তিন বিসিএসের ভাইভা নিয়ে যে বার্তা পিএসসির
চলতি বছরে তিন বিসিএসের ভাইভা শেষ করতে চায় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এসব বিসিএস হচ্ছে—৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএস। বর্তমানে ৪১তম বিসিএসের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। এটি শেষ করার পাশাপাশি বাকি দুই বিসিএসের কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে কাজ করছে পিএসসি। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির কর্মকর্তারা বলেন, চলমান তিনটি বিসিএস একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলছে। তিনটি বিসিএসের ভাইভা কার্যক্রম শেষ করাই এখন পিএসসির অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরই তিনটির কার্যক্রম শেষ করা যাবে।
৪১তম বিসিএসের ভাইভা চলমান
পিএসসি সূত্র বলেছে, বর্তমানে ৪১তম বিসিএসের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রতিদিন যেভাবে ভাইভা নেওয়া হচ্ছে, তাতে এই বিসিএসের ভাইভা শেষ করতে ৮৭ কর্মদিবস প্রয়োজন। বেশ কিছু প্রার্থীর ভাইভা শেষ করে অন্য প্রার্থীদের ভাইভা নেওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পিএসসি। এই বিসিএসে পরীক্ষকদের ভুলে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখতে দেরি হওয়ার পর, তা শোধরাতে পিএসসি নানা উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে আর যাতে দেরি না হয়, সেদিকে পিএসসির বিশেষ নজর আছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
ওই সূত্র আরও জানায়, ৪১তম বিসিএস শেষ করা পিএসসির সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি।
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এই বিসিএসে ২১ হাজার ৫৬ জন উত্তীর্ণ হন। তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের ১০ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে ১৩ হাজার জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই প্রার্থীদের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই বিসিএসে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। এই ক্যাডারে ৯১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে বিসিএস শিক্ষায় ৯০৫ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বিভাগে ১০ জন প্রভাষক নেওয়া হবে। শিক্ষার পর বেশি নিয়োগ হবে প্রশাসন ক্যাডারে। প্রশাসনে ৩২৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পুলিশে ১০০ জন, বিসিএস স্বাস্থ্যে সহকারী সার্জন ১১০ ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন ৩০ জন নেওয়া হবে। ৪১তম বিসিএসে পররাষ্ট্রে ২৫ জন, আনসারে ২৩, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী মহা হিসাবরক্ষক (নিরীক্ষা ও হিসাব) ২৫, সহকারী কর কমিশনার (কর) ৬০, সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) ২৩ ও সহকারী নিবন্ধক হিসেবে ৮ জন নেওয়া হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১২ জন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ৪, সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট ১, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ১, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০, সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হিসেবে ৩ জনকে নেওয়া হবে।
এ ছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক বা তথ্য কর্মকর্তা বা গবেষণা কর্মকর্তা ২২ জন, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) ১১, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক ৫, সহকারী বেতার প্রকৌশলী ৯, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে সহকারী প্রকৌশলী ৩৬, সহকারী বন সংরক্ষক ২০ জন নেওয়া হবে। ৪১তম বিসিএসে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল পদে ২ জন, বিসিএস মৎস্যে ১৫, পশুসম্পদে ৭৬, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৩, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৬ ও বিসিএস বাণিজ্যে সহকারী নিয়ন্ত্রক ৪ জন নেওয়া হবে।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৪ জন, বিসিএস খাদ্যে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৬ ও সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী ২ জন, বিসিএস গণপূর্তে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৩৬ ও সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) হিসেবে ১৫ জন কর্মকর্তাকে এই বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া হবে।
৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখছে দ্বিতীয় পরীক্ষক
পিএসসি সূত্র বলেছে, ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ করেছে প্রথম পরীক্ষক। সেই খাতা এখন দ্বিতীয় পরীক্ষক দেখছেন। সেটিও শেষ পর্যায়ে। মার্চের মধ্যে এই খাতা দেখার কার্যক্রম শেষ করতে চায় পিএসসি।
জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা প্রথম আলোকে জানায়, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ করতে চায় পিএসসি। এ ছাড়া এপ্রিলের দিকে ভাইভার কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা আছে প্রতিষ্ঠানটির।
গত বছরের জুলাই মাসে লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে পিএসসি। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের ২০ জানুয়ারি ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থী।
৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫, শিক্ষা ক্যাডারে ৮৪৩, অডিটে ৩৫, তথ্যে ২২, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪ ও সমবায়ে ১৯ জন নিয়োগ দেওয়া হবে।
৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখা শুরু হয়েছে
৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় জানুয়ারি মাসে। এই পরীক্ষার খাতা এখন প্রথম পরীক্ষক দেখছেন। পিএসসি সূত্র জানায়, এই লিখিত পরীক্ষার খাতা সময়মতো শেষ করতে চায় পিএসসি। আর খাতা দেখায় যাতে পরীক্ষক দেরি না করেন সে জন্য পরীক্ষকদের খাতা সঠিক সময়ে জমা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো পরীক্ষক সময় মতো খাতা জমা না দেন তাহলে তাঁকে পরবর্তী সময় আর খাতা দেওয়া হবে না বলেও জানায় পিএসসির ওই সূত্র।
চলতি বছর ৪৪তম বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করার কথা জানিয়ে পিএসসির একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, ৪৪তম বিসিএস অনেকটাই গুছিয়ে আনা হয়েছে। ৪৩তম বিসিএসের পাশাপাশি এই বিসিএসের ভাইভা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে পিএসসির। এ বছরই এই বিসিএস শেষ করার কার্যক্রম হাতে নিয়ে এগোচ্ছে পিএসসি।
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৪তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন শুরু হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। পরে তা বাড়িয়ে ২ মার্চ নির্ধারণ করে পিএসসি। এরপর গত ২৭ মে মাসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ জন প্রার্থী পাস করেন।
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।