অথচ একই পরীক্ষায় পাস করেও আজ আমরা সুপারিশপ্রাপ্ত বেকার। এ ছাড়া ২০১৮ সালভিত্তিক অফিসার পদে নিয়োগে বিএসসি রূপালী ব্যাংককে বাদ দিয়ে দুবার অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করেছে (প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করে ২৪ জুলাই ২০২৩ এবং দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। অন্যান্য ব্যাংক তাদের অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদেরও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করেছে। কিন্তু আমরা মেধাতালিকায় থেকেও নিয়োগ পাচ্ছি না।
শুধু রূপালী ব্যাংক নয়, অন্য আরও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন করে। সেসব প্রতিষ্ঠান পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০১৮ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ সাত থেকে আট মাসের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করেছে, তাহলে রূপালী ব্যাংক কেন ১১ মাসেও নিয়োগ দিতে পারবে না।
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা অন্য চাকরি ছেড়ে এ মুহূর্তে বেকার। রূপালী ব্যাংকে অফিসার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর সমান গ্রেডের অন্য কোথাও ভাইভা দেননি বা পরীক্ষা দেননি অথচ সেগুলোর নিয়োগও ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। যেমন আমি রূপালী ব্যাংকে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর অফিসার-২০১৯ ভাইভাতে অংশগ্রহণ করিনি। অথচ অফিসার ২০১৯ ব্যাচের চূড়ান্ত ফল হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে তিনটি ব্যাংক যোগদানের তারিখ প্রকাশ করেছে।
একটি নিয়োগপত্রের জন্য আমরা ৪৭০টি পরিবার অসহনীয় কষ্টে জীবনযাপন করছি। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আমাদের নিয়ে যেন কোনো ভাবনা নেই। আমরা সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। অনেকে আমাদের ভুয়া ভাবছে। নিয়োগপত্র হাতে না পাওয়ায় চাকরি পাওয়ার প্রমাণ দিতে পারছি না। চাকরি পেয়েও অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।
নিয়োগপত্রের খবর নিতে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গেলে আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। অথচ এত দিনে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানেরই কর্মী হওয়ার কথা ছিল। অনেক অনুরোধের পর আমাদের দু-একজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ নিয়োগের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দেয়নি। ১১ মাসেও আমরা পরিবারকে বলতে পারছি না কবে নিয়োগ হবে। অনেকের চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় রূপালী ব্যাংকে হওয়া চাকরিটাই শেষ ভরসা। আমাদের অনেক লম্বা সময় বেকার জীবনের অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। একমাত্র রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাই পারে এই দুর্দশা লাঘব করতে।