চাকরির জন্য মা না হওয়ার শর্ত বাতিল করল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্তটি অবশেষে বাতিল করেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানিয়েছে অধিদপ্তরটি।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলির ক্রমিক ৭–এ উল্লেখিত ‘চূড়ান্তভাবে কৃতকার্য প্রশিক্ষণার্থীগণকে যোগদানের পূর্বে সিভিল সার্জন কর্তৃক গর্ভবতী নয় মর্মে সনদপত্র দাখিল করতে হবে (গর্ভবতী হলে তাঁর মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে)’ শর্তটি বাতিল করা হলো।
এ পদের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত যেহেতু নিয়োগের সময় অন্তঃসত্ত্বা থাকা যাবে না, তাই চাকরির আশায় নারী প্রার্থীরা গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় যেতে পারছেন না। এ নিয়ে গত ৮ অক্টোবর ‘চূড়ান্ত ফল হয়নি, চাকরির শর্তে মা হতে পারছেন না প্রার্থীরা’ শিরোনামে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিয়োগের সময় অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্তটি বাতিল করা হয়েছে। শর্তটি বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ পদে শুধু নারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ ছিল, যাঁদের নিয়োগের পর ১৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠপর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, প্রজননস্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, সাধারণ রোগীসহ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা।
১ হাজার ৮০টি পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদটি শুধু নারীদের জন্য। ৭ হাজার ৬২১ জন নারী প্রার্থী চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষায়, যাঁদের অধিকাংশই বিবাহিত।
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ তিন বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে মোট ৪৬টি জেলায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬২১ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষা নিয়ে আগের নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর নতুন নিয়োগ কমিটি গঠন করে গত ২২ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ৫টি ভাইভা বোর্ডের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েক মাস চলে গেলেও এখনো চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে না।