ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, মেডিকেল অফিসার, প্রোগ্রাম অফিসারসহ ১৭ ক্যাটাগরির পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। সে সময় যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের পরীক্ষা না নিয়ে আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পদসংখ্যা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ২১ ক্যাটাগরির পদের বিপরীতে আবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে তাঁদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাঁরা ২০১৮ সালের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের নতুন করে আবেদন করতে হবে না। তাই যাঁরা ২০১৮ সালে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা আবেদনের পাঁচ বছর পর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার প্রবেশপত্র পান। সে সময় যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অনেকের চাকরির বয়স শেষ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ২১ ক্যাটাগরির পদের মধ্যে দুটি ধাপ করা হয়। প্রথম ধাপে ৯টি ক্যাটাগরির ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম গ্রেডের পদে আবেদনকারী প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০২৩ সালের ৬ মে। পরীক্ষা দেন ২২ হাজারের বেশি প্রার্থী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় ২৫ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত। এরপর ১৫ জুন ৯ ক্যাটাগরির পদে ৪৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এখনো তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
উপপরিচালক পদে ১২ জন, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ৫, মেডিকেল অফিসার ৭, সহকারী পরিচালক ১৪, স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক কাম মেডিকেল অফিসার একজন, সমাজবিজ্ঞান প্রশিক্ষক (পশুপাখি পালন ও মৎস্য চাষ) একজন, প্রোগ্রাম অফিসার ৪, রিসার্চ অফিসার একজন, সহকারী সম্পাদক একজনসহ মোট ৪৬ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপারিশ পাওয়া একজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্বের গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছি। অর্থাভাবে বর্তমান উচ্চ মূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরও নিয়োগপত্র দিচ্ছে না ইসলামিক ফাউন্ডেশন। নিয়োগ হবে কি না এটা নিয়ে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।’
সুপারিশ পাওয়া আরেক প্রার্থী বলেন, ‘এ বছর নিয়োগ দিলে বিধি অনুযায়ী ছয় মাসের অধিক সময় চাকরিকালের জন্য আগামী জুলাই মাসে আমরা সবাই একটা ইনক্রিমেন্ট পেতাম। আর জানুয়ারি বা এর পরে নিয়োগ দিলে শুধু একটা ইনক্রিমেন্ট বঞ্চিত হওয়ার কারণে সারা জীবনে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা জনপ্রতি। এ কারণে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ পেলে সবাই উপকৃত হতাম। এ ছাড়া প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। চূড়ান্ত সুপারিশের ছয় মাস চলছে। আমার মতো অনেক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী এখনো বেকার। চরম অর্থকষ্টে জীবন পার করছি।’
দ্রুত নিয়োগ পেতে নবম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা গত ২২ নভেম্বর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান মো. ফরিদুল হক খানের সঙ্গে দেখা করে লিখিত আবেদনপত্র দেন। আবেদনপত্রে বলা হয়, ‘২০১৮ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত নিয়োগপ্রত্যাশীরা হতাশায় দিন পার করছি। অনেকের সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়েছে। এই চাকরির আশায় অর্থকষ্টে বেকার জীবন যাপন করছি। কিন্তু আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। অনেককেই মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বর্তমানে যাঁরা সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত, মামলার কারণে তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন নতুনদের সরাসরি উপপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিলে তাঁরা সিনিয়র হবেন। আর আগে থেকে যাঁরা আছেন, তাঁরা জুনিয়র হবেন। তবে আগামী জানুয়ারি মাসে নিয়োগ দিলে এ সমস্যা হবে না। তাঁদের নিয়োগের পর আগামী বছরের ডিসেম্বরেও যদি আগে থেকে কর্মরতরা পদোন্নতি পান তাহলেও তাঁরা সিনিয়র থাকবেন। এ ছাড়া প্রার্থীদের গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও একটু ঝামেলা ছিল। আমরা এ মাসে সব প্রার্থীর গোয়েন্দা প্রতিবেদন পেয়েছি। আশা করি, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নিয়োগ দিতে পারব।’