বিসিএস বাণিজ্য ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা

বর্তমানে চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)। সিভিল সার্ভিসের সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত–২ ক্যাটাগরিতে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব ও কাজ, পদায়ন ও প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করা হচ্ছে চাকরি-বাকরি পাতায়। আজ সপ্তম পর্বে থাকছে বিসিএস বাণিজ্য ক্যাডারের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএসের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদোন্নতি ও বদলি করার ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।

পদায়ন ও দায়িত্ব—

নবম গ্রেডে সহকারী আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অথবা আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক/যুগ্ম নিয়ন্ত্রক/উপনিয়ন্ত্রক/সহকারী নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন হতে পারে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, কুমিল্লা, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় পদায়ন হতে পারে। এ ছাড়া দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবেও পদায়ন হতে পারে।

আরও পড়ুন

আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৫০–এর অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কর্তৃক প্রণীত ও আদেশ হিসেবে জারিকৃত আমদানি নীতি আদেশ আইনগতভাবে বাস্তবায়ন, আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কাজে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা, নিবন্ধন ও নবায়ন ফি আদায় তদারকি করা, পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মেলা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পারমিট জারিকরণ, আমদানি ব্যয় এবং রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যানসংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ। বিসিএস বাণিজ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রধান এসব কাজ করতে হয়।

সহকারী নিয়ন্ত্রক থেকে পদোন্নতির পর উপনিয়ন্ত্রক, যুগ্ম নিয়ন্ত্রক, নিয়ন্ত্রক ও অতিরিক্ত প্রধান নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতি হতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব প্রধান নিয়ন্ত্রক পদে প্রেষণে নিযুক্ত আছেন। এই ক্যাডারে বর্তমানে প্রায় ২০ জন কর্মকর্তা কর্মরত। জনবল ঘাটতিতে প্রেষণ থেকে ক্যাডারের অন্য পদগুলো পূরণ করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ—

যোগদানের পর বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ৬ মাস মেয়াদি বনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তবে অফিস ব্যবস্থাপনা, ই-ফাইলিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রকিউরমেন্ট, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অন্য ক্যাডারের মতো সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে।

বেতন ও ভাতা—

সরকারি বেতন স্কেল–২০১৫ অনুসারে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২,০০০ টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩,১০০। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০%, অন্যান্য বিভাগে ৪৫%, ঢাকা বিভাগে ৫০%), ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষাসহায়ক ভাতা, ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন

সুযোগ-সুবিধা—

বাকি ২৫ ক্যাডারের মতো ২৫% ডিএস পুল কোটায় সরকারের উপসচিব হওয়ার সুযোগ আছে। কর্মকর্তার সংখ্যা খুব কম থাকায় প্রায় সবাই প্রশাসন ক্যাডারের একই ব্যাচের সঙ্গে ডিএস পুলে উপসচিব হয়ে থাকেন। ওপরের বিসিএসগুলোতে নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় পদোন্নতি দ্রুত হয়। নিয়ন্ত্রক ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা গাড়ি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি কোয়ার্টারে আবাসন সুবিধা আছে। কাজের চাপ মোটামুটি। পর্যাপ্ত দপ্তর না থাকায় নিজ জেলায় পদায়নের সুযোগ নেই। বাণিজ্য ক্যাডার থেকে এখনো প্রধান নিয়ন্ত্রক পদায়ন দেওয়া হয়নি।