চিকিৎসক নিয়োগের জন্য সর্বশেষ বিশেষ যে দুটি বিসিএস অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা কিছুটা এগিয়ে আছেন। তবে নারী-পুরুষের পার্থক্য খুব বেশি নেই। সর্বশেষ ৩৯তম বিশেষ বিসিএস ও ৪২তম বিশেষ বিসিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেখা গেছে। এ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছেও হস্তান্তর করেছে পিএসসি।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ৬ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এতে পুরুষ চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন ৩ হাজার ৬০০, আর নারী চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন ৩ হাজার ১৯২ জন। এতে পুরুষ চিকিৎসক নিয়োগের হার ৫৩ ও নারী চিকিৎসক নিয়োগের হার ৪৭। অর্থাৎ পুরুষ প্রার্থীরা নারীদের তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ এগিয়ে।
৩৯তম বিশেষ বিসিএসে পিএসসি থেকে প্রথমে ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ওই বিসিএসে উত্তীর্ণ ৮ হাজার ৩৬০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সুপারিশ পাওয়ার পর অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয় সরকার।
আবার সর্বশেষ ৪২তম বিশেষ বিসিএসে চিকিৎসকদের নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। এতে মোট চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। এই বিসিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখানে পুরুষ চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯ আর নারী চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন ১ হাজার ৯৬১ জন। পুরুষের তুলনায় ৭৮ জন নারী কম নিয়োগ পেয়েছেন। শতকরা হারে পুরুষ ৫০ দশমিক ৫৮ ও নারী ৪৯। এতে নারী-পুরুষের সমতাই লক্ষ করা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রথমে ৪২তম বিসিএস থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কথা থাকলেও সরকারের বিশেষ ক্ষমতায় এখান থেকে আরও দুই হাজার, অর্থাৎ মোট চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। করোনার প্রেক্ষাপটে দুই হাজার চিকিৎসককে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিতে ৪২তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় (লিখিত টাইপ) ৩১ হাজার প্রার্থী অংশ নেন। পরীক্ষার এক মাসের মধ্যেই এই বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে উত্তীর্ণ হন ৬ হাজার ২২ জন।
পিএসসির সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, আগে মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সিট ছিল ১০০টি। পরে ২০০টি করা হলো। এভাবে নারীদের সিট বেড়েছে। নারীরাও চিকিৎসা পেশায় আসতে শুরু করলেন। গ্রামেও মেয়েরা পড়াশোনায় এগিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারও নারীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। নারীরাও তা কাজে লাগাচ্ছেন এবং মেধার প্রমাণ দিচ্ছেন। বিশেষ বিসিএসেও এর প্রভাব পড়ছে। মর্যাদা ও ক্ষমতায় এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। পরিবারগুলো নারীদের বিসিএসে চাকরি করতে জোড় দিচ্ছে এবং সহযোগিতা করছে। আগে এ পেশায় আসতে অনেকে নিরুৎসাহিত করত আর এখন সহযোগিতা করে। এটি দারুণ ইতিবাচক দিক। চিকিৎসা পেশায় নারীদের আসার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সারা দেশে। তাঁদের দেখাদেখি অন্য নারীরাও এই পেশায় আসতে উৎসাহিত হচ্ছেন।